আগামী সংসদ নির্বাচনও নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনও নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হবে। কাতারভিক্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে, পশ্চিমা গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় কোথায় ছিলো জাতিসংঘ আর পশ্চিমাদের মানবাধিকার?

তিনি বলেন, আমি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।

বছরের শেষে আবারো নির্বাচন আসছে। সেই নির্বাচিন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, অবশ্যই। আমি শতভাগ নিশ্চিত করছি। গত দুটি নির্বাচনে তারা নানা অভিযোগ এনেছে, কিন্তু কোনোটাই প্রমাণ করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, দেশে স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে এবং ভোটাররা আমার দলকে ভোট দিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কেন? কারণ তাদের নেতারা দুর্নীতি ও অস্ত্রমামলা, গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ছিল।

সাক্ষাৎকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ আনে, প্রথমেই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে তারা কারা? তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এখন যেসব দল আবার সেই তত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছে, আসলে তারাই এই ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছিল।

অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে কারা ছিলেন- এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো; তারা শুধু মানবাধিকার লঙঘনই করেনি, তারা মানুষকে হত্যা করেছে, আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। সে সময় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমাদের দেশের নাম পাঁচবার এসেছে। অন্য অনেকের মতো আমিও ভুক্তভোগী হয়েছি।

বিএনপির আগ্রাসী রাজনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা আমাকে একাধিকবার হত্যা করার চেষ্টা করেছে। প্রকাশ্য দিবালকে (২১ আগস্ট) তারা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আমার দলের ২২ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি এ নিয়ে কোনো তদন্ত, এর কোনো বিচার পর্যন্ত হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু তাই নয়, তাদের (বিএনপি) দুর্নীতির বিষয় দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রমাণিত হয়েছে। এরপর তাদের সন্ত্রাসবাদ। দেশের পাঁচ শতাধিক স্থানে এক ঘণ্টার মধ্যে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বাংলাদেশকে তারা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের অপকর্মের জন্য তখন জরুরি অবস্থাও জারি হয়েছিল। আমি দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি, আমি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।

সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। যখন ঘটনার সূত্রপাত্র হয় তখন অনেক রোহিঙ্গা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। তাই আমরা সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আসতে দেই।

তিনি আরও বলেন, মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। একইসঙ্গে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। তাদের বলি, রোহিঙ্গারা তোমাদের দেশের নাগরিক, তাদের ফিরিয়ে নেয়া উচিত। তবে, দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। আমি মনে করি, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।

রোহিঙ্গাদের ভালো ব্যবস্থাপনায় রাখতে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা তাদের জন্য ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি খুব ভালো না। তারা এখন নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়াচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

দেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমরা গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখেছি। যার কারণে দেশে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। আমাদের জিডিপি বাড়ছে। আমার বাবা বেঁচে নেই। কিন্তু আমি তার আদর্শ অনুসরণ করি। আমি চেষ্টা করি, তিনি যেভাবে দেশের চেয়েছিলেন সেভাবেই দেশের মানুষের সেবা করতে। এ কারণেই ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের চেহারা অনেকটাই পাল্টে গেছে। আমি বলব, আমার পিতার দোয়ার কারণেই আমি দেশের জন্য কাজ করতে পেরেছি।