তাহমিনা চৌধুরীর নাড়ির টান এর কাব্য বিশ্লেষন 

তাহমিনা চৌধুরীর নাড়ির টান এর কাব্য বিশ্লেষন 

মোহাম্মদ আলী 

প্রিয় বন্ধু --

তুমি কি এই ঈদে আমার প্রিয় জন্মভূমিতে যাবে?

যেথায়—

আমার মায়ের পায়ের পদধূলি আছে, আছে বাবার টেবিলে রাখা আগেকার দিনের দোয়াত কলম, আছে দুই ঘরের মাঝখানে রশ্মিতে বড় ভাইয়ের পাঞ্জাবি টাঙ্গানো—

খোঁজ নিতে পারবে, প্রতিবেশী সালাউদ্দিন, আব্দুর রহমান এবং মালেকা বেগমের,,,

আমার সেইসব পরিজনদের পরশ এনে, উপহার স্বরূপ আমাকে একটু দেবে।

প্রিয় বন্ধু--

তুমি কি সেই মাতৃভূমি (শান্তি নগর) বেড়াতে যাবে?

যেথায়—

আমাদের কাজলা পুকুর আছে, আছে তার সুমিষ্ট সাদা জল। যে জল নিতে আশেপাশের কত-শত মানুষ আসতো। যে পুকুর সকলের তৃষ্ণা মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত। শুনেছি; আজ কাজলা পুকুরের চারিদিকে কত্তো দোকানপাট। কত-শত বসতভিটে, সে কাজলা পুকুরের একটু জল এনে, উপহার স্বরূপ আমাকে দেবে!

প্রিয় বন্ধু --

তুমি কি রূপসী বাংলার রূপরঙ দর্শনে যাবে?

যেথায়—

আঁকা বাঁকা মেঠো পথ, পাহাড়ি ঝর্না ধারার প্রবাহিত স্রোত। পাখপাখালির কলতান— শিউলি, টগর, বকুল এখানে ওখানে কুঁড়ে থাকে কচুরিপানার ফুল—কৃষক ভাইদের ঠোঁটে সহজ সরল গাল ভরা হাসি—সেই হাসিটুকু এনে, আমার কাছে পৌঁছে দেবে। 

প্রিয় বন্ধু--

তুমি কি সেই কৃষ্ণচূড়া বেষ্টনী সবুজ গাঁয়ে পদার্পন করবে?

যেথায়—

রাখাল ভাইয়ের হাতে বাঁশের বাঁশরী। ইজল গাছের ছায়াতলে ভরদুপুরে আপন মহিমায় বাঁশি বাজিয়ে উদ্বেলিত করে তুলতো। সেই রাখালের বাঁশির সুরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পথ হারিয়ে ডালে ডালে আশ্রয় নিতো— দোয়েল, কোয়েল, কোকিল, সারস, টিয়ে সহ নাম না জানা আরও কতো পাখি—সেই পাখিদের মিউমিউ সুর, পাখির পালক এনে, আমায় কি দেবে নিরবে! 

প্রিয় বন্ধু --

মাঝে মাঝে স্মৃতি গুলো বুকের পাঁজরে জেগে উঠে, আঁতকে উঠে সারা শরীর—

আমার মাতৃভূমির গান,আমার আদর্শলিপিতে গচ্ছিত প্রাণ। আমার শৈশব, আমার কৈশোর, পথে পথে ঝাউবন, কলমিলতার ফুল, দূরান্ত হতে কানে ভেসে আসে, জারি সারি ভাটিয়ালি গান —সন্ধ্যা শেষে উঠানে উঠানে জনপ্রিয় সেই বেহুলা লক্ষিন্দরের কিচ্ছা কাহিনী —

সবই যেনো আঁখি কোণে ভাসে— 

দিবারাত্রি কুরে কুরে নিরবে নিভৃতে কাঁদায়। স্বপ্ন তখনই ভাঙ্গে যখন দু-চোখ বেয়ে নোনা জল ঠোঁটে এসে স্পর্শ করে।

প্রিয় বন্ধু—প্রিয় বন্ধু আমার----

আমার মায়ের পদধূলি,,রশ্মিতে টাঙানো ভাইয়ের পাঞ্জাবি—বাবার দোয়াত কলম, কাজলা পুকুরের পরিচ্ছন্ন জল, রূপসী বাংলার শত-শত রূপরঙ, রাখালের হাতে বাঁশের বাঁশরী, চারিপাশে প্রথম প্রহর থেকে নিশি অব্দি পাখপাখলির গুঞ্জন—

সবই যেনো আমার এই হৃদয়ের ব্যাকুলতা,,,এ যেনো জন্মজন্মান্তর থেকে সৃষ্ট "নাড়ির টান"—মানুষ আর প্রকৃতির সাথে নিবিড় বন্ধন।

আমার সেই বন্ধনের, সেই নাড়ির টানের কিছুটা ধুলাবালি, একটা মাদুলিতে ভরে আমায় এনে দেবে?