বাংলাদেশের ক্রিকেটকে শক্তিশালী করতে চান ডেভিড হেম্প

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

জাতীয় দলের পাইপ লাইন সমৃদ্ধ করার জন্য খেলোয়াড় সরবরাহ যাতে মানসম্পন্ন হয়, তার প্ল্যাটফর্ম হলো এইচপি বা হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্প। জাতীয় দল ও এর আশপাশে থাকা ২৫ ক্রিকেটারকে নিয়ে বুধবার (২৪ মে) থেকে শুরু হয়েছে এবারের ক্যাম্প। এই ক্যাম্প হবে তিন ভাগে। ২৪ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে ফিজিক্যাল ট্রেনিং। ১ থেকে ৮ জুন রাজশাহীতে হবে স্কিল ট্রেনিং। এরপর শেষ ধাপ অনুষ্ঠিত হবে বগুড়ায় ৯ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত। এবারের ক্যাম্পে দেখাশোনা করার জন্য কোচ হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে বারমুডায় জন্মগ্রহণ করা ইংল্যান্ডের কাউন্টি খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডেভিড হেম্পকে।

ডেভিড হেম্প বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার। তার জন্ম ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বারমুডার হ্যামিল্টনে। তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লামারগন ও ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে খেলেছেন। ১৯৯১ সালে যোগ দেন গ্লামারগনে। ওয়ারউইকশায়ারে খেলা শুরু করেন ১৯৯৭ সালে। এরপর আবার গ্লামারগনে ফিরে আসেন ২০০২ সালে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে কখনো খেলার সুযোগ না পেলেও ‘এ’ দলের হয়ে ১৯৯৪-৯৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।

ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ দেখে তিনি ফিরে যান নিজ দেশে বারমুডায়। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে একদিনের ও ২০০৮ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। ২২টি একদিনের ম্যাচ খেলে তিনি রান করেন ৬৪১। ২০০৯ সালে পচেফস্ট্রুমে কেনিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১০২ রানের একটি ইনিংসও আছে তার। হাফ সেঞ্চুরি ছিল ৪টি। বল হাতে উইকেট ছিল ১টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ম্যাচ খেলে মাত্র ২টি। রান করেছিলেন ২০। এটিই ছিল তার সর্বোচ্চ রান। এই ২ ম্যাচে তিনি কোনো বোলিং করেননি।

২০০৭ সালে তিনি বারমুডার হয়ে উইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটও খেলেছেন। বারমুডা ছিল বাংলাদেশের গ্রুপে। দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১৪ রান করার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে কোনো রান করতে পারেননি।

৫২ বছর বয়সী ডেবিড হেম্প প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন ২৭১টি ম্যাচ। ৪৬২ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছিলেন ১৫ হাজার ৫২০। ৩০টি সেঞ্চুরি আর ৮৬টি হাফ সেঞ্চুরি এসেছিল তার ব্যাট থেকে। সর্বোচ্চ রান ছিল অপরাজিত ২৪৭। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৩০৯ ম্যাচের ২৭৮ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছিলেন ৬ হাজার ৮৪৪। ৮টি সেঞ্চুরি আর ৩৪টি হাফ সেঞ্চুরির মাঝে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল অপরাজিত ১৭০। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন ৬৩টি। রান করেছিলেন ১ হাজার ৩৬৭। ৭৪ রানের ইনিংস ছিল তার সর্বোচ্চ। ২০১৩ সালে তিনি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এরপর জড়িত হন কোচিংয়ে।

এইচপি দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে হেম্প পাকিস্তান নারী দলের প্রধান কোচের হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এইচপি ক্যাম্পে তিনি প্রধান কোচের পাশাপাশি ব্যাটিং কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করবেন। তাকে সহায়তা করার জন্য বোালিং কোচ হিসেবে ডলার মাহমুদ, ফিল্ডিং ও উইকেটকিপিং কোচ হিসেবে গোলাম মোর্তজা দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় দলের সাবেক কম্পিউটার অ্যানালাইসিস্ট নাসির আহমেদ নাসুও থাকবেন এই কাজে। এ ছাড়া তুষার কান্তি হাওলাদার ট্রেনার, খাদেমুল ইসলাম শাওন ফিজিও কো-অর্ডিনেটর, খায়রুল ইসলাম ফিজিও। মনোবিদ হিসেবে থাকছেন ডেভিড স্কট।

মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ এসে বুধবার সকালেই ডেভিড হেম্প নেমে পড়েন কাজে। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আসার পর তিনি এইচপি ইউনিটের প্রধান বিসিবি পরিচালক নাঈমর রহমান দূর্জয়ের (এমপি) সঙ্গে মিটিং করেন। পরে পরিচিত হন খেলোয়াড়দের সঙ্গে। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার সুমন।

প্রথম দিনের কোচিং শেষে গণমাধ্যমে কথা বলতে এসে ডেভিড হেম্প বলেন, ‘আমরা এখানে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিচ্ছি, যেখানে খেলোয়াড়রা শিখতে শিখতে যাবে পরের ধাপে। যাতে তারা একটা পর্যায়ে গিয়ে জাতীয় দলে ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা তাদের সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখতে চাই। বাড়াতে চাই গভীরতা।’

ডেবিড হেম্প চান খেলোয়াড়দের এমনভাবে গড়ে তুলতে, যাতে করে তারা বিশ্বের সব কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিযে নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রিকেটারদের এমনভাবে প্রস্তুত করব, যাতে করে তারা বিশ্বের যেকোনো কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। খেলতে পারে।’

তিনি চান জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চাহিদা মাফিক খেলোয়াড় তৈরি করতে। হেম্প বলেন, ‘আমরা দেখব জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা কী রকম খেলোয়াড় চাচ্ছেন, স্কিলের কমতি আছে কি না। এজন্য তাদের এই ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে।’

ডেবিড হেম্প ২৫ জনের খেলোয়াড় পেয়েছেন সব ধরনের। এখানে যেমন তরুণ ক্রিকেটার আছে, তেমনি জাতীয় দলে খেলা খেলোয়াড়ও আছে। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক সমন্বয় করতে হবে। এই দলের অনেকে জাতীয় দলে খেলে কিংবা খেলেছে। ৮-৯ জন খেলছে ‘এ’ দলে। এখানে মূল পার্থক্য হচ্ছে বয়সের। আমরা পেয়েছি তরুণ গ্রুপটাকে। আশা করি তাদের দ্রুত উপরের দিকে নিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘যদি সম্ভব হয় তাহলে যেন আমি জাতীয় দলে তরুণ ক্রিকেটারদের দিতে পারি। কিংবা নির্বাচকরা যাতে করে তাদের দিকে দৃষ্টি দিতে পারেন, সে রকম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।’

বাংলাদেশে আসার আগে ডেভিড হেম্প চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েকমাস আগে। সিডন্সের সঙ্গে তার কথা হয়নি এখনো। শিগগির তার সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে জানান। হেম্প চান তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই বাংলাদেশকে র‌্যাঙ্কিংয়ের উপরের দিকে নিয়ে যেতে। একই সঙ্গে তার ইচ্ছে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটারকে দেখতে।