তিন মুসাফির (প্রথমাংশ

তিন মুসাফির (প্রথমাংশ

কাওছার অনল 

হাটছিলো পথ তিনজন লোক তপ্তমরুর বুকে

এমন সময় মরুর প্রলয় দিলো যেন পথ রুখে,

আসমান জুড়ে ধূলিমেঘ ওড়ে ভীষণ মৃত্যুভয়

এক সমুদয় পাহাড়ি গুহায় নিলো তারা আশ্রয়। 

ভয় ভরা বুকে! সরু গুহামুখে বাতাসের ঝাপটায়

পাহাড় গড়িয়ে আটকালো এক কঙ্কর অতিকায়। 

গুহার ভেতর তিন মুসাফির বাইরে ভীষণ ঝড়

এমন কঠিন বিপদের দিন আসেনি জীবনভর। 

যত যায় ক্ষণ ফুরাচ্ছে দম বাতাস ঢোকে না নীড়ে 

নড়ে না পাথর ক্লান্ত গতর চেষ্টারা বৃথা ফেরে।

তিন মুসাফির ভাবছে গভীর জীবনের বুঝি শেষ

'শোন শোন শোন পথ নেই কোন' নিজেদের দেয় শ্লেষ। 

বসে অনাহারে মৃত্যুর দ্বারে মুসাফির বলে শোন

মহান ভীষণ আছে একজন বাঁচাতে পারে এখনো। 

জীবনের যেই ভালো কাজ সেই উছিলায় তার কাছে

কেউ যদি চায় তার আশ্রয় ফিরবে না খালি হাতে। 

হাত তুলে ধীর এক মুসাফির ডাক দিলো- দয়াময়,

রক্ষক তুমি অন্তর্যামী; হীন আমি অতিশয়।

আছে পরিবার বাপ মা আমার চলতে পারে না ঠিক

আমি যে রাখাল ছাগলের পাল চড়াই দিক বিদিক।  

দিনশেষে ততো দুধ পাই যত খাওয়াই তাদের আগে

তারপর খাই আমরা সবাই যদি কিছু বাচে ভাগে। 

একদিন ঠিক সন্ধ্যার দিক দুধ দিতে গিয়ে ঘরে

বাপ মা সেথায় বিভোর ঘুমায়, দেখেছি নয়ন ভরে। 

থেকেছি দাঁড়িয়ে তাদের শিয়রে দুধের গেলাস হাতে

চাইনি তাদের এমন স্বাদের ঘুম ভেঙে যাক রাতে। 

সারাদিন খেটে ক্ষুধা নিয়ে পেটে খাইনি এক ফোটাও  

ঘুম ঘুম চোখে জেগেছি অসুখে; তাও যদি খুশি হও! 

ভালোবাসো যদি সেদিনের ব্রতী সাড়া দাও দয়াময়

বিপদের দিনে তোমার চরণে দাও প্রভু আশ্রয়। 

চেয়ে দেখে হেসে মোনাজাত শেষে পাথর গিয়েছে সরে

ক্লান্ত অধীর তিন মুসাফির শ্বাস নিলো বুক ভরে।