খোকা থেকে জাতির পিতা

খোকা থেকে জাতির পিতা

আব্দুছ ছালাম চৌধুরী 

মানুষের মধ্য থেকে কিছু ভালো মানুষ থাকে। সেই ভালো মানুষের মধ্য কিছু গুণী মানুষ হয়। আবার সেই গুণী মানুষের মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে কিছু মানুষের জন্ম হয়। যার কাজে কর্মে প্রতিফলিত হয়। 

এমনই একজন গুণী মানুষের বাল্য নাম— 'খোকা'। একটু বড় হতেই সেই খোকার নাম হলো মুজিবুর রহমান। অর্থাৎ পারিবারিক নাম যুক্ত হয়ে হলো --- শেখ মুজিবুর রহমান।  

সেই ছাত্রজীবন থেকে ছিলেন স্পষ্টবাদী। যাহা নিজের কাছে অনৈতিক বলে বিবেচিত হতো, তাহা আপন মনে প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করতেন না।

ধীরে ধীরে তার সৎকর্ম এবং সাহসিকতার কারণে মানুষের সজ্জন হতে লাগলেন। এ ভাবেই প্রতিবাদী হওয়ার কারণে ছাত্র জীবনে তাকে জেল বরণ করতে হলো।

আশেপাশের গ্রামে গঞ্জে শহরে নাম ছড়িয়ে পড়লো। তাকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান করা হলো। যখনই তিনি বক্তব্য দিতেন তখনই মানুষ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কথাগুলো শুনতো। একসময় তিনি ওতোপ্রোতো ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হলেন। যেখানে দূঃশাসন হতো সেখানেই প্রতিবাদ হতো। আর সেখানেই মুজিব'কে পাওয়া যেতো।

তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। কিন্তু মানুষের অধিকার থেকে কখনো পিছপা হননি। যেখানেই মুজিব যেতেন সেখানেই মানুষের ঢল নামতো। ধীরে ধীরে শুরু হলো এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। প্রতিটি কাজই বাঙালিকে পরিহাস করা হতো। তখনকার দিনে অনেকেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিন্তু পূর্ব বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য একমাত্র শেখ মুজিবের সমকক্ষ কেউ হতে পারলো।

আপামর জনসাধারণ থেকে সর্বমহলে শেখ মুজিবের নাম উচ্চারণ হতে লাগলো। সেই সময়ে অন্ধবিশ্বাসের মতো শেখ মুজিবকে মানুষ বিশ্বাস করতো।

পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যখন মতবিরোধ তুঙ্গে তখন গুটিকয়েক নেতা ছাড়া আর কাউকে খোঁজে পাওয়া যেতো না, কিন্তু সকল আন্দোলনে প্রায় সকল জনসভায় শেখ মুজিব ছিলেন অগ্রদূত। 

তিনি সর্বদাই আইনের শাসন, সমঅধিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা বলে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতেন। তার সৎকর্ম তার আদর্শ তার বলিষ্ঠ কণ্ঠ, তার প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণে, ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আর সত্যিকার অর্থে ও তিনি বঙ্গের (বাংলার) বন্ধু ছিলেন। 

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এবং দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন হয়। বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেয়ার কারণে তিনি হয়ে উঠেন জাতিরজনক বা বাংলাদেশের স্থপতি তথা বাঙালি জাতির পিতা।  

ধীরে ধীরে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে রাতদিন পরিশ্রম করে সংবিধান দিলেন। গনতন্ত্রের মূল ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করলেন। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলেন।

হতভাগা এই জাতি কী জানতো, কারো কারো কাছে অপছন্দ হয়ে উঠছে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।সেদিন কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারই বাড়িতে অর্থাৎ ৩২ নাম্বার ধানমন্ডিতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো।

বঙ্গবন্ধু তার সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি, কিন্ত তার ভালো আচরণ, তার ভালো গুণ লক্ষ লক্ষ মুজিব সৃষ্টি করে গেছেন। নিরবে নিভৃতে সেই 'খোকা' মুজিবুর রহমান তথা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য কোটি কোটি বাঙালি কাঁদে—

মহান রাব্বুল আলামিন তাঁকে বেহেশতের সর্বোচ্চ মোকাম দান করুন---আমিন।

১৬/৮/২০২২----ইংল্যান্ড"