প্রবাসী লেখকদের প্রাণের স্পন্দন সিলেটের পাণ্ডুলিপি প্রকাশন

প্রবাসী লেখকদের প্রাণের স্পন্দন সিলেটের পাণ্ডুলিপি প্রকাশন


নূরজাহান শিল্পী

সিলেটের একটি সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন। এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি এবং উজ্জ্বলতা। সৃজনশীলতার নির্মাণে অত্যন্ত দৃঢ়কল্প পাণ্ডুলিপি প্রকাশন একুশ বছরে পা দিয়েছে। দুই দশক সময় প্রকাশনা জগতে টিকে থাকা একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। পাণ্ডুলিপি প্রকাশন তার সৃজনশীলতা এবং ঐতিহ্য প্রয়াসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মর্যাদা শুধু দেশেও নয়, বরং ক্রমশ প্রবাসেও এর গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্ভরতা লেখকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই প্রবাসী লেখকদের প্রাণের স্পন্দন হচ্ছে সিলেটের পাণ্ডুলিপি প্রকাশন। প্রবাসী লেখকদের সৃজনশীলতার বিকাশে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পাণ্ডুলিপি প্রকাশন মানেই এক ঝাঁক প্রবাসী লেখকদের মিলনমেলা। সাক্ষাৎ অর্থে মিলনমেলা না বলে সম্পর্কের বন্ধনে মিলনমেলা বলাই সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। প্রবাসী লেখকদের মধ্যে ইতোমধ্যে যারা পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, চিন্তা ও চেতনার দিক থেকে তারা সকলেই একই সূত্রে গাঁথা। এই অকৃত্রিম বন্ধন পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের মর্যাদা যেমন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে, তেমনই বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রে এর দায়বদ্ধতায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের গুরু দায়িত্ব বেড়ে গেছে।

পুরো বিশ্ব তখন করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যদিও এখনো করোনামুক্ত হয়নি পুরো পৃথিবী। করোনা মহামারি পুরো বিশ্বব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে। করোনার আক্রমণে জনজীবনে যেমনই স্থবিরতা এসেছে, তেমনই শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, এমনকি কর্পোরেট জগতেও লেগেছিল বিনাশী ধাক্কা। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সরকারি, বেসরকারিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। পাশে ছিল লকডাউনের মতো আধুনিক বৈজ্ঞানিক বন্দিদশা। এরকম সংকটকালে গ্রন্থ প্রকাশ করা যেমন একটি বিলাসিতা এবং অহেতুক কাজ ছাড়া কিছু নয়, তেমনই এর প্রভাবই বা কতটুকু সাহিত্যমোদীদের মনে থাকবে, এরূপ ভাবনাও ছিল বোকামির নামান্তর। তবুও বহুদিনের স্বপ্ন এবং ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে কালবিলম্ব না করে গ্রন্থ প্রকাশের দৃঢ়সংকল্প পোষণ করি। আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী লেখক, প্রকাশক ও সংগঠক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল। তাঁর আগ্রহ, ইচ্ছা এবং পরিকল্পিত পরামর্শ এ ব্যাপারে আমাকে আরো বেশি সাহসী করে তুলে। শেষপর্যন্ত ‘পাণ্ডুলিপি প্রকাশন’ থেকে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কুম্ভ গহনে’ প্রকাশিত হয়। সেটা ছিল একুশে গ্রন্থমেলার প্রাক্কাল। যদিও করোনার কারণে স্বাভাবিক অবস্থায় বাংলাদেশ কিংবা কোনো দেশেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ গ্রন্থ প্রকাশ করার পর থেকে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে অভূতপূর্ব সাড়া পাই, যা আমাকে গভীরভাবে আপ্লুত এবং অনুপ্রাণিত করে।

পাণ্ডুলিপি প্রকাশন স্বতন্ত্র কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে, লেখকদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সম্ভব। কারণ, লেখকমাত্রই সৃজনশীল চিন্তাচেতনার অধিকারী হন। তাঁদের চিন্তাচেতনায় গড়ে ওঠে নানামুখী কল্যাণী চারাগাছ। যা সময়ের ব্যবধানে বিশাল বটবৃক্ষের আকার ধারণ করে। সাহিত্যের বিস্তীর্ণ বিষয় এবং প্রকরণ এটাকে স্বস্থানে বিশেষায়িত করে। একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী লেখকের কলম থেকে উঠে আসে সমাজ-সভ্যতা, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, সমরনীতি, কৃষিসহ নানাবিধ বিষয়। অর্থাৎ, একজন লেখক একটি জাতি নির্মাণের কারিগর। শিক্ষক যদি আদর্শ জাতি গঠনের কারিগর হন, তবে লেখকরা হচ্ছেন সেই শিক্ষক গড়ার কারিগর। কারণ, আজ যিনি শিক্ষক হিসেবে অবতীর্ণ হয়ে জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখছেন, তিনিও সেই লেখকের কলম থেকেই জাতি গঠনের প্রেরণা পান। তাই একজন লেখকের অস্তিত্ব টিকে রাখার অর্থ হচ্ছে জাতির নির্মাণকারীকে বাঁচিয়ে রাখা। আর লেখককে টিকিয়ে রাখতে হলে তাঁকে উৎসাহ প্রদান করতে হয়। এই কাজটিই করে থাকে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন সিলেট। এজন্য ক্রমশ পাণ্ডুলিপি প্রকাশন যেমন দেশের লেখকদের কাছে হয়ে উঠেছে গ্রহণযোগ্য তেমনই প্রবাসেও গড়ে উঠেছে পাণ্ডুলিপির স্বতন্ত্র বলয়। নিরন্তর প্রচেষ্টা এবং কমিটমেন্টে বিশ্বাস ধরে রাখার জন্যই এ অবস্থানটি অর্জন সম্ভব হয়েছে।

