মিছিলের ছবি (ছোট গল্প )

মিছিলের ছবি (ছোট গল্প )


   শাহারা খান 
     
               ফেব্রুয়ারি মাস।বসন্তের আগমনে শীতের রেশ কিছুটা কমেছে।সকালের মিষ্টি রোদে বসে নীলু ছবি আঁকছিল।এক সপ্তাহ পর ২১শে ফেব্রয়ারী।স্কুলে শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হবে।নীলু অংশগ্রহন করতে চাচ্ছে।চেষ্টা করে ছবিটা সুন্দর না হওয়ায়,নীলু খুব বিরক্ত হচ্ছিলো।দাদু কাছে আসতেই অভিমানের সুরে বললো,দেখোতো দাদু সেই কখন থেকে চেষ্টা করছি,ছবিটা সুন্দর হচ্ছেনা।দাদু মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,হচ্ছে তো,অনেক সুন্দর হচ্ছে।তুমি কি আঁকতে চাচ্ছো?নীলু বললো,আমি মিছিলের ছবি আঁকতে চাই।দাদু বললেন এত ছবি থাকতে তুমি মিছিলের ছবি আঁকবে?একথা বলে দাদু কেমন যেন উদাসীন হয়ে গেলেন,চোখের কোণে পানি জমে গেলো।নীলু বললো দাদু তুমি তো একুশ দেখেছো,মিছিল দেখেছো।আমাকে সেই গল্প বলো।নীলুর কথায় দাদু বললেন,হ্যাঁ দাদু আমি দেখেছি সেই রক্তে রাঙা একুশ।আমি দেখেছি আগুন ঝরা সেই দিন।দেখেছি মিছিলে উত্তপ্ত রাজপথ।রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে সেদিনের মিছিলে যে আমিও ছিলাম।শত্রু বাহিনীর গুলীর আঘাতে,বন্ধুদের সাথে হয়তো আমিও সেদিন না ফেরার দেশে চলে যেতে পারতাম।গেলে মনে হয় শহীদের কাতারে আমার নামও লেখা থাকতো।ভাষার জন্যে সেদিন ওরা জীবন দিয়েছিলো বলেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলতে পারছি।ওরা যে মরেও অমর।দাদুর কথায় যেন ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল।নীলু দাদুর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,দাদু তুমি হাজার বছর বেঁচে থেকো।তোমার জন্যে গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছে।আমি একজন ভাষা সৈনিকের নাতনী।প্রতিযোগিতায় বিজয়ী না হলেও,তাতেই আমি খুশি,তাতেই আমি পুরস্কৃত।তারপর অনেক যতনে ছবির পোষ্টারটি ব্যাগে ভরে জমা দেয়ার জন্য নীলু স্কুলের পথে রওয়ানা দিলো।