টুনার প্রেম কাহিনি

টুনার প্রেম কাহিনি
গোলাম রববানী 
লিটুর মেয়ে টুনা বড্ড বেশি পাকা। সংসারে মেয়ে মানুষ পুরুষ মানুষের চেয়ে  বেশি পাকা হলে কাঁচা কাঠের মতো ঘুনে ধরে ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায়। সংসার পুড়ে যায়, মন পুড়ে যায়- গৃহদাহও হয় বটে!
বিশ্বসংসারও তছনছ হয়ে যায়, ছারখার হয়ে যায়, ধ্বংস হয়ে যায়।অরাজকতা পরিস্থিতির নিরসনের বদলে বরং সংসারধর্মে অশান্তির পরিপূর্ণতা পায়।শান্তি চলে যায়। অশান্তিতে উত্তাল সাগরের মতন ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ের দোলায় সব ভাসিয়ে তলিয়ে নিয়ে যায়।ধ্বংসযজ্ঞের হিসেব থাকে না।মেয়ে মানুষ নম্র ভদ্র হলে প্রকৃতিও শান্ত হয়।শান্তি পায় সাথে আনন্দের দোলনায় দুলতে থাকতে বিশ্বচরাচর। 
বলতে কী সে কথা! 
টুনার ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়। যখন টুনা সিক্সে পড়ে তখন থেকেই বাইরাম বাইরাম শুরু করে। ব্যারামে ধরে  প্রেমে পড়ার ব্যারামে! সে নাকি প্রেমে পড়তো না, যৌবনপোড়া প্রেমিকদের বোঝাতে বোঝাতে ব্যাকুল হয়ে যেতো।  বলতো দেখো আমার প্রেম করার বয়স হইনি; আমি সবে বারো তেরো বয়সে হবো আর কী! কিন্তু, সেটাও বলার কি দরকার।পুরুষদের এড়িয়ে  চলাই উত্তম  নায়কি! 
থাক না সে কথা।
 যাকগে!
 মুর্খসূর্খ মেয়েছেলেদের বোঝানো সংসারে বড় দায়!
তবে অতি শিক্ষিত মূর্খভাবিক ছেলেমেয়েদের বোঝানো তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর! তারা যে কি বোঝে না তা-ই বোঝার চেষ্টা করে না।
কিন্তু, এটা না জানার কোনো কথা না। এ দেশের জলবায়ু বেশ অনুকূলে যৌবনবসন্তের বাতাস ছুঁয়ে দেবার জন্যে।হয়তো সে আস্তে আস্তে সাবালিকার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছে বৈকি!  
টুনা চাহনিতে বেশ হালকা পাতলা, শ্যামবর্ণ গায়ে, মুখখানা বাঁশির মতন চ্যাপ্টা,মুখের কথা ছিলো দোয়েল শালিকের মতন, উচ্চতায় আর কতো হবে হয়তো চার ফুট কিংবা সাড়ে চার  ফুট, ওজন আটত্রিশ চল্লিশ কেজি। তার চোখ দুটো ছিলো বিড়ালাক্ষী! মায়াভরা!
টুনা ছোটবেলা থেকেই দেমাকি অহংকারী আর চাপা স্বভাবের। টুনা বিয়ে হয় পারিবারিক আয়োজনের মাধ্যমে৷ এক সম্ভ্রান্ত-নিম্নশ্রেণীর খেটে খাওয়া এক হ্যান্ডসাম যুবকের সাথে। 
টুনার স্বামীর নাম ছিলো রফি।রফি ছেলেটি স্বভাব চরিত্রে মোটামুটি ভালোই ছিলো।বদাভ্যাস তেমন ছিলো না শুধু গাজা মদ আর বিড়ে সিগারেট টানতো। এটা কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরুষ মানুষ একটু নেশা পানি করতেই পারে। বিড়ে সিগারেট টানতেই পারে।এটা ভয়ঙ্কর কিছু না। বড় বড় অফিস আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও যেখানে ধোঁয়া ওড়ায়, লাল পানি পান করে যেখানে খেটা খাওয়া মানুষ একটু বিড়ে সিগারেট টানে সেটা আর কতো দোষেরই বা হবে?
ওটা কোনো দোষের না।যারা দোষের বলে তারা আরো বেশি ভয়ঙ্কর। মাছ মারে পানি ঘোলায় না তেমন কিছু হবে আর কি!
টুনা বড়ই দুর্ভাগা! স্বামীর সংসারের স্বজন পরিজনদের তেমন সহ্য করতে পারতো না।স্বামীকে শাসন শোষণ করতো। 
মেয়ে মানুষ শোষক! 
হায়রে খোদা! খোদা রক্ষা করো ধরা!
