আমার প্রিয় শিক্ষক

আমার প্রিয় শিক্ষক

শাহারা খান 

        শিক্ষক জাতি গড়ার কারিগর।শিক্ষাদান কাজে যারা নিয়োজিত,তারা সকলের শ্রদ্ধাভাজন।আমাদের প্রথম শিক্ষক হলেন মা বাবা।বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আজকের দিনে মা বাবা সহ পৃথিবীর সকল শিক্ষকদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

      আমার প্রিয় শিক্ষক নিয়ে আজ কিছু আলোচনা করতে চাই।তিনি হলেন আমাদের গ্রামের এক প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক।যাকে আমি দেখেছি খুব কাছে থেকে।একজন সৎ ,

নিষ্টাবান,দায়িত্বশীল,নিরলস কর্মী হিসেবে যিনি আমার অন্তরে আজীবন ঠাঁই করে নিয়েছেন।ছাত্রী অবস্হায়,এমনকি নিজের শিক্ষকতা জীবনে যেখানে দেখেছি প্রধান শিক্ষক

ক্লাস না নিয়ে,অফিস রুমের কাজ নিয়ে বেশির ভাগ নিয়োজিত থাকতে,সেখানে দেখেছি স্যার কে অফিসিয়েল সব কাজের ফাঁকে নিয়মিত ক্লাস নিতে।স্যার শাসন ক্ষেত্রে যেমন কঠোর ছিলেন,তেমনি ছিলেন অতি অমায়িক হাস্যজ্বল একজন ব্যক্তি।ক্লাসরুমে এত আন্তরিক ভাবে রসাত্নক করে পাঠদান করতেন,যার দরুন উনার ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীরা থাকতো প্রানবন্ত।ছোটবেলায় স্কুল পালানো কিংবা স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরা,এই অভ্যাস আমার মতো কার ছিল জানি না।আমার আজও মনে আছে ছুটি চাইতে গিয়ে স্যারের যে ধমক খেয়েছি।এর পর থেকে ছুটি চাওয়ার নাম ভুলে গেছি।অথচ অন্য কোন স্যারের কাছে ছুটি চাইতেই ছুটি দিয়ে দিতেন।তখন ভাবতাম আহারে এই স্যারেরা এত ভাল।এখন উপলব্ধি করতে পারছি,ছুটি না দিয়ে হেডস্যারই আমার ভাল করেছেন।স্কুলের প্রতি স্যার খুব দায়িত্বশীল ছিলেন।অফিসিয়েল কোন কাজে স্যার কখনো হয়তো উপজেলায় গেছেন।এসে খবর নিতেন স্কুল কখন ছুটি হয়েছে?স্কুলের দরজা জানালা সঠিক মত বন্ধ করা হয়েছে কিনা।উপজেলায় যাওয়ার আগেও আশেপাশের অনেককে বলে যেতেন,স্কুলের দিকে যেন নজর রাখেন।স্কুল ছিলো স্যারের কাছে আপন পরিবারের মতো।

       স্যার আর্থিক দিক দিয়ে তেমন স্বচ্ছল ছিলেন না।তারপরে আজো মনে আছে স্যারের স্কুলের একটি মেয়ে কুটির শিল্প প্রতিযোগিতায় তৎকালিন চট্টগ্রাম বিভাগে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছিল।স্যার নিজের খরচে মেয়েটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে যান।কত ছাত্র ছাত্রীকে বিনা টাকায় নিজ বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতেন ।আস্তে আস্তে বয়সের ভারে স্যার অসুস্হ হয়ে পড়েন।অথচ স্যার স্ব ইচ্ছায় পেনশনে যেতে রাজী নন।স্যার চাইতেন,চাকুরী থাকতে থাকতেই যেন তার মরন হয়।এখনও মনে আছে ,স্যারের শরীর খুব অসুস্হ ছিল।সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছেন।অনেক ডাকাডাকি করার পরও উঠছেন না।এমন অবস্হায় স্যারের মেয়ে আস্তে করে মাথায় হাত বুলিয়ে স্কুলের এক সহকারী স্যারের নাম ধরে বললেন,অমুক স্যার এসেছেন,সাথে সাথে স্যার গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠলেন।স্কুলের সহকর্মীদের সাথেও ছিল স্যারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।যা সচরাচর দেখা যায় না।স্যারের যেসব ছাত্র ছাত্রী দেশে বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে,আমার মনে হয়না তাদের সেই প্রিয় স্যারের কথা তারা কখনো ভুলতে পারবে। 

             সন্মানীত পাঠক আপনারা কি জানতে চান না আমার সেই প্রিয় শিক্ষকের পরিচয়?অবশ্যই বলবো তিনি হচ্ছেন আমার জন্মদাতা পিতা।তার সন্তান হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি।আমি নিজেও শিক্ষিকা ছিলাম।তারপরে বলবো শিক্ষক হয়ে আমি নিজে এত সন্মান কুড়াতে পারিনি।যতটুকু আমার আব্বা পেয়েছেন।একজন শিক্ষিকা হিসেবে আমাকে মানুষ যতটা চেনে,তারচেয়ে অধিক চিনে অমুক মাষ্টারের মেয়ে হিসেবে।দোয়া করি আব্বার আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।দুনিয়ায় যেমন সন্মানীত ছিলেন,আখেরাতেও যেন

আমার আব্বাকে আল্লাহ সন্মানীত আসনে আসীন করেন।