কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান
আব্দুছ ছালাম চৌধুরী
কথা ছিলো —তুমি আমি সমান সমান,
সে কী কথার কথা? নাকি দেবে তার প্রমাণ।
সকালের নাস্তায়, বসি না একই টেবিলে,
চার হাতের মমতায়, সাজাই না দু'জন মিলে।
কিছুটা গল্প করি হাসি হাসি,
তুমি আমাকে আর আমি তোমাকে বলি ভালোবাসি।
ভালোবাসা পেতে চাই,---- নহে করুণা, নহে অনুদান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।
তারপর, দু'জন, কেনো দুটো গাড়িতে,
অফিস-তো, একই শহরের- দুই মিনি সিটিতে।
—হয়,
তুমি আমাকে নামিয়ে দেবে আগে,
না হয়—
আমি ড্রাইভ করে যাবো, ভাগে ভাগে।
লাঞ্চ—সে তো একঘন্টার,
খোলা তো ফাস্টফুডের কাউন্টার।
দূরত্ব দশ পনেরো মিনিটের,
মিলি না, সময় তো টিফিনের।
কিছুটা তুমি খাইয়ে দিও,
তবেই তো আমি হবো প্রিয়।
জীবনের এই দিনগুলি কখনো ফিরবে না আর,
বুঝতে পারোনি?
----------------------এই মনে কার টান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।
লাঞ্চ শেষে—
আবার অফিসে যাবো
বাকি কাজ গুলো গুছাবো।
আসার পথে—
তুমিই আমাকে পিক্ করবে,
কাঁচের জানালা নামিয়ে, ইশারায় ডাকবে।
এই তো,
পাশের দরজা খুলে,
হাসিমুখে ব্যথা ভুলে।
বাড়ির পথে ছুটবে —
সারা দিনের কত কথা,
অফিসটা কেমন গেলো, ছিলো কি সমতা।
কাজের কি চাপে ছিলে?
প্রাসঙ্গিক আলাপকালে, যদি শোনাতে সাঁই জ্বি'র গান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান ।
বাড়ি ফিরে না হয়—.গোসলটা তুমিই আগে সারো,
আমি না হয় কিছুটা রান্না করি, তারপর আমি গোসলে গেলে, তুমি টেবিলটা সাজাতে পারো।
মুখোমুখি দু'জন বসে
না হয় নিলাম, আগামীর অংক কষে।
কিছুটা তুমি হাসলে, কিছুক্ষণ আমাকে হাসালে,
বারান্দায় বসে গল্প করতে করতে, ভালোবাসায় ভাসালে।
কানের পাশে ঠোঁট রেখে বললে, শোনো শোনো ঐ পাখির কলতান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান ।
অবশেষে —একই বিছানায় আমরা দু'জন ,
চোখে চোখ রেখে বুনে নিলাম সোনালি স্বপন।
যেমন করে তুমি আমাকে দেখছো, তোমার উত্তরাধিকারীর মা বলে,
আমিও ঐ সময়টার জন্য সকল ছুটি রাখলাম আগলে—
যেনো পাশে থাকতে পারি সময় হলে।
আমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ— হোক হাস্যজ্জল, দয়া করুক ঐ মহান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান ।
দ্বিতীয় পর্ব"
--কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান"
আব্দুছ ছালাম চৌধুরী
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান,
সে কী কথার কথা? নাকি দেবে তার প্রমাণ।
সদ্য প্রসূত ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান এলো,
ফুল হাতে দাঁড়িয়ে বাবা— নার্সকে জিজ্ঞেস করে----- বউটা কেমন আছে বলো।
নার্স বলে যান,
ভেতর নতুন মেহমান।
ভেতরে যেতেই ঠোঁটে মৃদু হাসি,
সুন্দর উপহার দেবার জন্য বউকে জানায় ধন্যবাদ— ------বলে, বড্ড ভালোবাসি।
অবস শরীরে— মা বলে,
হাত বাড়িয়ে ধরো, তবে সাবধান—ক্ষানিকটা কৌশলে।
ছেলে পেয়ে বাবা তো খুশিতে আত্মহারা,
এক হাতে ছেলে বুকে জড়ায়ে,অন্য হাত স্ত্রীর কপালে, যেনো পাগলপারা।
ইশরে—
এসিতেও ঘামাতুর যে তোমার সারা শরীর,
তবে ভয় নেই, আছি দাঁড়ায়ে, যেনো এক বীর।
বউ বলে—
যাবো না তো কোথাও —দেবে তার প্রমাণ,
কথা ছিল তুমি আমি সমান সমান।।
চারদিন পর বাড়ি ফিরে এলো,
স্ত্রী বলে স্বামীকে— এভাবে পাশে থাকবে তো? বলো।
জানি তো—অফিস থেকে তোমার ছুটি, মাত্র দুই সপ্তাহ,
ছুটি বাড়াতে আর্জিটা রাখো নাহ! —তড়িগড়ি অফিস যাওয়া নহে এতো সস্তা।
ঢের সেবা করতে হবে আমার আর বাবুটার—
দ্যখো, দ্যাখো—
এই দেখো না, কাঁপছে আমার প্রাণ,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
ছেলেটার ন্যাপি না হয় আমিই বদলাই,
তুমি না হয়, হাতটা সামলাও—শুনছো মশাই।
দুধটা গরম করে এনে দিতে পারবে?