 রফি তার বাবা মা ভাই বোনদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবে না।রফি ছিলো পরাধীন। নিজের ঘরে নিজেই সর্ব শান্ত! টুনার কী কপাল! 
সে রাজ করবে! সে অন্য রাজ্যে নিজেই সম্রাজ্ঞী হবে। রাজার ক্ষমতা খর্ব করবে!  ও কোন বেটার বেটি!
রফির রাগ ভান্ডারে উন্মুখ হয়ে গেছে। 
সে তার নিজের মতন কিছু করতে পারবে না।যেটা রফির বড়ই অসহ্য লাগতো।টুনা নামে মেয়েমানুষ কিন্তু পুরুষদের ভাব দেখাতো। ওখানেই টুনা তার কপাল পুড়ালো।
স্বামীর ঘর তার ভাগ্যে জুটলো না।ছেলেটি নাকি শারীরিকভাবে অক্ষম ছিলো। তাই একবার সে স্বামীর বাড়ি গেছে। সে নাকি খুব নেশাখোর ছিলো।তেমন কিছুই আসলে ছিলো না। রফির স্বজনেরা এমনকি টুনার পরিবারের লোকজন দেখেশুনেই বিয়ে দিয়েছিলো টুনাকে।
টুনার ভাই  একটু মাতব্বরি কোয়ালিটির লোক। তার ভাই যেটা  ন্যায্য, যেটা সত্য,  সেটা অকপটে স্বীকার করতো।তার বোন সে রফির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেই।রফি ও টুনার ডিভোর্স হয়ে যায়। টুনার দোষ বেশি সে তার নিজের মতন করতে চাই সব কিছু।কিন্তু, সেটা কী সম্ভব! স্বামীর ঘরে গেলে মেয়েদের একটু মানিয়ে চলতে হয়, একটু ম্যানেজ করে চলতে হয়। 
হায়রে মেয়েমানুষ!  
মেয়েমানুষও সমানাধিকার চাই। এখন সমানাধিকরণের নামে দেখি সব গোলমেলে হয়ে যায়। মেয়েমানুষ বেশি বুঝার কারণে দেখি পুরুষ মানুষের আয়ু কমে যায়। মেয়ে মানুষ বেঁচে থাকে আর পুরুষমানুষ কোথায় চলে যায়। হয়তো ছুটি নিয়ে দূর নীলিমার উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে যায়। আর মিটিমিটি রাতের আকাশে আলো ছড়িয়ে যায়। অন্ধকার রাতে জোনাকির মতো মিটিমিটি আলোর পিদিম হয়ে জ্বলে আর নিভেনিভে যায়।
রফি বেঁচে গেলো ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে বলে। তার কয়েক বছরের মধ্য রফি মারা গেলো। রফি বড্ড বেশি ভালো মানুষ ছিলো। কী এক কঠিন ব্যাধিতে তার ছুটি হয়ে যায়।
কয়েক বছরের মধ্য আবার টুনার বিয়ে হয়। এই বিয়ের মাধ্যমে টুনার জীবনে দ্বিতীয় অধ্যায়ের যাত্রা শুরু করে। কিন্তু, টুনা তার পূর্ব্ববর্ত্তী জীবনের থেকে কিছুই শিক্ষা নিতে পারিনি। শিক্ষা না থাকলে যা হয় আর কি! সর্বোচ্চ শিক্ষালাভ করে যেখানে অনেকে মুর্খের মতন কাজ করেন সেখানে ক্লাস সিক্স সেভেন পাস করে আর কতোটুকুই বা জগত সংসার সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করবে? 
