চলতি বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হচ্ছে সিলেটের ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র

চলতি বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হচ্ছে সিলেটের ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র

বাংলাভাষী ডেস্ক::

চলতি বছরই মেয়াদ শেষ হচ্ছে সিলেটের তিনটিসহ দেশের পাঁচটি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৫০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি। দেশের বিদ্যুৎ খাতের সম্প্রসারণে আশি ও নব্বইয়ের দশকে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যেই এ পাঁচ কেন্দ্রের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বলছে, সরকারি যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে, সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা বিবেচনা করা হবে। তারপর উৎপাদন খরচের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এর আগে গত বছর চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ম অনুযায়ী অবসরে গেছে। তবে আশুগঞ্জ ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর শেষ হলেও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে এখনো উৎপাদনে রয়েছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

সাধারণত কোনো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র যখন তৈরি হয়, তখন সেটির নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা হিসাব করে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি করে বিপিডিপি। এরপর প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে চুক্তি নবায়ন করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রথমেই দেখা হয়, সেটির আর প্রয়োজন আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ অন্য কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজে লাগানো যায় কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এ প্রক্রিয়ার সবশেষ ধাপ হলো, ব্যবহূত যন্ত্রপাতি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া।

পিডিবি বলছে, অবসরের অপেক্ষায় থাকা সরকারি পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে চারটি ফার্নেস অয়েলচালিত ও একটি গ্যাসভিত্তিক। চলতি বছরের এপ্রিলে একটি ও জুনে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হলে তা বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই সংস্থাটির কাছে।

মেয়াদ ফুরিয়ে আসা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট (এসটি-৪) বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে আগামী মাসের ৫ তারিখ। সিলেট ২০ মেগাওয়াট, হরিপুর ৩২ মেগাওয়াট, ফেঞ্চুগঞ্জ ৯৭ মেগাওয়াট কম্বাইন সাইকেল ও ঘোড়াশাল ২১০ মেগাওয়াট (ইউনিট-৪)—এ চার বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩০ জুন।

দেশের বিদ্যুৎ খাতের চাহিদায় ছোট ছোট এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিদ্যুতের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অবসরে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকার নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছে।

পিডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সরকারি পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে বিপিডিবি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যেগুলো গ্যাসভিত্তিক সেগুলো প্রয়োজন হলে অনেক ক্ষেত্রে চালু রাখা হয়। তবে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দর বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু রেখেছে বিপিডিবি। এছাড়া সেচ মৌসুমে যাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট না হয়, সেজন্যও ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চলছে। যদিও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে সংস্থাটির।

সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের আরো ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ৫৪০ মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবসরে যাবে কিনা তা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। এরই মধ্যে সরকার মেয়াদ শেষ হওয়া পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি দুই বছরের জন্য নবায়ন করেছে। ফলে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তদবির শুরু করেছে।

গত বুধবার সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ শর্তে ৪৫৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পাঁচ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যশোর, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জের ৪৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর ফলে স্পন্সর কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ৫ হাজার ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এ বিষয়ে বিদ্যুতের গবেষণা ও নীতি প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে চালু রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। মূলত যেগুলো ছাড়া আমরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে না, সেগুলো রাখা হবে। তবে এক্ষেত্রে চুক্তির ধরনটা হবে নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্টের ভিত্তিতে। এর বাইরে বিদ্যুতে আমাদের এখন অতিরিক্ত সক্ষমতা রয়েছে। ফলে প্রয়োজন ছাড়া পুরনো কেন্দ্র নবায়ন করার খুব বেশি সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ১৫০টি ছোট-বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। নবায়নযোগ্য ও ক্যাপটিভ পাওয়ার মিলিয়ে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার ১৪৬ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার ৪৬ শতাংশ।