ইস্তাম্বুলে এক ইমোশনাল দিন

ইস্তাম্বুলে এক ইমোশনাল দিন

আব্দুল কাদির সালেহ

আজ ছিলো শুক্রবার । ইস্কানবুলে আমার এক ইমোশনাল দিন।
ব্লাক সীর তীর ঘেষে আমাদের হোটেল । 
ছোট কিন্তু ছিমছাম ।
হোটেলের টপ ফ্লোরের পর্টিকোতে  সকালের নাস্তা ।

হোটেল থেকে নেমে ব্লাক সীর তীর ঘেষে পায়ে হেঁটে একটু ঘোর পথে গেলাম আয়া।সোফিয়ায় ।একদম ভেতরে ইমাম বরাবর জায়নামাজ পেতে নির্দেশিত দূরত্বে বসলাম। 

টার্কিশ ট্রাডিসনে চলছে নিরবচ্ছিন্ন মনমাতানো তিলাওয়াত । আহা কী সূর ! কী ব্যন্জনা ! তাঁর পর  মনের ভেতর ভেসে উঠলো আল্লাহর অপার অনুগ্রহের কথা । ভারতে বাবরী মসজিদ ভেঙে মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হলো ।এদিকে সেক্যুলার কামালের যাদুঘরে রুপান্তর করা মসজিদটি ৮৬ বৎসর পর আবার মসজিদ রূপে যাত্রা শুরু করলো । 

আজান , বয়ান , খুৎবা সবই ছিল অনবদ্য। এ ভাবনা মনের মধ্যে এক অন্যরকম ভাবালুতা তৈরী করলো । ছেড়ে আসতে মন চায়না। তবুও এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসলাম । 
আয়া সোফিয়ার অপর পাড়ে রয়েছে রোমান ক্যাথলিকদের হাজারাধিক বছর কালের পুরাতন গির্জা ।এটি এখন পড়ে গেছে মাটির নিচে । নাম Vacilica । এটি এখন মিউজিয়াম ।ভূ গর্ভস্থ vacilica ত প্রবেশ করে ভাবালুতার আরেক জগতে প্রবেশ করলাম । প্রায় শতাধিক বিশাল উঁচু ও বেড় এর রোমান খিলান গুলো দাড়িয়ে আছে ভূ গর্ভস্থ অন্ধকারের মধ্যে মিটি মিটি আলোর মধ্যে । নোটিশ টাঙ্গানো রয়েছে , সাবধান পিচ্ছিল ফ্লোর । প্রতিটি খিলান বেয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে অবিরাম । 
এ পানি নিচে পাতলা এক সরোবর তৈরী করে রেখেছে । কলাম চুইয়ে পানি পড়ার কারন জানিয়ে নোটিশ রয়েছে — খিলান গুলো নাকি কাঁদছে !গতর চুইয়ে পড়া পানির ধারা তাদেরই কান্নার অশ্রু ।মনে পড়লো কুরআনের আয়াতের কথা ।পাথর আল্লাহর ভয়ে কাঁদে । এবং তার থেকে প্রবাহিত হয় ঝর্না ধারা । হয়তো পাথর গুলোকে ভূল জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে । তাই তাদের কান্না । vacilisa র পুরো ইতিহাস ও বৈশিষ্ঠ সম্পর্কে আরো জানলে বুঝতে পারা যাবে এর গুড়ার্থ ও প্রকৃত রহস্য ।
তাঁর পর গেলাম অটোমান প্যালেসে । সরকারী নাম তপকাপী যাদুঘর । যদিও আগে একবার গিয়েছি কিন্তু গ্রুপে থাকায় সেই ভাবে দেখা হয়নি । এতে রক্ষিত আছে রাসুল স: এর পদচ্ছাপ , দন্ত, দাঁড়ি ও চুল মোবারক , ফাতিমা ও হোসাইনের রা: পোষাক সহ অনেক নবী ও সাহাবীগনের ব্যবহৃত নিদর্শন ।সে এক অন্য রকম অনুভূতি । সময় ফুরিয়ে আসে আমরা বের হই না । অবশেষে তাড়া হুড়া করতে গিয়ে যাদুঘরের শপ থেকে ১১৭ লিরা দিয়ে ইস্তানবুল ও যাদুঘরের তথ্যের উপর দুটো বই কিনে বেরিয়ে আসলাম । পরে দেখলাম বই দুটো ইংরেজী মনে করে খরিদ করলেও আসলে ইংরেজী না। যাক এটি আমাদের তাড়া হুড়ার অর্জন ! বিকালে গেলাম ব্লাক সী, মার্মারা , বসফরাস প্রণালী, গোল্ডেন হিরন এ দু ঘন্টার Cruise Journey তে । শেষ করে ঘুরে এসে প্রশান্ত মনে আয়া সোফিয়ায় মাগরিব ও ঈশা আদায় করে রাতের ঐতিহাসিক ব্লু মস্ক এর রাস্তার ওপারে ডিনার শেষে হোটেলে প্রত্যাবর্তন । আজকের দিনটা এ ভাবেই গেলো 
মনের জগতে এক প্রকার হৃষ্ঠতা জন্ম দিয়ে । সমস্যা ছিলো মোবাইলের । মেমোরি ফুল থাকায় গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোন ফটো নিতে পারিনি ।