স্ব শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কথা থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সর্বোচ্চ শিক্ষালাভ না করেও অনেকে কতোই না বিচক্ষণ,সহানুভূতিসম্পন্ন,নীতিবান  প্রজ্ঞাবান হন সেটা তৎকালীন ক্লাস টু পাস করা হোসেনের ছেলের দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়।ঠেকতে ঠেকতে বাস্তবতা সম্পর্কে মিলুর জ্ঞান আকাশ ছুঁয়েছে।তিনি ইশারা ইঙ্গিতে অনেক কিছুই বুঝতে পারে।কারো কারো সাথে কথা হলে সে বুঝতে পারে কে কেমন লোক। হয়তো বিধাতা সে জ্ঞান দিয়ে তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। মিলু লোকটি খুবই নির্ভেজাল। সাধাসিধে, সহজ সরল প্রকৃতির। তার মতন লোক বুঝি জগৎ-সংসারে বিরল। হাতে গোনা কিছু ভালো লোক আছে। শতকরা হিসেব করলে হয়তো এক দু'জন মিলবে তার মতন মানুষ।
থাক না এ সমস্ত কথা। এসব কথা বলে আর কি হবে। তৃতীয়বারের মতন যখন টুনার বিয়ে হবে তার আগে টুনা তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। কিছুদিন থেকে টুনা বাড়ি চলে গেলো।এরইমধ্যে টুনার জীবন থেকে কয়েকটি বছর চলে গেছে। পড়াশোনা আর করে না। বলা যায় আন্ডার ম্যাট্রিক পাস। হয়তো টেনেটুনে ক্লাস নাইন পর্যন্ত কোনমতে পড়াশোনা করেছে কিংবা নাইন টেনে রেজিষ্ট্রেশন করে আর পরীক্ষা দেওয়া ভাগ্যে জোটেনি।  কিন্তু, টুনার কাছে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ছেলেমেয়ে ফেল খেয়ে যাবে। টুনার কথার বড্ড ফুটানি। কথা বলা শুরু হলে তার কথায় খৈ ফুটতে থাকতে। যেন মনে হয়ে চুলোর উনোনে কাচামাটির হাড়িতে গরম হওয়া বালিতে ধান ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চটপট করে ফুটতে থাকে তো ফুটতেই থাকে। কে থামায় তাকে। কথা বলতে বলতে তার মুখ দিয়ে থু থু বের হয়ে আসে। সুন্দর ঠোঁট দুটো শুকিয়ে যায়; তবুও কথা বলতেই থাকে। বড্ড ত্যাড়া কোয়ালিটির মেয়ে। রেগে গেলে তো নিস্তার নেই। কে আপন আর কে পর তার কোনো হুশ জ্ঞান থাকে না।
হয়তো খুব ভালো মেয়ে তনুবা তার উলটোপথে হবে।টুনারা পাঁচে বোনে আর সাতে ভাই৷ সবার মধ্যে সেই কেবল রগচটা! পৈতৃকসূত্রে তাদের বিঘে পনের বিশেক জায়গাজমি আছে। কিন্তু, জায়গাজমি থাকলেই তো আর ভাত হয় না। সেখানে পরিশ্রম করে তো ফসল ফলানো লাগে। বাগবাগিচা আছে খারাপ না। ভিটে বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন ধরণের গাছগাছালির আছে।আর আবাদি অনাবাদি জমিও আছে মাঠে। তবে দুঃখ এখানে জমির অধিকাংশ থাকে বিলের পানিতে ডোবানো।তেমন ফসল হয় না। অধিকাংশ জায়গাজমিগুলো হারি দেওয়া। তার থেকে যা হারি পায় তাই দিয়েই তাদের সংসার চলে যায় কোনোমতে। তবুও সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। টুনার অন্য ভাই-বোনদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের ছেলেমেয়েও হয়েছে। ধীরে ধীরে টুনার বাবার জমিগুলো তার সন্তানদের মধ্যে সমান ভাগ্র ভাগ করে দেয়। এদিক থেকে টুনার বাবা সর্বোত্তম কাজটিই করেছে। 
লিটু খুবই নামাজী। ইসলাসের পথে চলে। শান্তির পথে চলে।তিনি যে সন্তানগুলোর জন্ম দিয়েছে তার মধ্যে টুনা হয়েছে ব্যতিক্রমী। টুনা খুব অল্প বয়েসে তার মাকে হারিয়েছে। মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা তার কপালে জুটেনি। তার বয়স যখন এক বছর কি দু বছর হবে তখন টুনা মাতৃহারা হয়েছে।বড় অভাগী, বড়ই দুখী মেয়ে। 
টুনা নাছোড়বান্দা আর একগুঁয়ে স্বভাবের। জেদী আর বদমেজাজি।কোনো জিনিসের প্রতি ঝুঁকলে সেটা নিয়েই ছাড়বে। একবার ইদে তার জ্যেষ্ঠভ্রাতার কাছে ইদের নতুন জামা আবদার করে কিন্তু সংগত কারণে অপরাগত প্রকাশ করে। নতুন পোশাক কিনে দিতে না পারায় সে অভিমান করে এক মাস তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলিনি। বড়ই অভিমানী মেয়ে। 
  
জ্যেষ্ঠভ্রাতা কাউসার বললো, এই ছেমড়ি এই দিকে আয়! ছেমড়ি বলাতে টুনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। টুনি বললো তুই আমার সাথে কথা বলবি নে।আমি তোর কেউ হইনে।খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকার পরে কাউসার বললো বোন আমার তুই রাগ করিস নে আমার উপর। চল বাজারে। তোকে পরবর্তী ইদের জন্য নতুন পোশাক কিনে আনি। একদম তোর পছন্দের। তুই যা পছন্দ করবি তাই তোকে কিনে দেবো।তাতেও তার অভিমান ভাঙছিল না। কিন্তু, বাবা লিটুর অনুরোধে যেতে রাজি হলো।আসলে তাকে রাজি করাতে বাবা লিটুর অনেক কাটখোট্টা পোড়াতে হলো। 
আয় মাগো, আয়। ঘর থেকে বের হ! স্নানঘরে যা। গোসলটোসল সেরে আয়। তুই যা চাস তাই তোকে দেওয়া হবে।
এই নে আমি টাকা দিচ্ছি। এই টাকা নিয়ে যা। আর তোর ভাই দেবেনে। যে মেয়ে না খেয়ে এক ওয়াক্ত থাকতে পারেনা সেই মেয়ে বাবা ভাইয়ের উপর অভিমান করে পুরো একুশ ওয়াক্ত ভাত না খেয়েই কাটিয়ে দেছে। মা আমার দেখার মতন নেই। ওর মা আজ বেঁচে থাকলে নিশ্চিত এ দশ হতো না!
