জেল হত্যা দিবসঃ সরাসরি সরকারি মদদে বিকৃত ও অসুস্থ মন মানসিকতা সমৃদ্ধ সামরিক অফিসারদের দ্বারা সংঘটিত ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ড 

জেল হত্যা দিবসঃ সরাসরি সরকারি মদদে বিকৃত ও অসুস্থ মন মানসিকতা সমৃদ্ধ সামরিক অফিসারদের দ্বারা সংঘটিত ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ড 

ডক্টর আনিছুর রহমান আনিছ

৩রা নভেম্বর শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কময়, রক্তঝরা ও বেদনাবিধুর একটি দিন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ঘৃণ্য কলঙ্কিত দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় রাতের আঁধারে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী ও জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে।

একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশ মাতৃকার সেরা সন্তান জাতীয় এই চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। প্রগতি-সমৃদ্ধির অগ্রগতি থেকে বাঙালিকে পিছিয়ে দিয়েছিল। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন নৃশংস ও কাপুরুষোচিত এবং বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন। এই বর্বর হত্যাকান্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহিয়সী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ। বঙ্গবন্ধুর ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বর্ণালী ইতিহাস কালো চাদরে ঢাকা পড়ে যায়। জাতির বুকে চেপে বসে সামরিক শাসন ও স্বৈরতন্ত্রের অশুভ আস্ফালন। শুরু হয় হত্যা ও ষড়ন্ত্রের রাজনীতি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ সামরিক স্বৈরশাসনের জাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হয়। খুনি মোশতাকের অপসারণের পর অস্ত্র হাতে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে। সংবিধান স্থগিত করে, পার্লামেন্ট বাতিল করে, সেনা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। নিজের ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে জেনারেল জিয়া বিমানবাহিনীর ৫৬৫ জন অফিসার এবং সেনাবাহিনীর প্রায় দুই সহস্রাধিক অফিসার ও সৈনিককে হত্যা করে। আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। পরবর্তীকালে জেনারেল এরশাদও জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।

সামরিক শাসকরা মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেয়। সামরিক ফরমানবলে সংবিধানকে সংশোধন করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র পাল্টে দেয়। স্বাধীনতা-বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে পুনর্বাসিত করা হয়। হত্যা, ক্যু- পাল্টা ক্যু হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতা বদলের হাতিয়ার।

জিয়ার অবৈধ ক্ষমতা দখল, সামরিক শাসন ও সংবিধান সংশোধনকে ২০০৬ সালে উচ্চ আদালের রায়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জেল হত্যাকান্ডের ৪৬ বছরের মাথায় এসে এটি এখন প্রমাণিত সত্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাৎ অথবা স্বাধীন বাংলাদেশকে চিরতরে ধ্বংস করার অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল।

জেলের অভ্যন্তরে সেদিন যেভাবে জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়ঃ

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটি পিকআপ এসে থামে।

তখন রাত আনুমানিক দেড়টা থেকে দুইটা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সে গাড়িতে কয়েকজন সেনা সদস্য ছিল।

ঢাকা তখন এখন অস্থিরতার নগরী। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থান নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে তখন।

রাত দেড়টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক টেলিফোন করে জেলারকে তাৎক্ষনিকভাবে আসতে বলেন।

দ্রুত কারাগারের মূল ফটকে গিয়ে কারা পরিদর্শক দেখলেন, একটি পিকআপে কয়েকজন সেনা সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় আছে।

মূল ফটকের সামনে সেনা সদস্যরা কারা মহাপরিদর্শককে একটি কাগজ দিলেন।।

মূল ফটক দিয়ে ঢুকে বাম দিকেই ছিল জেলার আমিনুর রহমানের কক্ষ। তখন সেখানকার টেলিফোনটি বেজে উঠে।

মি. রহমান যখন টেলিফোনের রিসিভারটি তুললেন, তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবেন।

২০১০ সালে বিবিসি বাংলার কাছে সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মি. রহমান বলেন, "টেলিফোনে বলা হলো প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সাথে। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে আইজি সাহেবকে খবর দিলাম। কথা শেষে আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট সাহেব ফোনে বলছে আর্মি অফিসাররা যা চায়, সেটা তোমরা কর।"

