প্রকৃত শূরায়ী নেজাম অনুসরণ না করায় বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে এত বিশৃঙ্খলা

প্রকৃত শূরায়ী নেজাম অনুসরণ না করায় বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে এত বিশৃঙ্খলা

মুখলিছুর রাহমান

আমার সামাজিক বোধ শক্তি হওয়ার পর প্রথম পরিচয়  হাফিজ্জী হুজুর রহ.'র নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলনের সাথে। আমাদের উস্তাদগণ ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। আমরা ছিলাম বট গাছের ক্যনভাসার। নিজ হাতে বট গাছের ছবি আর্ট করে বাজারের অলিতে- গলিতে, গ্রামের মেঠোপথে গাছের ডালে ডালে পোস্টার লাগানো আর ঘরে ঘরে মা-বোন, ভাই-বেরাদর ও দাদা-চাচার কাছে ভোট চাওয়া ছিল আমাদের কাজ। দীর্ঘ দিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা ইসলামী দলগুলোর হাফিজ্জী হুজুরের হাত ধরে রাজনৈতিক মঞ্চে পুণরুত্থান ধর্মপ্রাণ জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আশাবাদের সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু খেলাফত আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শূরায়ী নেজামের বদলে হাতমী ফায়সালা সম্ভাবনাময় এ বিপ্লবী আন্দোলনকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়।

জমিয়ত আগেই নিজেদেরকে পূণর্গঠিত করে আপন কক্ষপথে হাটা শুরু করে। ব্রাকেট বন্দী খেলাফত আন্দোনল কিছু দিন দুই মেরুতে চলে ১৯৮৭ সালে ইসলামী শানতন্ত্র আন্দোলন নামের ঐক্য মোর্চা গড়ে স্বৈরাচার বিরোধী শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করে। এখানেও ব্যত্যয় ঘটে সেই হাতমী ফায়সালার কারণে। চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব রহ. তাঁর ভক্ত-মুরীদান নিয়ে রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকেন। অধুনা ইসলামী আন্দোলন নামধারণ করে এককেন্দ্রিক নেতৃত্বে বেশ ভালোই চলছে দলটি।
শায়খুল হাদীস রহ.'র নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলন, অধ্যক্ষ মাসউদ খানের নেতৃত্বাধীন খেলাফতে রব্বানী পার্টি ও অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী যুব শিবির মিলে ওলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবিদের সমন্বয়ে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর দলটি সারা দেশে ওলামা ও আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে নতুন আশার জন্ম দেয়। শূরায়ী নেজামের শক্ত অনুশীলনের মাধ্যমে দলটি সারা দেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর উষালগ্নে দলটিতে শূরায়ী নেজামের বদলে হাতমী ফায়সালার পদ্ধতি অনুসরণ ভাঙ্গন নিশ্চিত করে।
২০১২ সালে হেফাজতে ইসলাম গঠন এবং পরবর্তীতে হেফাজতের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় হাতমী ফায়সালা পদ্ধতি অরাজনৈতিক এই গণ আন্দোলনকে প্রাণহীন করে তুলে। শাপলা ট্রাজেডি থেকে নিয়ে পরবর্তী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগঠনটির মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতার মূল কারণ শূরায়ী নেজামের অনুপস্থিতি।

আসি অরাজনৈতিক শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা সমূহ পরিচালনার নেজামের কথায়। এক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে হাতমী ফায়সালা পদ্ধতির অনুসরণ এ সেক্টরকে সমন্বয়হীন ও বিশৃঙ্খল করে রেখেছে। শিক্ষা বোর্ডকে রাজনৈতিক দলের আদলে পরিচালনা, মাদরাসাসমূহকে মুহতামিম সাহেবানের খেয়াল-খুশি মতো পরিচালনা এবং কোন সুবিন্যস্থ নিয়ম- বিধি কিংবা সার্ভিস রুল প্রণয়ন না করে ইচ্ছেমতো পরিচালনা আজ সর্ব ক্ষেত্রে ব্যাপক অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে।

এ অবস্থার উত্তরণ আবশ্যক। এরকম চলতে থাকলে বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে সর্বদা হতাশাজনক পরিস্থি লেগেই থাকবে। কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসারী দাবীদারদের কাছে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত শূরায়ী পদ্ধতি যুগ যুগ ধরে অবহেলিত থাকলে আমাদের ললাটে সর্বদা দুর্ভোগ-দু:সংবাদ ও হতাশাজনক চিত্র লেখাই থাকবে। দয়া করে আকাবীর-আসাগির সকলেই একটু সচেতন হোন। আল্লাহ আমাদেরকে সুমতি দিন। আমীন।