কিছুটা শ্রম দিয়ে ধুয়েমুছে রাখবে?
এইতো হাতে গুণে মাত্র ক'টা দিন,
নিশ্চিত আবারও আসবে সুদিন।
ধীরে ধীরে বড় হবে—সাবলীল হয়ে উঠবে, আমাদের সন্তান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
মাস পরে তুমি না হয় অফিসে যাবে,
কিছুটা সেইভিং আছে, তা থেকেই চলবে।
সময়টা ভালো না
আশেপাশে দেখো না—
যদি একজন বুয়া পাওয়া যায়,
দু'বেলা এসে যেনো একটু খাওয়ায়।
কিছুক্ষণ আগলে রাখে—আমি যেনো ঘুমাতে পারি—সাংসারিক ঝঞ্জাল থেকে পাই পরিত্রাণ,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
মাস চলে গেছে, বাবার অফিস হলো শুরু,
মায়ের অনেক দায়িত্ব, মা প্রথম শিক্ষা গুরু।
ছেলেটা হাসলে মা— ও হাসে,
ইশ; বাবুটা কত সুন্দর — যেনো মা'কেই ভালেবাসে।
হঠাৎ বাবা এলো
পেছনে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলো।
বললো— কী গো,
বাবুকে কি-সব বলে— আনছো তুফান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
মা বলে--- না গো না,
কপালে চুমু দিতে করছি বাহানা।
হাত মুখ ধুয়ে নাও,
কফি দেই? নাকি সরাসরি ভাত খাবে বলে দাও।
আমার না হাতে অনেক কাজ,
বাবুকে নাওয়াবো খাওয়াবো— বাবুটা করে যেনো রাজ।
বাবা হেসে বলে শোনো গিন্নি,
চেয়েছিলাম, মক্তবে দেই কিছু সিন্নি।
কী বলো?
স্রষ্টার আরেক নাম আর্ রাহমান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
২৩/৮ /২০২২---ইংল্যান্ড"
(তৃতীয় এবং শেষ পর্ব)
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান—৩
আব্দুছ ছালাম চৌধুরী
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান,
সে কী কথার কথা? নাকি দেবে তার প্রমাণ।
মা বলে ঠিক তাই করো,
ধরো ধরো বাবু'টাকে ধরো।
ইশ'রে আমাকে না, যাও'তো একটু সরে,
পুড়ছে, কিছু একটা পুড়ছে ঐ রান্না ঘরে।
স্বামী বলে—
আমার প্রতি কেনো এতো অনীহা —অধিকার কেনো হবে ম্লান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
এভাবে বছর কেটে গেলো,
মা বলছে কি--গো? কিছু একটা বলো।
ছেলেকে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করতে চাই,
আমি আবার নিয়মিত অফিস করবো, তাই।
কাজটা হাতছাড়া করতে চাই না,
বাবুর ভবিষ্যৎ আছে না?
একদিন বাবু বড় ডাক্তার হবে,
হয়তো, বড় ইঞ্জিনিয়ার ও হবে।
তখন কতো টাকা লাগবে তা কি তুমি জানো?