অনেক বলে কয়ে তাকে  রাজি করিয়ে বাজার থেকে সে নতুন দুই তিনটা  থ্রিপিস কিনে এনে দর্জিবাড়ি থেকে বানিয়ে নিয়ে আসলো। 
কিছুদিন পরে ইদ। সে ইদের পোশাকগুলো নিয়ে অঝরে অশ্রু ভাসিয়ে গেলো একা একা।
টুনার মায়ের কথা মনে করে মনের মাঝে এক আকাশ মেঘ জমিয়ে অঝোরে শ্রাবণের বারি ঝরাতে থাকলো।সেটা কাকপক্ষী আর অন্তর্যামী ছাড়া আর কেউ বুঝিলো না তার ব্যথা তার জ্বালা যন্ত্রণা! 
মা তাকে ফাঁকি দিয়ে অনেক আগেই দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে গেছে। মা ছাড়া যে  ভীষণ একলা লাগে টুনা ছাড়া বুঝি আর কেহ বুঝিল না ; তাহার যন্ত্রণা!  টুনি তার মাকে বড্ড বেশি মিস করছে। শুয়ে শুয়ে কাঁদছে তো কাঁদছে।কিন্তু, সে তার বাবা লিটুর চোখ ফাঁকি দিতে পারলো।
ইদের দিন সকাল সকাল উঠলো টুনা। ইদ পূর্ববর্তী রাত্রে সে হাতে পায়ে মেহেদীতে সাজিয়ে নিলো তার পাড়ার একভাবীর কাছ থেকে।লাল টুকটুকে মেয়েটিকে যেন একদম পরীর মতন লাগছে।ভাবী শিলা তাকে বললো তোর রূপের আগুনে যেন আবার কেউ না পুড়ে যায়! টুনা মনে মনে কিছুটা আঘাত পেলো সেটা আর তার ভাবীকে বুঝতে দিলো না। কারণ সে দু চার ইতিমধ্যে মেরে এসেছে। কোথাও স্থায়ীভাবে স্বামীর ঘর করতে পারিনি। ইদের দিন স্নান শেষে সেজেগুজে বসে আছে। লিটু বললো খেয়েদেয়ে তোর বড় বোনের বাড়ি যা। বড় বোনের ঘরসংসার সামলাতে হবে বিধায় বাবা বাড়ি ইদ করতে আসা হয়নি। বরং উল্টো বোনজামাই তাদের নেমন্তন্ন করে গেছে। 
বাবার লিটুর কথা মতো টুনা তার বড় আপার বাড়িতে গেছে। সেখানে অনেকদিন ধরে আছে।ইতিমধ্যেই অনেক ছেলের নজরে পড়ে গেছে।সুন্দরী মেয়ে হলে আর যা হয়! 
সুন্দরী মেয়ে হলেই তো  আর চরিত্র সুন্দর হয় না। সুন্দর মনের হয়না। সুন্দর স্বভাবের হয়না।ফুলের মতন পবিত্র হয়না।মা হারা মেয়েটি তিন চার ঘর করে আসার পর কিছুটা বিগড়ে গেছে।যারে পায় তার সাথেই যেন ভাব জমিয়ে ফেলে। ক্যারেক্টার লুস কোয়ালিটির! 