পাণ্ডুলিপি প্রকাশন আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যেই সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে ‘কুম্ভ গহনে’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যা আমার জন্য ছিল বড় একটি বড় পাওয়া। এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সিলেট অঞ্চলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ আমার রচিত ‘কুম্ভ গহনে’ কাব্যগ্রন্থের যে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাতে আমি সত্যিই মুগ্ধ এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। সূদুর পশ্চিমা বিশ্বে অবস্থানকল্পে যান্ত্রিকতার ব্যস্ততার ফাঁকে এই আয়োজনটা আমাকে বেশ আপ্লুত করে রেখেছিল অনেকদিন। আর এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সলের বদান্যতার কারণে। প্রবাসে বসে লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে দেখা এই আয়োজন আমাকে নতুন করে প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করে। বিশেষ করে, একজন লেখক হিসেবে সাহিত্যের যে দায়বদ্ধতা, এটা লেখককে তাঁর কাজের মাধ্যমে পূর্ণতায় রূপ দিতে হয়। এই আয়োজন থেকে সেই দায়বদ্ধতাটুকুই আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়। এভাবে আমার মতো আরো অসংখ্য লেখক-লেখিকাকে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে সৃজনশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখছে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন।

‘ঐতিহ্য-সন্ধানে দৃঢ়কল্প’ স্লোগানকে ধারণ করে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন প্রবাসী লেখকদের মনকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সৃজনশীল ‘প্রবন্ধ, বিজ্ঞান বিষয়ক, গবেষণা, স্মৃতিকথা, জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, ভ্রমণকাহিনি, অনুবাদ, উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন, নাটক, রম্য, রহস্য থ্রিলার, ছড়া-কবিতা, গল্প, শিশুতোষ, স্মারক/ম্যাগাজিনসহ বহুমুখী গ্রন্থ প্রকাশ করছে। এছাড়া এ প্রকাশন থেকে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, নাগরীসহ বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের রয়েছে সোনালি ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। এর পেছনে রয়েছে সময়ানুবর্তিতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং কর্মস্পৃহা। সর্বোপরি সৃজনীশলতার বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন মাড়িয়েছে বন্ধুর পথ। দুই দশকের এই দীর্ঘযাত্রা পেরিয়ে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন একুশ বছরে পা দিয়েছে। এই দীর্ঘযাত্রায় পাণ্ডুলিপি প্রকাশন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির গ্রন্থ প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। এই তালিকায় আছেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার এবং আলেম উলামাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে, এই সব ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বেশির ভাগই প্রবাসে অবস্থান করেন। সত্যিই পাণ্ডুলিপি প্রকাশন তার যোগ্যতা, বাস্তবাভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসেও উল্লেখযোগ্য স্থান করে নিয়েছে। প্রবাসে অবস্থানরত এসকল ব্যক্তিবর্গের একেকটি গ্রন্থ সোনালি ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

বিদেশ কিংবা দেশ যেখানেই হোক, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন মানেই জমজমাট আড্ডা এবং আনন্দ। এ আনন্দ ভৌগোলিক সীমা পেরিয়ে মন ও মননে একীভূত হয়ে গেছে। যা প্রথম দৃশ্যত হয়, ২০১৮ ও ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অনুষ্ঠিত বইমেলায়। এ দুটি গ্রন্থমেলায় পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের স্টল ছিল। মেলাচলাকালীন পাণ্ডুলিপি প্রকাশনে ছিল সবচেয়ে ভিড় এবং আড্ডা। প্রবাসের লেখকরা সুযোগ পেলেই এ প্রকাশনার স্টলে এসে ভিড় জমাতেন। এছাড়া সাধারণ পাঠক-পাঠিকা, দর্শক-স্রোতার বেশির ভাগই ছিলেন পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের ভক্ত। এ থেকে অনুমান করা যায়, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন তার স্বকীয়তায় কতটুকু অবস্থান করে নিয়েছে। এছাড়া বইমেলায় পাণ্ডুলিপি প্রকাশন কেন্দ্রিক আড্ডা ছিল সকলের মধ্যে ব্যতিক্রমী ও মনকাড়া আয়োজন। এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রতি লেখক-লেখিকাদের যতটা না আকর্ষণ ছিল, অন্য কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটা পরিলক্ষিত হয়নি। যা পাণ্ডুলিপি প্রকাশনকে ব্যতিক্রমী ধারায় সুশোভিত করেছে। 