১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের চারজন সিনিয়র নেতা - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে ঢাকার কারাগারে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরেই তখন এ চারজন নেতা ছিলেন দলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তখন অনেকটা দিশেহারা।

চারজন সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই কারাগারে এবং অনেকে আত্ন গোপনে ছিলেন এবং অনেকে আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।

তৎকালীন "ক্ষমতাসীন মোশতাক বা তার সমর্থকরা চাননি যে তাদের বিরোধী আরেকটি শক্তি শাসন ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক। ঐ ধরনের একটা সরকার যদি হতো তাহলে জেলে থাকা সে চারজন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা।" এই সম্ভাবনা থেকে জেল হত্যাকাণ্ড হতে পারে।

পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকেই হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা পাল্টা আরেকটি অভ্যুত্থানের আশংকায় ছিল।

সেনাবাহিনীর মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ।

শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা তখন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহেমদকে পরিচালনা করছিলেন। মি: হোসেন বলেন বঙ্গভবনের থাকা সেনা কর্মকর্তাদের সাথে একটা সংঘাত চলছিল সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কিছু সেনা কর্মকর্তাদের সাথে।

শেখ মুজিবকে হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ধারনা করেছিলেন যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে সেটি আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবে। সে ধরনের পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে সে বিষয়ে মুজিব হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা কিছুটা ভেবেও রেখেছিলেন। আর"ঐ ধরনের ক্যু হলে তখনকার আওয়ামী লীগে যাতে কোন ধরনের লিডারশিপ না থাকে সেটাই তারা বোধ হয় নিশ্চিত করেছিল।"

হত্যাকারী সেনা কর্মকর্তারা ভেবেছিল যদি সে চারজন রাজনীতিবিদকে যদি হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা অভ্যুত্থান হলেও সেটি রাজনৈতিক সমর্থন পাবেনা। সে ধারনার ভিত্তিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় চারজন নেতাদের হত্যা করা হয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

 ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড কলঙ্কজনক ও বেদনাদায়ক অধ্যায়।

সেই রাতে জেলখানায় কী ঘটেছিল তার বর্ণনা পাওয়া যায় তৎকালীন আইজি প্রিজনস এন নুরুজ্জামান ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্তব্যরত ডিআইজি প্রিজন আবদুল আউয়ালের প্রতিবেদন থেকে। ৫ নভেম্বর এই প্রতিবেদন তারা জমা দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। তারা দুজন ছাড়াও জেলে কর্তব্যরত আরও কয়েকজন এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন।

জেলখানার সেই ঘটনা জানার আগে সংক্ষেপে জানা প্রয়োজন আরও কিছু তথ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। এই সরকার পুরোপুরি সেনা সরকার ছিল না। অন্যদিকে ১৫ আগস্ট থেকে অভ্যুত্থানকারী রশিদ-ফারুক ও তার কিছু সহযোগী অবস্থান নেন বঙ্গভবনে। মোশতাক ও তার সরকারের ওপর ছিল তাদের যথেষ্ট প্রভাব। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর একাংশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ। এই প্রেক্ষাপটে ২ নভেম্বর মধ্যরাতে (ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী তখন ৩ নভেম্বর) মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ। এই অভ্যুত্থানকালেই মোশতাক-রশিদ-ফারুকের প্রেরিত ঘাতক দল জেলখানায় হত্যা করে জাতীয় চার নেতাকে।

১৫ আগস্টের পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীসহ আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাকে আটক করে কেন্দ্রীয় কারাগারের রাখা হয়েছিল। নিউ জেলের পাশাপাশি তিনটি রুমে তাঁদের রাখা হয়। ১ নম্বর ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদসহ আটজন বন্দী। ২ নম্বর রুমে ছিলেন এ এইচ কামারুজ্জামানসহ ১৩ জন। ৩ নম্বর রুমে ছিলেন এম মনসুর আলীসহ ২৬ জন। সেই রাতে ১ নম্বর রুমে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদকে রেখে বাকি ছয়জন বন্দীকে অন্য রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ২ নম্বর রুম থেকে এ এইচ কামারুজ্জামান ও ৩ নম্বর রুম থেকে এম মনসুর আলীকে ১ নম্বর রুমে নেওয়া হয়। এই রুমেই তাঁদের চারজনকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়।