মেয়ে মানুষদের একটু হিসেব করে চলতে হয়। তা না হলে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই কুনজর দেয়।ষোড়শী ভরা যৌবন আর টলটলে রসালো হলে তো কোন কথায় নেই!যে পথে হেঁটে যায় মনে হয় যেন নদীতে জোয়ার উঠেছে।দুকূল ছাপিয়ে প্লাবিত হচ্ছে, উপচে পড়ছে যৌবনের জল! তারই হাওয়ায় যুবকদের কেউ কেউ দোদুল্যমান দুলছে। দেখে য্যানো ফিদা হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখেশুনে টুনা খুবই মজা লুটছে।
মেয়েমানুষের পিছে পুরুষলোক ঘুরলে মেয়েমানুষ আলাদা সুখ পায়, আনন্দে উদ্বেলিত হয়।
যাহোক ইতিমধ্যে বড় বোনের গ্রামের এক ভদ্রমহিলা টুনাকে তার ছেলের জন্য মনে মনে পছন্দ করে ফেললো।পারিবারিকভাবে জানাশোনা হলো।টুনার অতীত জানা সত্ত্বেও ছেলের পরিবার মেয়েটিকে পছন্দ করলো। 
প্রাথমিকভাবে মেয়ের বড় বোনজামাই পছন্দ করতে চাইনি।তার ইচ্ছে ছিলো শ্যালিকাকে একটা চাকুরিজীবী ছেলের সাথে বিয়ে দেবে।টুনার বোনজামাই ব্যাংকার। টুনা এতোটা শিক্ষিত না হলেও কি হবে সে খুবই সুন্দরী।  মেয়েরা সুন্দরী হলে সাত খুন মাফ! 
সুন্দরী হলে চরিত্র সুন্দর না হলেও চলে! শুভ্র ফাঁলিফাঁলি মেঘের মতন উড়ে উড়ে চলে কিংবা পেজা তুলোর মতন উড়ে চলে আজকালকার সুন্দরী মেয়েসহ তাদের পরিবার! খুঁজতে থাকে সরকারি চাকুরিজীবী ছেলে। অথচ, সুদর্শন ছেলেরা বেকার হলেও সুন্দরী মেয়েতো জোটে না আর সুন্দর ফ্যামিলির কথা নাইবা বললাম।সুন্দরী মেয়ে টুনা চারঘর ছেড়েছে। তাতে কী! টুনা যেমন রূপসী তেমন বুদ্ধিমতী! দশ ঘর মারলেও আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই পছন্দ করবে।টুনা যেমন গায়ে গতরে তেমন গঠনে গাঠনে নাদুসনুদুস যেন কচি লাউয়েরডগা! ভালো একটা ফ্যামিলি তাকেই ঘরের বৌমা করতে চাই। কোনপ্রকার বিলম্ব না করে চটজলদি ছেলের পরিবারের কিছু আত্মীয়স্বজন নিয়ে সোজা কাজী অফিসে গিয়ে টুনাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। ছেলের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হলো না। মেয়ের বাড়িতেও না। 
আজব! আজব পৃথিবীর কতো আজব কেলেঙ্কারিই না সাথী হয়ে চলে নিত্যনৈমিত্তিক খেলা হয়ে খেলাঘরে। সংসারে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, ধর্মেকর্মে, বর্ণ-গোত্রে, অঙ্গে, মননে। মনে কতো কিছুই না খেলা চলে; সজ্ঞানে অজ্ঞানে অথবা দেখো সচেতনে,অসচেতনে ,অবচেতনের সমন্বয়ে করে।তেমনি টুনার জীবনে বিচিত্র টানাপোড়েনে চলতে শুরু করে।প্রাথমিকভাবে টুনা যখন মধ্যবিত্ত পরিবারে নববধূবেশে আসে তখন দেখে কেউ ভাবতে পারিনি টুনা কেমন প্রকৃতির মেয়ে।যাই হোক একটি গল্প শহিদুল ইসলাম  সেদিন সন্ধ্যাবেলায় সিগারেট টানতে টানতে অনুকে বললো শোন তোকে একটি গল্প বলি। অনু অধীর আগ্রহে বললো, বলেন কি বলবেন। 
তুই কি জানিস সাখাওত গতকাল কি করেছে?
অনু বললো, কি করেছে জামাই? আমি জানি না তো। 
কেন কি করেছে? শোন তাহলে তোকে বলি।
শহিদুল তখন সিগারেটের ধোঁয়া ফুঁকিয়ে  ফুঁকিয়ে বলছিলো সে বিয়ে করে নূতন বৌ ঘরে এনেছে। 
শুনে অনু বললো খুব ভালো করেছে। 
তো সাখাওত কবে ঢাকা থেকে এলো?