লেখাপড়া চাট্টিখানি কথা না,
---------এ যেনো, কসাইখানা।
লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে, লোকে ছেলে মেয়ে পড়ায়,
কি জানি কি হয়, এই ছেলেগুলো কেনো বিদেশে পাড়ি জমায়।
তাহলে দেশে লালন পালন করে কি করবো—
মন ছোট হয়ে যায়,
বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবা— যদি কাছে নাহি পায়।
যাগ্গে —
এতসব ভাবনা দিয়ে কি হবে এখন, প্রভু প্রভু প্রভু রাখো যেনো মান-সম্মান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
বাবা বলে আমি বলি কি, যাক না আরো কিছুদিন,
ছেলেটাকে নিয়ে খেলা করো, কেমন যেনো ছেলেটার চেহারাটা হয়ে যাচ্ছে মলিন।
কিন্ডার গার্ডেনে অবশ্যই দেবো, সেইসাথে সকালবেলা মক্তবে দিতে হবে,
এইতো সময় সুরা কেরাত শেখার, নতুবা বড় হলে শিখতে পারবে না গো তবে।
মা বলে ঠিকই বলেছো—
পৃথিবী সৃষ্টি যার, তাঁর প্রতি নিবেদিত হোক এই প্রাণ,
কথা ছিল তুমি আমি সমান সমান।।
বাবু বেশ বড় হয়েছে— কিন্ডার গার্ডেন স্কুল থেকে এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে,
সেই কবে মক্তব পাস করে বসে আছে ঘরে।
মা-বাবা দুজনেই ভাবছে —মাধ্যমিক পরীক্ষাতে যদি ভাল হয়, তাহলে ভালো ভালো কলেজে স্থান পাবে—
চেষ্টার ত্রুটি করবো না, চোখ রাখবো যখন যেখানে যাবে।
এভাবেই একে একে, সবখানে পেলো এক নম্বর স্থান,
কথা ছিল তুমি আমি সমান সমান।।
গত ছয় মাস হলো, বাবুটা ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে,
বাড়িতে খুব একটা বেশি আসে না,
বাবা-মা প্রশ্ন করলে বলে, লেখা পড়াতে অনেক চাপ— খামখেয়ালি করো না।
বাবার পেনশন পেতে আর বেশি দিন নেই বাকি,
ছেলের পিছনে সকল টাকা খরচ করতে করতে— মা-র ঝরে দুই আঁখি।
এবার বাবুকে ধরতে হবে সংসারের হাল,
মা'র হাই ব্লাড প্রেসার—বাবার দশাটা ও বেহাল।
শেষ বয়সে এসে কথায় কথায় একে অন্যকে মারে টান,
কথা ছিল তুমি আমি সমান সমান।।
বাবুটা সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেলো,
ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি নিতেই বড় একটা অফিসে চাকরি হলো।
অফিসের বসের মেয়েটাকে ভালো লাগলো,
কোনো এক সন্ধ্যায় সে বিয়ে টাও সারলো।
বাবা-মা জানতে জানতে, অনেক সময় গড়িয়ে গেলো,
বছর শেষ হতে না হতেই, সে ও একটা বাবু পেলো।
হঠাৎ একদিন একটা চিঠি এলো, জানি মা, জানি বাবা, আমি ক্ষমার অযোগ্য—তোমাদেরকে দিতে পারিনি যথাযথ সম্মান,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।
হঠাৎ একদিন মা খুব জেদ ধরলো, ওগো শুনছো?
চল না শহরে যাই— কেনো কুরে কুরে মরছো?
বাবুর বাবুটা'কে না হয়, প্রাণ ভরে দেখবো,
বিশ্বাস করো— সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে আসবো।
দুজন মিলে রাত তিনটের একটা বাসে উঠলো,
কথা মতো ওরা বেলা দশ'টায় শহরে পৌঁছে দিলো।
সেখান থেকে রিক্সা করে সেই অট্টালিকায় হাজির,
অমন মা-বাবাকে দেখে দারোয়ান করলো বিড়বিড়।
বলছে— কী চাই মশাই,
অ্যাপোয়েন্টমেন্টের কার্ড আছে, নচেৎ ভেতরে যাওয়া যাবে না ভাই।
বাবা মা বললো, আমরা বাবু টার মা বাবা,
দারোয়ান বলে, সে কি চাকরিটা মোর খাবা!
দেখো মশাই —
খামোখা এখানে ঝামেলা করে লাভ নাই।
বরঞ্চ বাড়ি যান,
দিনকাল ভালো না, কখন যে আসে ঝড়তুফান।
যেতে যেতে বাবা দারোয়ানকে বললো,
বাবু টাকে বলে দিও, ওর বাবা মৃত্যু মুখে পতিত হলো।
ফিরতে বাসে ওরা ঠিকই বাড়ি ফিরলো,
সকালবেলা মা স্বামী সোহাগ করে ডাকলো।
কিন্তু —কিন্ত স্বামী তখন চিরনিদ্রায় শায়িত,
স্ত্রী বলে,, এ কী, এ ভাবে চলে যাবে একটুও ভাবিনি তো।
ক্ষাণিকটা পরে স্ত্রী একটু হেসে উঠলো—তারপর,,,,, তারপর নিস্তেজ হলো স্ত্রীর ও প্রাণ,
কথা ছিলো তুমি আমি সমান সমান।।