আমি মানুষ হবো
আব্দুছ ছালাম চৌধুরী
আমি মানুষ হবো/আমি মানুষ হবো,
বহিঃবিশ্বে নিজের দেশের মান সম্মান,কখনো ক্ষুন্ন হতে নাহি দেবো--
আমি মানুষ হবো/আমি মানুষ হবো।
আমরা দলাদলি করি /আমরাই করি গলাগলি,
আমরা দেই হুংকার—
আমরা কুশপুত্তলিকা দাহ্যে, আমরা আমাদের সোনার বাংলা'কেই করি পদধূলি।
আমি দেখেছি হিথ্রো এয়ারপোর্টে
আমি দেখেছি জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে
আমি দেখেছি টাইম স্কয়ারে
আমি দেখেছি রাসেল স্কয়ার কিং ক্রস থেকে ইস্ট লন্ডনের যাত্রা পথে,
এ দল থেকে বি-দলের আগমনে, সরব আমরা সবখানে —
আমি দেখেছি মিছিলে মিছিলে কালো পতাকা আর ধিক্কারের গুঞ্জন,
আমি দেখেছি হাতাহাতি থেকে ডিম নিক্ষেপ
আমি দেখেছি ব্যঙ্গচিত্রের অংকন,
গান গেয়ে নিত্য করা মানুষের ভ্রুক্ষেপন।
এই কী আমাদের রাজনীতি /এই কী আমাদের শিষ্টাচার,
যেখানে-সেখানে যেমন খুশি,তেমনই দেই হুংকার।
আমি আটষট্টি কিংবা উনসত্তর, সত্তর এবং একাত্তরের দিকে ফিরে তাকাই,
কি ছিলো মোদের অঙ্গীকার?
কোথায় আমাদের সম-অধিকার?
কোথায় আমাদের ভ্রাতৃত্ব বোধ—
কোথায় আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষতা?
কোথায় আমাদের সম-বণ্টন সামাজিক ব্যবস্থাপনা?
কোথায় সেই হিন্দু-মুসলিম,একই গ্রামে জারি সারি আর কীর্তন।
আমরা স্থান-কাল-পাত্রভেদে কোথায় চলে যাচ্ছি?
কোথায় চলে যাচ্ছে আমাদের রাজনীতি?
পাড়া-মহল্লা থেকে প্রায় সবখানেই অতিথি আপ্যায়ন হয় দলে দলে,
বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে ছড়ানো হয় কলুষিত বার্তা
এ কোন্ জগতে আমরা করি বাস—
----- অপমান ঘৃণা প্রতিটি পলে পলে।
আমরা এ দল—বি দল কে চোর ডাকাত বলি,
আমাদের দাম্ভিকতা এতোটাই প্রকাশ করি যে—আমরা স্বেচ্ছায় সাম্যের পথ যাই ভুলি।
আমরা স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাস করিনা—কিন্তু সুযোগে স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করি,
আমরা গণতন্ত্রকে মানতে পারিনা—কিন্তু ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র বলে আঁকড়ে ধরি।
আমরা ঠোঁট ঝেড়ে বলি গণতন্ত্র এসেছে—
বারবার বলি মানুষের মুক্তির পথ এসেছে —
এসেছে অবাধ নিরপেক্ষ সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা।
সত্যিই কি তাই এসেছে?
সত্যিই কি মুক্তি পেয়েছে অর্থনীতি?
সত্যিই কি মুক্তি পেয়েছে বাক স্বাধীনতা?
সত্যিই কি মুক্তি পেয়েছে গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ?
--------উত্তর হবে---- না না না এবং না।
আমরা নির্বাচন এলে নির্বাচন বর্জন করি।
আমরা বর্জন করি সংসদ অধিবেশন।
আমরা ভোট দিতে ভোটারের অধিকার লঙ্ঘন করি,
আমরা চোরকে বলে চুরি কর্,আর গৃহস্থ'কে বলি—যদি হয়ে যায় চুরি।
আমার প্রতিজ্ঞা করি সকল মানুষকে সমান চোখে দেখবার,
সেই আমরাই ভুলে যাই,চোখে চশমা লাগিয়ে বলি- কি হয়েছে এমন যে, সহিংসতা আছে ঠেকাবার।
আমরা নিত্যদিনের, নিত্যপ্রয়োজনীয় আলু পিঁয়াজ নিয়ে করি হাতাহাতি,
আমরা আর্মি বিডিয়ার নামিয়ে, দাপটের সহিত করি মাতামাতি।
আমরাই হুঙ্কার দেই- সংসদ ভবন ভেঙ্গে দাও— বঙ্গবভন ভেঙ্গে দাও—
জ্বালিয়ে দাও —পুড়িয়ে দাও—বাস ট্রেন থেকে ঐ রোগী বহনকারী এম্বুলেন্স—
আমরাই আমাদের সন্তানের বুকে চালাই গুলি,
আমরাই নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার বলে—মুসলমান মুসলমানদেরই- উড়াই মাথার খুলি।
আমরাই স্বদেশপ্রেমে,বিদেশীদের দাসত্ব কবুল করি,
আমরা ভন্ডুল করি জনসভা—
ভন্ডুল করি সেমিনার—
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া লাঠিপেটা করি পথসভায়
আমরাই —পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে রাস্তায় দেই চিৎকার।
আমরা আবার স্বচ্ছতা ফিরাতে—স্বদেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে দিনরাত পরিশ্রম করি,
আমরাই আবার যখনই লাশ হই—তখন পাই অবহেলা—
অবজ্ঞা—
আমাদেরই বিমানে সেই লাশের সিট হয় না/মা বাবা আর স্বজনের কতো না আহাজারি।
আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো উদার হতে পারি না/ তাজউদ্দীনের মতো সহনশীল হতে পারি না/
কামরুজ্জামানের মতো স্থির চিন্তনে হাল ধরতে পারি না
ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর মতো প্রজ্ঞাবান হতে পারি না—
তাহলে, আমরা কি পারি!
স্বদেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে আমার দেশের নেতা নেত্রীর উপর থুতু নিক্ষেপ করতে পারি—
পারি, ছেঁড়া জুতা ছুঁড়তে—
পারি, ইটপাটকেল ছুঁড়তে—
আহ্হা! আফসোস
তাহলে আমরা কি কখনো প্রকৃত গুণের অধিকারী হতে পারবো না?
হবো না আজ্ঞাবান—
হবো না নিষ্ঠাবান—
আমরা কি কেবলই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে যাবো?
না না না —
এ যুগের ছেলে মেয়েরা আর তা হতে চায় না
চায় ইন্জিনিয়ার হতে,
চায় ডাক্তার হতে,
সফটওয়্যার ম্যনেজমেন্ট করতে
মাস্টার ডিগ্রি, পি এইচ ডি করতে —
চায় বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সম্মুখ পানে থেকে কাজ করতে।
আধুনিকতার ছোঁয়া ছড়িয়ে দিয়ে—সোনার বাংলা গড়তে—
আমি তাদের মতো হবো/আমি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ফুটবো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া—
আমি মানুষ হবো/আমি মানুষ হবো।