 ও তো ওখানে একটা চাকরি করে। শহিদুল বললো গতকাল নাইটে এসে সকালেই গেছিল বিয়ে করতে। তখন ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিলো। পরিবারের বাইরে আর কাউকে জানাইনি বিষয়টি। 
অনু বললো তাই না-কি!  বেশ ভালো করেছে।  লোকের অতো জানিয়ে শুনিয়ে আর কী হবে! যা করেছে বেশ ভালোই করেছে, অনু বললো।আজকাল মানুষের খাইয়েদাইয়ে মন পাওয়া বড়-ই মুশকিল! দিল কেটে খাওয়ালেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।আয়োজন করে খাওয়ালে সুনামের চেয়ে বদনামি বেশি হয়। গ্রামাঞ্চল বলে কথা। গ্রামে যে সব মূর্খের চলাচল, সব নেমকহারাম! অবশ্য সব মূর্খ-ই খারাপ না, কেউ কেউ ভালো আছে। দু এক জন আর ধরার মধ্যে পড়ে না।শিক্ষিতেরা ছোট-বড় কোনো চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলে গ্রামকে ছুটি দিয়ে শহুরের পানে ছোটে।আর না ছুটে ই বা উপায় কি! অজপাড়াগাঁ গ্রামের মানুষেরা ভালোর চেয়ে খারাপই হয় বেশি।এদের বড় হিংসা,বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা ধরে বেশি।কেউ কেউ ভালো চললে,ভালো পরলে,ভালো খেলে,ভালো পরিবেশের সংস্পর্শে আসলে,ভালো লেখাপড়া শিখলে অযোগ্যদের গায়ে-শরীরের চিতার অনলে জ্বলেপুড়ে মরে। জায়গাজমি আর টাকা-পয়সা থাকলে উপায় নেই!টাকা-পয়সা, অর্থবিত্ত থাকলেই কিন্তু ছেলেমেয়েদের মানুষ করা যায় না। ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে হলে ভালো মন লাগে।টাকা-পয়সা খরচ পাতি করার মন-মানসিকতা লাগে।আসলে ঐ সব মূর্খদের দৃষ্টিভঙ্গি সেকেলের।তারা ভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে হবে কি! লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত হতে না পারলে জাতি অনেক পিছিয়ে পড়ে সেটা তারা বুঝতে চাই না। তারা শুধু শুধু মরে লেখাপড়া শিখিয়ে সন্তানদের সরকারি চাকুরী করতে হবে।লেখাপড়া মানেই কি শুধু চাকরি? তারা বোঝে ফাঁসাফুঁসো খুঁজতে আর কাটি করতে, ঠ্যাসঠোস মারতে। শিক্ষার মূল্যায়ন-ই তারা বোঝে না। বরং সব নাছোড়বান্দার মতন 
শিক্ষিতদের কোনপ্রকার মূল্যায়ন-ই করে না।
তারা সত্যিকারের মানুষ হবে কবে? 
জোঁকের মতন তারা শুধু রক্তপায়ী। তারা ধরলে পরে রক্ত খেয়েই ছাড়ে।অনু ক্ষুব্ধ হয়ে কথাগুলো বলছিলো তার জামাইয়ের সাথে। শহিদুল অল্পস্বল্প সাই পুরছিলো অনুর কথায়।
 শহিদুল একবার অনুকে বললো, "তুমি এখানে শিক্ষা প্রসঙ্গ টানলে কেন?"
অনুও প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো, টাইম উইল ছে! থাক না সেসব কথা। ইউ ক্যান নট আন্ডারস্ট্যান্ড দিস মিনিং।আসলে সাখাওত শিক্ষার  প্রকৃত ডেফিনেশনটাই বোঝে না।তাকে বলেও বা কী লাভ। থাক না সে সব কথা
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
সাখাওত যে বউটা বিয়ে করে এনেছিলো তাদের ফ্যামিলি না-কি বড়ই বংশীয় ছিলো। তাদের এলাকায় তাদের বেশ একটা ডাক সুনাম আছে।বউটাও নাকি খুব লক্ষ্মী ছিলো। কিন্তু, একটা অঘটন ঘটে গেছে। অনু তখন তার জামাইকে বললো, কি অঘটন ঘটেছে?
শহিদুল ইসলাম অনুকে বলল, সাখাওত বিয়ের রাতেই নতুন বউকে ঘরে রেখে ঢাকায় চলে গেছে।
তাদের বাসর হয়নি। নতুন বউ সারারাত জেগে জেগে কাটিয়েছে। অথচ ফ্যামিলির কেউ বিষয়টি জানে না। সকালে নতুন বউকে হোসনে আরা জিজ্ঞাসা করে সাখাওত কোথায়? টুনা তার শাশুড়ীর কথায় উত্তর দিতে পারলো না। সে বললো আমি জানি না।রাতে আপনার ছেলে বাসায় ফিরি নি। টুনা খুব ভোরে স্নানঘরে গিয়ে স্নান সেরে ভেজা পোশাকগুলো বাইরের টাঙানো দড়িতে শুকাতে দেছে। লোকে ভাবছে তাদের বাসর হয়েছে। আসলে তেমন কিছু তাদের মধ্যে হয়নি।
বেলা গড়িয়ে দুপুর হলো, দুপুর গড়িয়ে বিকাল তবুও সাখাওতের কোন খোঁজখবর নেই। সন্ধ্যার পর  সাখাওয়াত টুনার কাছে ফোন করে বললো আমি ঢাকায় চলে এসেছি। পাশেই সাখাওতের মা ছিলো। নতুন বউকে শ্বাশুড়ি বললো, দেখি মা ফোনটা। টুনা তার শ্বাশুড়ি মাকে ফোন্টা দিলো।তখন সাখাওতের মা বললো, বাবা তুই কি করলি এটা! 
খুব বাড়াবাড়ি করে ফেললি না! সে কোনো কথা না বলে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পরে বললো,ক্যান কি হয়েছে? 
তার মা তাকে বললো, তুই বুঝতে পারছিস না, কি হয়েছে? বাড়ি চলে আয়! সে তো নাছোড়বান্দা!  কোনোভাবেই বাড়ি আসতে চাচ্ছিলো না।অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করালো। সে পরের দিন বাড়ি আসলো।
এসে দেখে বাড়ির সবারই মন খারাপ। য্যানো কালোমেঘ জমেছে পরিবারের আকাশে! ঝপাৎ করে অঝোরে বৃষ্টি নামবে। কেউ আর সাখাওতকে তেমন কিছু বললো না।
রাতে খেয়েদেয়ে নতুন বউকে নিয়ে ঘরে গেলো সাখাওত। টুনা বললো, তুমি না বলে কয়ে কি কাজটি করলে? 
সাখাওত খুবই বদমেজাজি। কয় তোকে কি কৈফিয়ত দিতে হবে। আমার অভিরুচি আমার যেটা ভালো লাগে সেটা করবো।আমার ইচ্ছে আমার খুশি।কি করবো আর কি করবো না সেটা আমার ব্যাপার। তুই আমার ব্যাপারে নাক গলাবি না।
টুনাও বেশ জাদরেল!  সেও ছাড়ার বান্দা নয়। বড়ই রুক্ষ বিক্ষিপ্ত আর বদমেজাজী। বললো আমি তোমার বিয়ে করা বউ আমাকে কৈফিয়ত তো তোমাকে দিতেই হবে। দু একটা কথায় তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়াঝাটি হলো; এমনকি হাতাহাতিও হয়ে গেলো। বিয়ের পরের দিন থেকে যে তাদের মধ্য যে মনোমালিন্য শুরু হলো তা আজও চলছে।
পরের দিন নতুন বউ কিছু না বলে গোপনে তার ভাইদের কাছে ফোন করলো। টুনার বাপের বাড়ি থেকে তাকে নিতে এলো। অথচ, পরিবারের অন্য সদস্যরা কিছুই জানতে পারলো না। আসলে তাদের মধ্যে কি হয়েছে। টুনা তার ভাইয়ের সাথে বাপের বাড়ি চলে গেলো। 
সাখাওত তার বাবা সোলাইমানকে বললো বাবা আপনি যেয়ে আপনার  বৌমা কে বাড়িতে নিয়ে আসুন। সোলাইমান তার ছেলের উপর ক্ষেপে আছে।  সে সোজা জানিয়ে দিলো আমি যেতে পারবো না। তোর বউ তুই যেয়ে নিয়ে আয়।তুই আমার মানসম্মান কিছুই রাখলি না। সমাজের কাছে আমার একটা ইজ্জত আছে। আমি যেতে পারবো না। হোসনে আরার অনুনয় বিনয় করলে যেতে রাজি হলো। সে এবারের মতো না হয় এনে দিবে তবে কিছু শর্ত আছে। ভবিষ্যতে এ-ধরনের কাণ্ড ঘটালে আর কিন্তু এর মধ্যে জড়াবে না সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলো। পরের দিন সোলাইমান গিয়ে তার বৌমা কে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে বাড়িতে নিয়ে এলো। 
দুই একদিন যাবার পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে গেলো। বউ আর থাকতে চাই না। তার শাশুড়ীকে বললো আমি বাপের বাড়ি যাবো।কিন্তু, কি হয়েছে সেটা আর বললো না। তবে বিষয়টি বুঝতে আর বাকি থাকলো না।মেয়ে মানুষের বাপ মা জন্ম দিতে পারলে বাড়িতে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতেও পারে।বিয়ে দিলে মেয়েরা শুধু শ্বশুরবাড়ি খেতে আর পরতে আসে না। এমনকি শুধু শুধু ঝিয়ের কাজও করতে আসে না।বিশেষত ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয় তাদের শারীরিক মানসিক উভয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য। নতুন বৌয়ের শারীরিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম ছিলো সাখাওত। যে কারণে টুনা তার বাড়িতে থাকতে চাই না। কিন্তু, না থেকে আর উপায় কী! আগে যে চার ঘর ছেড়ে এসেছে! এবারো যদি ডিভোর্স দিয়ে চলে যায় তাহলে মেয়ের পরিবারের ইজ্জত যাবে। যে দিক বিবেচনা করে টুনা বুকে পাষাণ দিয়ে সাখাওতের ঘর করতে থাকে। 