জেল হত্যার বিবরণ দিয়ে আইজি প্রিজনস নুরুজ্জামানের প্রতিবেদন;

১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর রাত ৩টায় আমি বঙ্গভবন থেকে মেজর রশিদের একটি ফোন পাই। তিনি আমার কাছে জানতে চান, ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কোনো সমস্যা আছে নাকি। আমি জানালাম, ঠিক এই মুহূর্তের অবস্থা আমার জানা নাই। এরপর তিনি আমাকে জানালেন, কয়েকজন বন্দীকে জোর করে নিয়ে যেতে কয়েকজন সেনা সদস্য জেল গেটে যেতে পারে, আমি যেন জেল গার্ডদের সতর্ক করে দিই। সে অনুযায়ী আমি সেন্ট্রাল জেলে ফোন করি এবং জেল গেটে দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডারকে মেসেজটি জেলারকে পৌঁছে দিতে বলি, যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

৩ / ৪ মিনিট পর বঙ্গভবন থেকে আরেকজন আর্মি অফিসারের ফোন পাই। তিনি জানতে চান আমি ইতিমধ্যেই ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে গার্ডদের সতর্ক করে দিয়েছি কিনা। আমি ইতিবাচক জবাব দেওয়ার পর তিনি আমাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য জেলগেটে যেতে বলেন। আমি তখন ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের ডিআইজি প্রিজনকে ফোন করি। খবরটি জানিয়ে আমি তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলগেটে চলে যেতে বলি। দেরি না করে আমিও জেলগেটে চলে যাই এবং ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া জেলারকে আবার গার্ডদের সতর্ক করে দিতে বলি। এর মধ্যে ডিআইজিও জেলগেটে পৌঁছেন। বঙ্গভবন থেকে পাওয়া খবরটি আমি আবার তাঁকে জানাই।

এর পরপরই মেজর রশিদের আরেকটি ফোন পাই। তিনি আমাকে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই জনৈক ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে যেতে পারেন। তিনি আমাকে কিছু বলবেন। তাঁকে যেন জেল অফিসে নেওয়া হয় এবং ১. জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ২. জনাব মনসুর আলী ৩. জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম ৪. জনাব কামারুজ্জামান-এই ৪ জন বন্দীকে যেন তাঁকে দেখানো হয়।

এ খবর শুনে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাই এবং টেলিফোন প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়। আমি কিছু বলার আগেই প্রেসিডেন্ট জানতে চান, আমি পরিষ্কারভাবে মেজর রশিদের নির্দেশ বুঝতে পেরেছি কিনা। আমি ইতিবাচক জবাব দিলে তিনি আমাকে তা পালন করার আদেশ দেন।

কয়েক মিনিটের মধ্যেই ৪ জন সেনা সদস্যসহ কালো পোশাক পরা ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলগেটে পৌঁছান। ডিআইজি প্রিজনের অফিসকক্ষে ঢুকেই তিনি আমাদের বলেন, পূর্বোল্লিখিত বন্দীদের যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে তাঁকে নিয়ে যেতে। আমি তাঁকে বলি, বঙ্গভবনের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি আমাকে কিছু বলবেন। উত্তরে তিনি জানান, তিনি তাঁদের গুলি করবেন। এ ধরনের প্রস্তাবে আমরা সবাই বিমূঢ় হয়ে যাই। আমি নিজে ও ডিআইজি প্রিজন ফোনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। সে সময় জেলারের ফোনে বঙ্গভবন থেকে মেজর রশিদের আরেকটি কল আসে। আমি ফোনটি ধরলে মেজর রশিদ জানতে চান, ক্যাপ্টেন মোসলেম সেখানে পৌঁছেছেন কিনা। আমি ইতিবাচক জবাব দিই এবং তাঁকে বলি, কি ঘটছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তখন মেজর রশিদ আমাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আমি প্রেসিডেন্টকে ক্যাপ্টেনের বন্দীদের গুলি করার ইচ্ছার কথা জানাই। প্রেসিডেন্ট জবাব দেন, সে যা বলছে তাই হবে। তখন আমরা আরও উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্যাপ্টেন মোসলেম বন্দুকের মুখে আমাকে, ডিআইজি প্রিজন, জেলার ও সে সময় উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তাদের সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে উপরোল্লিখিত বন্দীদের রাখা হয়েছে। ক্যাপ্টেন ও তার বাহিনীকে তখন উন্মাদের মতো লাগছিল এবং আমাদের কারও তাদের নির্দেশ অমান্য করার উপায় ছিল না। তার নির্দেশ অনুযায়ী পূর্বোল্লিখিত ৪ জনকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করা হয় এবং একটি রুমে আনা হয়, সেখানে জেলার তাদের শনাক্ত করেন। ক্যাপ্টেন মোসলেম এবং তার বাহিনী তখন বন্দীদের গুলি করে হত্যা করে। কিছুক্ষণ পর নায়েক এ আলীর নেতৃত্বে আরেকটি সেনাদল সবাই মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে জেলে আসে। তারা সরাসরি সেই ওয়ার্ডে চলে যায় এবং পুনরায় তাদের মৃতদেহে বেয়নেট চার্জ করে।

