গ্রহণ পর্ব ৪

গ্রহণ পর্ব ৪

শামীমা আহমেদ 

দীপিকার রাতের খাবার সাজানো ট্রেতে করে তার ঘরে দিয়ে গেলো বাসায় থাকা কাজের খালা। বহুদিন যাবৎ এ বাড়িতে সে। সেই দীপিকার কলেজ লাইফ থেকে। একেবারে আপনজন হয়ে গেছে।এ বাড়িতে কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার, বাবুর্চি, আয়া, বুয়াদের একদম আপনজন ভাবতে শিখিয়েছেন ওদের বাবা। তিনি বলতেন, এখানে সবাই যার যার পেশাগত দায়িত্ব পালন করছে তাই তাদের সাথে সেরকম আচরণই করতে হবে, কোনভাবেই নিচু ভাবা যাবে না। আসলে দীপিকার বাবা একজন ফুললি প্রফেশনাল মানুষ ছিলেন। কাজ ছাড়া কিছু বুঝতেন না। জীবনে অনেক পোড়খাওয়া মানুষের এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।

দীপিকার দৃষ্টি খাবারের দিকে নিলো। রাতের খাবার বলতে একবাটি চিকেন সুপ, সাথে সব্জি আর এক পিস ব্রেড টোস্ট। এভাবেই ডায়েটটা সাজিয়ে নিয়েছে দীপিকা। এর ঘন্টা পর এক কাপ কফি। সব আয়োজন ঘরেই করে নেয়া। এত বড় ডাইনিংয়ে একা বসে খাওয়া হয়না। আর তা হচ্ছেও না বহুদিন। বাবা থাকতে, মা সুস্থ থাকতে আর দীপনের দুষ্টুমি, ছোটাছুটিতে খাবার সময়টা একটা হৈ চৈ এর মধ্যে দিয়ে কাটতো। আজ সবই স্মৃতি।

দীপিকা ইদানিং কিছু কিছু হিন্দী সিরিয়ালের ভক্ত হয়ে উঠছে। ভালোই লাগে এমন সাজসজ্জার বাহার! এগুলো যে কতটা অবাস্তব সেটা ভেবেই স্রেফ আনন্দচ্ছলে এগুলো দেখা। আর ঘটনাগুলোও এমন সব আজগুবি গল্পে সাজানো ! মেকি ক্লাইমেক্সে টান টান উত্তেজনায় সরলমনা গৃহবধুদের উদ্ভট মুখ সাজে আকৃষ্ট করা। আর দামী জড়োয়া গহনার দিকে কাঙালের মত তাকিয়ে থাকা ! যদিও দীপিকাকে এই ধরণের গল্পের আবেগ একেবারেই ছোঁয় না।

তবুও দেখে সময় পার করা আর কি ! তবে মাঝে মাঝে মনে হয় সব গল্পই কি কাল্পনিক ?

মানুষের জীবনেও তো বাস্তবে কত ঘটনাই ঘটে। তার জীবনেও কি ঘটেনি ? সেও কি এ ধরণের ঘটনার মুখোমুখি হয়নি ? তার জীবনেও কি হিন্দী সিরিয়ালের চেয়ে কম চমক আসেনি ? 

নাহ ! আবার সেই দুঃসহ স্মৃতি! আর সেই স্মৃতির সাথে থাকে এক নিদারুণ দুঃখবোধ।

আর এর সাথে জড়িয়ে থাকে শাহেদের নামটি ! শাহেদের কথা মনে হতেই দীপিকা 

মোবাইলে মেসেঞ্জারে একটু চোখ বুলিয়ে নিলো। না, শাহেদের কোন মেসেজ নেই। এখন নয়। আরেকটু পরে সে নক দেবে। সেদিনের কথার পর শাহেদ আর তার সাথে যোগাযোগ করেনি ।চলবে....