সাখাওত চাকরিক্ষেত্র থেকে এক সপ্তাহ ছুটি নিয়েছিলো। ছুটি বাকি আছে আর মাত্র একদিন। রাতেই তাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। পরের দিন অফিসে ডিউটি আছে। সাখাওত ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। 
তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই তার বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বাড়িতে আসে। সোলাইমান চলে যাওয়াতে শোকসন্তপ্ত পরিবার অসাড় হয়ে পড়ে! শোকের ছাড়া নেমে আসে পরিবারে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জায়গা জমি ভাগাভাগি হয়ে যায় ভাইবোনের মধ্যে। সাখাওত পৈতৃকসূত্রে বিঘে দশেক জমি পেয়েছিলো। কিন্তু,পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সে জায়গা জমি সব খুইয়েছিল। নিজের চিকিৎসাসহ আরো অন্যান্য কারণে ভিটেমাটি ধ্বংস করে ফেলছিলো লোক মুখে শোনা যায়।আসলে অন্য কোনো কারণ ছিলো। সাখাওত ছাড়া তা অন্য কেউ জানতো না পরিবারের।
সাখাওত চুরি করে করে অল্প দামে জমি বিক্রি করে দিতো।তার মা  জানতে চাইলে সে তার মাকে অকথ্য গালিগালাজ আর বেদম প্রহার করতো। যাইহোক এভাবে সাখাওত সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলে। শেষমেশ টিকিয়ে রাখতে পারিনি তার ভিটেমাটিও। 
টুনা এসব কর্মকাণ্ড সহ্য করে গেছে নিরবে। সে কিছু বললেও তার স্বামী তাকে মারধর করতো।
কোন এক কারণে সাখাওত চাকরিচ্যুত হয়েছিলো। ফলে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু লাভবান হতে পারিনি।
এদিকে টুনার পরিবারের অভাবনীয় অভাব অনটন শুরু হলো। তাদের বিয়ের পনের ষোল বছর পার হলেও কোন সন্তানের মুখ দেখতে পাচ্ছিল না। ফলে দেশ-বিদেশের অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে আলোর মুখ দেখে। এক সাথে দুটো বেবি আসে। কিছুটা অশান্তি ঘুচলেও দুঃখের কমতি ছিলো না।
তাই একদিন টুনা সাখাওতকে বললো- ' তুমি বিদেশ চলে যাও।"
সাখাওত বললো টাকা পয়সা পাবো কোথায়?  টুনা বললো তোমার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে কিছু নাও। আর আমি আমার বাপের বাড়ি থেকে এনে দেবো। 
একসময় সাখাওত রাজি হয়। টাকাও ম্যানেজ হয়। সে পরিচিত ভালো আদম ব্যবসায়ী ধরে বিদেশ চলে যায়। বিদেশ যাওয়ার পর সাখাওত বছর দশেক ভালো যোগাযোগ রেখেছিলো টুনার সাথে। কিন্তু, ভিনদেশী মেয়েছেলের খপ্পরে পড়ে সাখাওত সেখানে বিয়ে করে। টাকা পয়সা দেওয়া বন্ধ করে দেয় সাখাওত দেশের স্ত্রীর কাছে। এক সময় পুরোপুরি যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। দুই সন্তান নিয়ে টুনা যতোটা যন্ত্রণায় নেই ; তারচেয়ে বেশি যন্ত্রণায় পাড়া মহল্লার মুরব্বিসহ যুবক ছেলেদের অতিষ্ঠে।
সংসারসহ দুই ছেলেমেয়ে মানুষ করতে টুনা সংগ্রাম করছে। তাছাড়া অন্যান্য সদস্য তো পরিবারে আছে।
টুনার চেহারায় এখনো চাঁদের আলোর ঝলকানি দেয়! তেমনি অনুও! সম্পর্কে পাড়াতো খালাতো ভাই হয়৷বহুদিন থেকে আসা যাওয়া সাখাওতদের বাড়িতে। টুনা ও অনুর মধ্যে ভালো ভাব।চাঁদেরও কলঙ্ক আছে; টুনার হলে ক্ষতি কিসে!