জেল হত্যার বিবরণ দিয়ে ডিআইজি প্রিজন কে আবদুল আউয়ালের প্রতিবেদন;

২ নভেম্বর’ ৭৫ দিবাগত রাত ৩ ঘটিকায় আমি আমার বাসভবনে অবস্থানকালে জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেলের কাছ থেকে আমাকে জেলগেটে যাওয়ার নির্দেশ সংবলিত একটি মেসেজ পাই। তিনি আরও জানান, বঙ্গভবন থেকে প্রাপ্ত নির্দেশের ভিত্তিতে তিনি নিজেও জেলগেট অভিমুখে রওনা দিচ্ছেন। আমাকে আরও বলা হয়, কতিপয় সামরিক কর্মকর্তা জেলগেটে আসতে পারেন এবং জোরপূর্বক কয়েকজন বন্দীকে নিয়ে যেতে পারেন। মুহূর্তমাত্র ব্যয় না করে আমি জেলগেটের উদ্দেশে রওনা দিলাম এবং রাত ৩টা ২০ মিনিট নাগাদ সেখানে পৌঁছলাম। গিয়ে দেখি জেলগেটে জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং জেলার আগে থেকেই উপস্থিত। অতঃপর আমি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে সঙ্গে নিয়ে আমার অফিস কক্ষে গেলাম। একটু পরেই জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল একটি টেলিফোন কল রিসিভ করলেন, আমাকে বলা হলো তা বঙ্গভবন থেকে এসেছে। এখানে বলা যেতে পারে, এই টেলিফোন সংলাপে ইন্সপেক্টর জেনারেল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। টেলিফোনে আলাপ সেরে ইন্সপেক্টর জেনারেল আমাকে জানালেন যে, তাঁকে বলা হয়েছে কয়েকজন সশস্ত্র গার্ড নিয়ে ক্যাপ্টেন মোসলেম জেলে আসবেন এবং তাঁকে ভেতরে নিয়ে যেতে হবে। তিনি (মোসলেম) যা করতে চান তাঁকে তা করতে দিতে হবে এবং বন্দী তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান কারা, তাঁকে তা চিনিয়ে দিতে হবে। ইতিমধ্যে ইন্সপেক্টর জেনারেল বঙ্গভবন থেকে আর একটি টেলিফোন মেসেজ রিসিভ করলেন। ইন্সপেক্টর জেনারেল আমাকে জানালেন, তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, সব গার্ডকে ঠিকমতো সতর্ক করা হয়েছে কিনা। তিনি কর্মকর্তাসহ অন্যান্য স্টাফদের খুবই সতর্ক ও অতন্দ্র থাকার নির্দেশ দিলেন। ইন্সপেক্টর জেনারেলের এই নির্দেশ পালন করা হলো। এর কিছুক্ষণ পর স্টেনগান, এসএলআর প্রভৃতিতে সুসজ্জিত ৪ জন সশস্ত্র কর্মকর্তা সহযোগে ভীতিকর ভঙ্গিতে ক্যাপ্টেন মোসলেম আমার অফিসকক্ষে এলেন এবং জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনিই নুরুজ্জামান কিনা। জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল ‘হ্যাঁ’ বোধক উত্তর দিলেন। এরপর তিনি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে তাড়াতাড়ি করতে বললেন। ইন্সপেক্টর জেনারেল তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কি করতে হবে? আমাদের ভয়ানক আতঙ্কিত করে তিনি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে বললেন, তাঁর কাছে পূর্বে যে কয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি তাদের গুলি করবেন। ইন্সপেক্টর জেনারেল বললেন যে, তিনি পূর্বে এ জাতীয় কোনো নির্দেশ পাননি এবং তাঁকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। আমার অফিসের টেলিফোনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো কিন্তু যোগাযোগ করা গেল না। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইন্সপেক্টর জেনারেলকে জানানো হলো যে, জেলারের অফিসের টেলিফোন সেটে তাঁর নামে বঙ্গভবন থেকে টেলিফোন এসেছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল টেলিফোন ধরার জন্য রওনা দিলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। পেছন পেছন চলল সামরিক কর্মকর্তারা। টেলিফোনে কথা বলার সময় ইন্সপেক্টর জেনারেল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন এবং তার অনুরোধ রাখা হলো বলে স্পষ্ট মনে হলো। ইন্সপেক্টর জেনারেলকে বলতে শুনলাম, ক্যাপ্টেন মোসলেম তাঁদের গুলি করবেন বলে বলেছেন। এরপর ইন্সপেক্টর জেনারেল টেলিফোন রেখে দিলেন এবং তাঁর মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল।

