নুসরাত সুলতানা এর গুচ্ছ কবিতা

নুসরাত সুলতানা এর গুচ্ছ কবিতা

আফসোস 

একদিন তোমারও বুকের বা দিকটাতে প্রচন্ড ব্যাথা করে উঠবে।

শিরায় শিরায় টান পড়বে,

কলজে মোচড় দিয়ে উঠবে

কারো স্পর্শের আকাঙ্ক্ষায়।

ভীষণ কোমল স্বরে বলতে ইচ্ছা করবে--

তুমি বস তো, সারাক্ষণ হন্যে হয়ে ছুটছো!

এক গ্লাস শীতল জল দেই।

ছলে ছূতোয় একটু শরীর ঘেঁষে বসতে ইচ্ছা করবে।

কেউ যখন প্রেয়সীর শাড়ির কুচি ঠিক করে দেবে;

প্রবল আফসোসে মনে মনে উচ্চারণ করবে,

ইশশ কোনদিন তো দেইনি!

ইচ্ছে হবে খুব;

গরম চটপটি কিনে এনে

বিষ্ময়ে চমকে দিতে।

তখন মনে মনে আওড়াবে--

প্রতিটি সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরেই

মৌরিকে সন্ধ্যার নাস্তার জন্য রান্নাঘরে ঢুকতে হত।

কষ্টে কুঁকড়ে যাবে হৃদয় ;

প্রবল অনুতাপে বলবে

কেন একটুও আরাম দেইনি!

সপ্তাহান্তে কোনোদিন ও

 রেস্তোরাঁয় খেতে নিয়ে যাইনি

প্রতি সপ্তাহান্তে খেয়েছি ওর হাতের বিরিয়ানি, খিচুড়ি, পোলাও, গোশত, কত কি!

কেবল সেদিন পাশেরমানুষটি আর 

রক্তমাংসের মানুষ থাকবে না।

মানুষ টি হয়তো তখন স্মৃতির

 প্রশান্ত জলাশয় হয়ে যাবে।

আজ যখন মানুষ টি পাশে,

আজ বড় পানসে লাগে!

আজ মনে হয়,এসবই তো নিয়ম।

বস্তুত মানুষ আফসোস 

আর আকাঙ্ক্ষা ই ভালোবাসে।

নিলাম

বুকের বাম অলিন্দে আছে এক তালাবদ্ধ সুরক্ষিত কোটর,

সেই খানে জমা আছে

যত্নে বোনা মিহি গল্পগুলো, 

তোমার মনে আছে সমুদ্র 

তোমার প্রথম স্পর্শে এক চপলা

কিশোরীর সুশীতল, শান্ত নদী হয়ে যাওয়া!

প্রথম ওষ্ঠযূগল স্পর্শে 

কোথায় যে কি প্রাকৃতিক বিপ্লব ঘটলো

কে জানে!

তারপর নিলামে তুললাম ডাংগুলি খেলা,

সাইকেল চড়া,বন্ধুদের সাথে মারামারি সব!

কত কত রাত জোছনা আমাকে এতটুকুও ভাবায়নি

নদীর তীর আমাকে টানেনি,

আমি থেকেছি তোমার নেশায়।

তোমার স্পর্শ, তোমার গল্প,

তোমার কন্ঠের যাদুতে মোহগ্রস্ত হতাম আমি।

তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য

 পাড়ি জমালে বৃটিশদের দেশে।

প্রথম দুই বছর পর 

তুমি বেওয়ারিশ! 

তার বছর তিনেক পর নিজেই

জানালে বিয়ে করেছো

এক পাকিস্তানি বৃটিশ কন্যাকে!

অতঃপর আমার বাসর হয়েছে 

আমি হয়েছি নারী, মা সব!

শুধু এক কিশোরীর অভিযুক্ত চোখ

নালিশ জানায় কেন তার থেকে

তুলে সেই নিলাম ডাংগুলি, সাইকেল,

বরফপানি!

কি বলি আমি তাঁকে বলতো!

কিশোরী যখন শুধায় এই উত্তর পঞ্চাশের নারী কে;

তাঁকে সর্বশান্ত করে কি পেয়েছি আমি!?

আমি কেবলই পালাতে চাই ওই অভিযুক্ত চোখ জোড়া থেকে!

তোমার কি উত্তর টা জানা আছে সমুদ্র 

কি পেলাম আমি?

এক কিশোরীর সব নিলামে তুলে!

মৎস্য কন্যা

আমি ছিলাম এক মৎস্য কন্যা,

আর তুমি সাম্পান মাঝি।

কোন একদিন তুমি সায়রের বুক চিরে বেয়ে যাচ্ছিলে সাম্পান।

তোমার সুঠাম বাহু,লম্বা চুল, দরাজ গলার গান শুনে

জীবনের তরে মরলাম আমি!

তারপর তোমাকে অনুসরণ করলাম।

পৌছে গেলাম তোমার গাঁয়ে,

প্রতিদিন কত ভাবে বুঝিয়েছি

তোমাকে আমার চাই!

বুঝলে না তুমি!

মানুষেরা বুঝি প্রেম বোঝে না?

ম্রিয়মান আমার চোখের পানি

সইতে পারলেন না বিধাতা।

বললেন কি চাস তুই?

আমি বললাম --

আমাকে সাম্পান মাঝি করে দাও

আর ওকে মৎস কন্যা

জন্মান্তরে আমি সাম্পান মাঝি

তুমি মৎস কন্যা

আজ তীরে বসে থাকো

আমি না দেখে চলে যাই----

এ জন্মে আমি মানুষ যে!