যুক্তরাজ্য ছাড়াও পাণ্ডুলিপি প্রকাশন এ পর্যন্ত অসংখ্যবার ভারত্যের আসাম রাজ্যের শিলচরসহ ভারতের অন্যান্য এলাকায় অনুষ্ঠিত বইমেলায়ও অংশগ্রহণ করেছে। উপরন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বইমেলায় অংশগ্রহণ ছিল এ প্রকাশনের জন্য অনন্য পাওয়া। এটা যেমন গর্বের, তেমনি আত্মপ্রত্যয়ের। এ থেকে পাণ্ডুলিপি প্রকাশন সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিকতায় আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এগুলোর মাধ্যমে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের গায়ে যুক্ত হলো একেকটি সোনালি পালক।

পাণ্ডুলিপি প্রকাশন এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে অসংখ্য গ্রন্থের লেখক হচ্ছেন প্রবাসী কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। শুধু তাই নয়, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন প্রতিনিয়তই প্রবাসী লেখকদের গ্রন্থ প্রকাশ করে যাচ্ছে। প্রবাসী লেখকদের দেশকল্যাণের চিন্তা, দেশপ্রেম, সমাজভাবনা, রাষ্ট্রভাবনা, ব্যক্তিভাবনা, সর্বোপরি একটি আদর্শ সমাজ নির্মাণে তাঁদের চিন্তাচেতনার সাথে একাত্ম হওয়ার জন্যই পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের এ প্রয়াসী যাত্রা। এছাড়া পাণ্ডুলিপি প্রকাশন প্রবাসী লেখকদেরকে উদ্বুদ্ধ করণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আমি দীর্ঘদিন থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছি। কলেজে অধ্যয়নকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চায় মনোযোগী হই। এটা একসময় মনের অনুধ্যান হয়ে যায়। অর্থাৎ, সাহিত্যের চর্চা ব্যতীত জীবনকে কল্পনা করতে পারিনা। যুক্তরাজ্যে আসার পর থেকেই নিয়মিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার এমন কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় ঘটে, যারা পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান, কবি, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক গুলশান আরা রুবী, কবি, সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক আহমদ হোসেন হেলালসহ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। প্রবাসে তাদের রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সম্মান। তাঁদের প্রত্যেকেরই পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। যা আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। বর্তমানে আমার সম্পাদনায় একটি ‘গল্পগ্রন্থ’ এবং আমার রচিত একটি উপন্যাস পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আরো অসংখ্য লেখক-লেখিকা আছেন, যাদের গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। কারো কারো নতুন গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশ হওয়ার পথে।
যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের বিরাট সার্কেল। এইসব দেশেও এমন অসংখ্য লেখক আছেন যাদের গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটা পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের বড় অর্জন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের শুভাকাক্সক্ষী ব্যক্তিরা অবস্থান করছেন। এ থেকেই উপলব্ধি করা যায়, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন বহির্বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান সৃষ্টি করে নিয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্যবসায়ী ও মোটিভেশনাল স্পিকার রে ক্রক বলেছেন, As long as you’re green, you’re growing. As soon as you’re ripe, you start to rot. ‘অর্থাৎ, যতদিন তুমি সবুজ থাকবে ততদিন তুমি বাড়তে থাকবে। পেকে যাওয়া মানেই পচতে শুরু করা।’ পাণ্ডুলিপি প্রকাশন তার সৃজনশীল এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চিরসবুজ থাকতে চায়। চিরসবুজ থাকার অর্থই হচ্ছে একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। অপরদিকে, অনৈতিকতা এবং মূল্যবোধহীনতার সুযোগে সমাজব্যবস্থা যখন পচতে শুরু করে, তখনই প্রয়োজন হয় মূল্যবোধসম্পন্ন সাহিত্যচিন্তার। এই সাহিত্যচিন্তা বা দর্শন মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে প্রত্যাবর্তন করায়। পাণ্ডুলিপি প্রকাশন তার চিন্তাচেতনা, দর্শন এবং কর্মপদ্ধতির আলোকে সৃজনশীল সাহিত্য প্রকাশে আরো বেশি কর্মঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চায়। এজন্য প্রবাসে অবস্থানরত লেখকদের পরামর্শ এবং আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে। বিশেষ করে, একটি আদর্শিক সমাজ যাতে পেকে গিয়ে পচতে শুরু না করে, সে জন্য প্রবাসী লেখকদেরকে একই প্লাটফর্মে এনে পচা থেকে রোধ করতে চায়।

পাণ্ডুলিপি প্রকাশন ও প্রবাসী লেখক একই সুতোয় গাঁথা। এই সুতোকে টেনে ছিঁড়তে চায় না এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। খুঁড়িয়ে খুঁটিয়ে সমাজে চলা নয়, বরং সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি মানবিক সমাজ নির্মাণ পাণ্ডুলিপির সাহিত্যপ্রকাশের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে প্রবাসী লেখকরাও দূরে নয় বলেই তাঁরা পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের আত্মার আত্মীয় ও স্বজন। আমি পাণ্ডুলিপি প্রকাশনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও সাফল্য কামনা করি।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক।