জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন

জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন

বাংলাভাষী ডেস্ক :

শুরুতে বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যাটিং। আট স্বীকৃত ব্যাটার নিয়েও পুঁজি মাত্র ১৪৪ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের ব্যাটিং বির্পযয় ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতোই ছিল। তবে দারুণ বোলিংয়ে শঙ্কার মেঘ দূর করেন তাসকিন আহমেদ। সোমবার হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে ব্যাটারদের নিদারুণ ব্যাটিংয়ের পর এই পেসারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বিশ্বমঞ্চে টাইগারদের হাতে ধরা দিয়েছে জয়। সুপার-টুয়েলভে দ্বিতীয় গ্রুপে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে ৯ রানে।

প্রথম ইনিংস শেষে ক্রিকইনফোর জরিপে দেখা যাচ্ছিল, বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা প্রায় ৩৭ শতাংশ। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পর এক মুহূর্তের জন্যও হারের শঙ্কা উঁকি দেয়নি টাইগার শিবিরে। এটা সম্ভব হয়েছে তাসকিনের নৈপুণ্যে। আগুনে বোলিংয়ে ইনিংসের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট শিকার করেন টাইগার পেসার। প্রথমে স্লিপে থাকা ইয়াসির আলীর ক্যাচ বানান বিক্রমাজিৎ সিংকে। এরপর বাস ডি লিডকে কিপার সোহানের ক্যাচ বানান তিনি।
তাসকিন জাদুর পর জোড়া রান আউট। ৮ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ম্যাক্স ও’ডাউড। ডাচ ব্যাটার টম কুপার রান আউট হন কোনো বল না খেলেই, যিনি বড় মুখ করে বাংলাদেশকে হারানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে (১৬) থামান টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দলের ব্যাটারদের দুর্দিনে লড়ে গেছেন কেবল কলিন অ্যাকারম্যান। উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে ৪৮ বলে ৬২ রান করেছেন ৬ চার ও ২ ছক্কায়।

আরেকপ্রান্তে উইকেট পড়েছে নিয়মিত বিরতিতে। টিম প্রিঙ্গল (১) এবং লোগ্যান ফন বিককে (২) আউট করেন হাসান মাহমুদ। তাসকিন নিজের তৃতীয় শিকার বানান শরিজ আহমেদকে (১)। মাঠছাড়া করেন বিপদজ্জনক হয়ে ওঠা অ্যাকারম্যানকে তাসকিন। ম্যাচের শেষ বলে পল ফন মিকেরেনকে আউট করেন সৌম্য সরকার। তাতে ১৩৫ রানে থামে ডাচদের জয়ের স্বপ্ন। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে (৪/২৫) ম্যাচসেরা হয়েছেন তাসকিন।

এর আগে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং নির্ভর একাদশ উপহার দেয় একরাশ হতাশা। আট স্বীকৃত ব্যাটারেও ব্যাটিংয়ে যাত্রাপথের শুরুটা মোটেও মসৃণ ছিল না টাইগারদের। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোরকমে দলের খাতায় জমা করে দেড়শ’র কাছাকাছি সংগ্রহ। অথচ ওপেনিংয়ের গল্পটা ছিল ভিন্ন। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলোচনা-সমালোচনা, বড় মঞ্চে সেই পজিশনটা দারুণভাবে সামলে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর সৌম্য সরকার।

বিশ্বকাপ দলে দুজনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কম কথা ওঠেনি। যদিও ডাচ ম্যাচে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তারা, তবে ভালো শুরুতে নিজেদের মান রাখতে পেরেছেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫ ওভারে ৪৩ রান তুলেন এই যুগল। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারের প্রথম বলে ভাঙে জুটি। ১৪ বলে ১৪ রান করা সৌম্যকে আউট করেন পল ফন মিকেরেন। পরের ওভারে শান্ত’র ব্যাটকে শান্ত করেন টিম প্রিঙ্গল। ২০ বলে ৪ চারে ২৫ রান আসে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে।

দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর ভালো শুরুটাও মলিন হয়ে যায় লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের ব্যর্থতায়। দুজনের কেউ দুই অঙ্কের রান ছুঁতে পারেননি। ১১ বলে খেলে ৯ রান করেন লিটন। সাকিব ৯ বলে করেন ৭ রান। এরপর উইকেটের একপ্রান্তে যাওয়া-আসায় ব্যস্ত ছিল টাইগার ব্যাটাররা। আর অপরপ্রান্তে ঢাল হয়ে দাঁড়ান আফিফ। ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৮ রান করেন এই বাঁহাতি। এটাই দলের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।

আফিফ সাজঘরে ফেরেন ইনিংসের ১৮তম ওভারের শেষ বলে। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ১২৯ রান। ততক্ষণ মাঠ ঘুরে ড্রেসিংরুমে ফিরেন ইয়াসির আলী (৫ বলে ৩) ও নুরুল হাসান সোহান (১৮ বলে ১৩)। শেষ দিকে কার্যকর ছিল মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যাট। বলা যায়, ১২ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রানের ইনিংস খেলে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মান রেখেছেন তিনি। এরপর দুর্দান্ত তাসকিনে অতিপ্রয়োজনীয়, অতিকাঙ্ক্ষিত এবং প্রত্যাশিত জয় ধরা দিয়েছে বিশ্বকাপের শুরুতে।