গড়িয়ে যাবে বেলা
তাহমিনা চৌধুরী
একদিন আমার দৃষ্টি বালুভর্তি একটি নৌকার দিকে গেলো। # কি আশ্চর্য— ঢেউয়ের সাথে খেলা করে; ঠিক কোথায় যাচ্ছে, তা ঠিক জানি না।
নৌকার মধ্য-ভাগ এতো এতো বোঝাই যে, থৈ থৈ থৈ ঢেউ খেলছে, না কি; হাওয়ার তালে কোনো এক অজানা বস্তুকে আষাঢ়ী ঢলে নিয়ে যাচ্ছে--তা বুঝতে পারা দুস্কর।
একটু দূর থেকে লক্ষ্য করলে দেখবেন, জল আর নৌকার মেল বন্ধন ব্যথায় ভরা। কিছুটা অনুমেয় রবিরশ্মির ঝলকানিতে— তথাপি অস্পষ্ট অপরিচিত কিছু একটা বহে যাচ্ছে।
আধো আলো আধো ছায়ায় জল আর নৌকা ভালোমতো দৃশ্যমান হচ্ছে না। তবে ঠিকই অনুমেয় ভাটি বরাবর জলের সাথে নৌকার মতো কিছু একটা মিশে যাচ্ছে।
সেই একই বস্তু যদি সন্ধ্যাকালীন সময়ে দেখতে চাহেন, তখন ভয় কাজ করবে । ধড়ফড়িয়ে বুকটা কেঁপে উঠবে। সেই সময় যদি সেই নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেস করো—
নিঃসন্দেহে মাঝি বলবে বাবু,,, ও---অতিরিক্ত কিছু না। লক্ষীর সাথে ঘন বরিষণে দুদণ্ড খেলবো বলে আশায় বুক বেঁধে আছি। তাই গো নৌকাতে একটু অধীক বোঝা--(বোঝাই)।
----------কি আর বলি; সুখের বেলা গড়িয়ে যায় যে---
যখন দারিদ্রতার কষাঘাতে নড়বড় অবস্থা; তখনই এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে বাধ্য করে।
অন্ধকারে হোক আর অস্পষ্টতা হোক কিংবা চোখে ঝাপসা লাগুক—ব্যথা নিবারনের বিকল্প কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
মালিকের অজানা অজ্ঞতায় একটু যে করতেই হয়। নৌকা যেমন ম্যাড়মেড়ে, তেমনই নির্বিঘ্ন বলা যায়,,, আমরা ও নড়বড়ে—
কাউকে ভালো লাগলে সে নিরুৎসাহিত করে।
যাক্ পড়তে ছিলাম "গড়িয়ে যাবে বেলা" কবি দুঃখী মানুষের কথা বলতে বলতে নিজেরই দুঃখের কথা তুলে ধরলেন।
আর আমি বলি----বেলা তো হেলায় খেলায় যাবে;
ততক্ষণুনেই;
জনৈকা তাহমিনা চৌধুরীর আরও কিছু লেখা চোখে পড়লো, নিঃসন্দেহে শব্দে্ যোজনে নেশা আছে। একটু এদিক সেদিক আছে সত্য তবে, তিনি সাহিত্যিক; সাহিত্যমনা। বলা চলে সাহিত্য অনুরাগী।
তারই ধারাবাহিকতায়—
----গড়িয়ে যাবে বেলা------(অক্ষর বৃত্তে)
কোন্ সে বাঁশির সুর শুনে
ব্যাকুল হলো মন,
ঝর্ ঝর্ ঝরছে আজই
ঘন যে বরিষণ।।
আকাশটাতে ফ্যাকাসে ভাব
সূর্য যখন হেলে,
ব্যথার ভারে নীল কুমারী
কোথায় জানি খেলে।
মন মাতানো বৃষ্টি কেবল
অঝোরে যায় ঝরে,
টুপুর-টাপুর ছন্দ তালে
প্রাণটি নিলো কেঁড়ে ।
বন্ধুর সাথে খেলবো তবো
জল ভেজানো খেলা,
মৃদু বায়ুর আলতো ছোঁয়া
গড়িয়ে যাবে বেলা।
--------০--------
কিছুটা অস্পষ্ট হলেও প্রথম প্যারাতে লিখেছেন, কোন্ সে বাঁশির সুর শুনে—
ব্যাকুল করে মন> শেষে এসে লিখেছেন ঝরে বরিষণ--
সুরের মূর্ছনায় সাথে, বর্ণ বিষাদে শোকে কাতর, অতঃপর আঁখি ছলছল।
ফ্যাকাসে হাসি আকাশটা, ঢলে ভরা নদী, লুক্কায়িত কুমারী কোথায় কোন্ সে খেলা> মন মাতিয়ে মেতেছে হেলায়—
এখানেও বিষাদের বর্ণনা পাওয়া যায়। আশা; আলোহীন হয়ে গেছে সূর্য হেলে গেছে। টুপুর টুপুর বৃষ্টি ঝরে,,,,
কোথায় ঝরে!
যেখানে মন মাতিয়ে রাখে,অথবা যেখানে প্রাণ কেঁড়ে নিতে পারে। এখানেও ব্যথা গাঁথা, বিরহ বিদূর। শ্যামবিহীন মাটির গান। পরিশেষে এলো হৃদয়ের আকুতি- সখার একটু পরশ নিতে--ঘুম পাড়ানি গান শুনে শুনে কাটিয়ে দিতে অবশিষ্ট বেলা।
এতদসত্ত্বেও---
সুরের সু-মধুর কম্পনবিশেষ> তার হৃদ্যতায় শ্যাম> বীণার মতো বেজে উঠে।
মাঝ দরিয়ায় অস্পষ্ট, ঝাপসা, আধো আলো, আধো ছায়া---- অনির্দিষ্ট কালের মতো পুড়ে ছাই করে যাচ্ছে বলেই লক্ষী এলো।
বারবার কাছে ডেকে শৃঙ্খলা ভাঙিতে উদ্ভুদ্ধ কেনো হয়, কার সুখে।
দৃশ্যত কার মনে ক্ষণে ক্ষণে এতো ঢেউ উঠে। কে সেই মন মাঝি?
কে সেই লক্ষী? যার স্বপ্নে ব্যাকুল; ঠিক বহতা স্রোতে সাথে সাথে অন্তরীক্ষে এতো এতো ঢেউ খেলে।
সেই সে আকুতি, তুমি কি শুনতে পাও—এখানে কবি বারবার সময়ের কথা, ব্যথার কথা বলছেন। বলেছেন,,,, আমার বাঁশির সুর কি শুনতে পাও? না কি বেলা গড়িয়ে গেছে বলে হেলায় খেলা ----লক্ষীর ভাবনায় বিভোর।