ভারসাম্যহীন ও বৈষম্যমূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায়__

ভারসাম্যহীন ও বৈষম্যমূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায়__

উম্মে হাবিবা আফরোজা

--প্রচলিত প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান রয়েছে অসম শিক্ষা নীতি।ভারসাম্যহীন এই শিক্ষানীতি কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশর যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তেমনি বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের হারও।দেশে বর্তমানে ৯৮%শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেলেও কমছে মানসম্মত শিক্ষার হার।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৮% শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করতে পারলেও ভালো মত  বাংলা রিডিং অব্দি পড়তে অক্ষম।কয়েকটি নামকরা সরকারি স্কুল ব্যতিত, যেখানে হত দরিদ্র ঘরের সন্তানরা ভর্তি হয় এসব স্কুল প্রতিষ্ঠানে কেবল নামমাত্র পরিক্ষা দিয়ে বছরের পর বছর নতুন শ্রেণিতে উঠার সুযোগ ঘটলেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা থেকে।অনেকে বাংলা বর্ণমালাও সঠিকভাবে চিনতে পড়তে পারে না। অপরদিকে বেসরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠানে তথা কিন্ডারগার্টেন ভুক্ত স্কুল পর্যায়ে কোমলমতি শিশুদের বয়স ও ওজনের চেয়েও মাত্রাতিরিক্ত পড়ার চাপে তারা হারাতে বসেছে তাদের প্রিয় শৈশব ও অত্যাধিক পড়ার চাপে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে দিন দিন।স্কুল গুলোতে মাসের পর মাস পরিক্ষার চাপ তো আছেই, সাথে আছে বাসায় প্রাইভেট টিচারদের চাপও। তুলনামূলক ভাবে আর্থিকভাবে সচ্ছল ঘরের সন্তানদের এসব বেসরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তি হতে দেখা যায়।

এই থেকে আমরা একটা বিষয়ে প্রতীয়মান হতে পারি যে, সমবয়সী, একই শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেও সরকারি ও বেসরকারি নীতি নির্ধারকের নিয়মের চক্রে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটা ভারসাম্যহীন ও বৈষম্যমূলক নীতি বিরাজ করছে।

এই নীতিতে পড়ে এক দল শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাচ্ছে এবং অন্য এক শ্রেণির শিক্ষার্থী এগিয়ে থাকলেও তাদের ভোগাতে হচ্ছে মানসিক হতাশায়।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ছাড়াও সরকারি বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পরিমানে শিক্ষক/শিক্ষিকার স্বল্পতা জনিত সমস্যাও আজ শিক্ষা ব্যাবস্থায় বিরুপ প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
এত অধিক সংখ্যক ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে দেখা যায় মাত্র ৪/৫জন শিক্ষক দ্বারা পাঠ কার্য সম্পন্ন করা হচ্ছে।এতে করে সরকারি স্কুল গুলোতে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা যত্ন করে পাঠ দান অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। আবার ঐ শিক্ষকদের দ্বারা বিভিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিয়োজিত করা হয় সরকারি উদ্যোগে যেমনঃ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট সংগ্রহের কাজে, জরিপ সংবলিত কাজে এমন কী গ্রামে স্যানিটারি বাথরুম প্রতিস্থাপনেও তাদের অংশগ্রহন দেখা যায়।

মৌলিক অধিকার "শিক্ষা' যদি সবার সমান ভোগ করার অধিকার হয়ে থাকে তবে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কেন এত দ্বিধা বিভক্ত!?

নীতি নির্ধারকের বলিষ্ঠ পদক্ষেপেই পারে এই ভারসাম্যহীন ও বৈষম্যমূলক প্রাথমিক শিক্ষা নীতির ভিত্তিকে মজবুত করে সকলের জন্য গ্রহনযোগ্য ও কল্যাণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতকরন করতে।

এই অসম নীতি দূরীকরনে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ পর্যায়ে পাঠদান যদি একই নিয়ম ও বিষয়ের আলোকে করা হয় তবে তা ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং বৈষম্য দূর হবে।

বিশেষভাবে সরকারি পর্যায়ে শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষকদের কেবল শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত রেখে পাঠদানে অধিক আগ্রহী করা আবশ্যক।এছাড়াও নতুন শ্রেণিতে প্রমোশনের ক্ষেত্রে পাশ করা বাধ্যতামূলক করে মেধা বিকাশে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করা উচিত।এতে শিক্ষার মান নিশ্চিত সম্ভবপর হবে।

শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই হোক পরিপূর্ণ মেধা বিকাশ ও উন্নত জাতি গঠন। প্রতিটি শিশুই বেড়ে উঠুক আপন প্রাণ শক্তিতে।

কল্যানমুখী ও আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রনয়নে নীতিনির্ধারক কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।