ক্যাপ্টেন মোসলেম তখন বন্দুকের নল ঠেকিয়ে আমাদের তখনই পূর্বোক্ত বন্দীরা যেখানে আটক রয়েছে সেখানে যাওয়ার হুকুম দিলেন। নির্দেশমাফিক সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল রওনা দিলেন। আমি জেলার এবং অন্যান্য নির্বাহী স্টাফরাও সঙ্গে চললাম। পথিমধ্যে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছার কথা জানালাম। ক্যাপ্টেন হুমকির সুরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ভয় পাচ্ছেন? আমি বললাম, ভয়ের প্রশ্ন আসছে না, আমার ৩২ বছরের চাকরি জীবনে আমি এ জাতীয় ঘটনার কথা শুনিনি। তিনি ক্রোধান্বিত হলেন এবং একজন সামরিক কর্মকর্তা (সেপাই) আমার কাঁধে হাত রেখে আমাকে চলে যেতে বললেন। এতে ইন্সপেক্টর জেনারেল বললেন, না, উনি থাকবেন। আতঙ্ক ধরিয়ে দেওয়া চোখে ক্যাপ্টেন আমার দিকে তাকালেন। ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেন মোসলেমের নির্দেশে জেলার এবং অন্যান্য কয়েকজন নির্বাহী স্টাফ মিলে তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে অন্যান্য বন্দীদের থেকে আলাদা করলেন। তাঁদের একটা ওয়ার্ডে জড়ো করা হলো এবং ওই ওয়ার্ডের অন্যান্য সদস্যদের সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হলো।

ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেন এ জাতীয় বিলম্বে বেশ কয়বার বিরক্তি প্রকাশ করে বলছিলেন, শেখ মুজিবকে খতম করতে ভার মাত্র ৩ মিনিট সময় লেগেছিল। যখন তাঁদের জানানো হলো ৪ বন্দীকে একটি কক্ষে আনা হয়েছে, ক্যাপ্টেন মোসলেম আর তাঁর দল তৎক্ষণাৎ সেই রুমের দিকে রওনা হয়ে গেলেন। যে ওয়ার্ডে উক্ত বন্দীদের আটক রাখা হয়েছে সেখান থেকে ৪০ গজ দূরে আমি আর জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল দাঁড়িয়ে রইলাম। অচিরেই আমাদের কানে গুলি করার ভয়াবহ শব্দ ভেসে এল। তাঁরা ফিরে এলেন আর তড়িঘড়ি জেলগেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমরা তাঁদের অনুসরণ করলাম। রেকর্ড অনুসারে ক্যাপ্টেন মোসলেম আর তার দল জেলগেটে ঢুকেছে ভোর ৪টায় এবং জেলগেট ছেড়ে গেছে ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে। এরপর ভোট ৫টা ২৫ মিনিটে বঙ্গভবন থেকে নায়েক এ আলীর নেতৃত্বে সশস্ত্র কর্মকর্তাদের আর একটি দল এল এবং গুলি করার জায়গাটি পরিদর্শন করে ভিকটিমদের মৃত্যু সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে চাইল। তাদের নির্দেশও পালন করা হলো। যেহেতু আমি সে সময় আমার অফিস কক্ষে ফজরের নামাজ পড়ছিলাম আমি এই দলটিকে স্বচক্ষে দেখিনি। নামাজ শেষ করে আমি জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেলের কাছ থেকে এ তথ্য পেলাম। তিনি তখনো তার অফিস কক্ষে ছিলেন। দলটি তাদের পরিদর্শন শেষে ৫টা ৩৫ মিনিটে জেল ছেড়ে চলে যায়। আমি পরে জানতে পারি এই দলটি মনসুর আলী এবং নজরুল ইসলামের দেহে বেয়নেট দিয়ে আঘাতও করে।

জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে জেল ত্যাগ করেন এবং আমি সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে আমার অফিসকক্ষ ত্যাগ করি। আমি আবার অফিসে ফিরে আসি সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। জেল হত্যাকান্ড নিঃসন্দেহে বিকৃত এবং বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তাদের অসুস্থ মন মানসিকতার পরিচয় বহন করে যা তথকালিন শাসকদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সারাসরি সরকারী মদদে সংঘটিত হয়েছিল। তাদের মুখোশ উন্মোচন করা আজ সময়ের দাবী।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরমুহূর্ত থেকেই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ বেতারকে পাকিস্তানি স্টাইলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ বলা শুরু হয়। ’৭১-এর রণধ্বনী ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ উচ্চারণ করা হয়।

জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার ২৫ বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ, স্থগিত ও প্রলম্বিত করা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা বিচারের উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকজন খুনির ফাঁসি হয়েছে। পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ থেমে নেই। উচ্চ আদালতে জেল হত্যাকান্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’-এর মতো জংলি আইনের জাঁতাকল থেকে বাঙালি আজ মুক্ত।

পূর্বাপর ঘটনা বিশ্লেষণে ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের দেশবাসী চিনতে পারলেও আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যার নেপথ্যের ষড়যন্ত্র এখনও উদ্ঘাটন করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার মূল নায়কদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি আজ উচ্চারিত হচ্ছে। হত্যাকান্ডে মোশতাক ও জিয়ার ভূমিকা ছিল স্পষ্ট। তাদের কর্মকান্ডে এটা আজ প্রমাণিত যে প্রত্যক্ষভাবে এই ঘটনায় তারা জড়িত ছিল এবং হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষ বেনিফিশিয়ারিও তারা। তাই আজ দেশবাসীর দাবি, অনতিবিলম্বে বঙ্গবন্ধু এবং জেল হত্যাকান্ডে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জাতির সামনে উন্মোচন করা হোক।

বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে খুনিরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। হত্যা, খুন, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির কারণে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধির গতি থমকে গিয়েছিল। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশ সেবার সুযোগ পায়। জননেত্রী শেখ হাসিনার তৃতীয় মেয়াদের শাসনামলে বাংলাদেশ উন্নয়ন অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। দেশ আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একসময়ের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমাদের পরিচিতি দিয়েছেন। তারই যোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক দেশের তালিকায়। ষড়যন্ত্র আজও থেমে নেই। এ দেশে এখনও রক্তাক্ত পথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চলে। ২১ আগস্টের মতো গ্রেনেড হামলা করে গোটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়। নির্বাচন ঠেকানোর নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়। দেশের মানুষ আজ শান্তিতে আছে। স্বস্তিতে আছে। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কর্মকান্ড মানুষ বরদাসত করবে না। অপরাজনীতি আজ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমেই জাতীয় চার নেতার আত্মদানের প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো সম্ভব। বাঙ্গালী জাতি অনন্তকাল ধরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর জাতীয় চার নেতাকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসের এই নিকৃষ্ট বর্বরোচিত কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করবে।

ডক্টর আনিছুর রহমান আনিছ

আইন গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী

সদস্যঃ লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাপ্তাহিক বাংলা সংলাপ

সাবেক লেকচারারঃ সিলেট মেট্রোপলিটন ল কলেজ ও

Swarthmore College London.

১ নভেম্বর ২০২১