”প্রতিশ্রুতি (ছোট গল্প )

”প্রতিশ্রুতি (ছোট গল্প )


        শাহারা খান 
      
        সরিফার বিয়ে হয়েছিল মধ্যবিত্ত ছোট পরিবারে।শাশুড়ী,স্বামী আর এক দেবর এই তিনজনের সংসার।দেবর প্রবাসে থাকে।পরপর তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় সরিফার ঘরে।এই নিয়ে শাশুড়ী এবং স্বামীর মধ্যে খুব আক্ষেপ ছিলো।বংশের বাতি জ্বালানোর কেউ নাই।পুত্র সন্তান জন্ম না হওয়ায় শাশুড়ী প্রায় সময় খুঁচিয়ে খুচিয়ে কথা বলতেন।ছেলেকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্যও মাঝে মাঝে পীড়াপীড়ি করতেন।অন্তর দার্হে সরিফা শুধু আল্লাহর কাছে কাঁদতো।
                 হঠাৎ করে রোড এক্সিডেন্টে সরিফার স্বামী পরপারে পাড়ি দিলো।ভাইয়ের অবর্তমানে সম্পত্তি রক্ষার্থে দেবর মতিন দেশে চলে এলো।এসেই সমস্হ সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিলো।ধুমধাম করে বিয়ে করলো।বিধবা সরিফা তিনটি কন্যা সন্তান নিয়ে স্বামী গৃহে দাসীর মতো জীবন কাটাতে লাগলো।সে বাপের বাড়ি চলে গেলে যেন সবাই বাঁচে।কিন্তু সরিফা মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে,স্বামী গৃহে মানবেতর জীবন কাটাতে লাগলো।বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্হাও স্বচ্ছল নয়।
           তারপর শাশুড়ী একদিন পরপারে চলে গেলেন।দেবর জায়ের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে,গ্রাম্য মুরব্বিদের সহায়তায় সরিফা আলাদা হলো।আলাদা হলেও তাকে সম্পত্তির কোন অংশ দেয়নি দেবর মতিন।উল্টো স্বামীর প্রবাসের রোজগারের টাকা খেয়েছে বলে জা সবসময় খোটা দেয়।
         সরিফা অনেক কষ্টে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছে।বড় দুই মেয়ে প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করছে।মোটামুটি তাদের ভালোই চলছে।বড় মেয়ের বিয়ের জন্য এবার সরিফার চিন্তার উদয় হয়।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে,ছেলের মতো যেন একটা জামাই আল্লাহ মিলিয়ে দেন।
                 কোন এক নির্দিষ্ট দিনে বড় মেয়ে রোকেয়ার বিয়ে হয়ে গেলো।যেদিন সরিফা শামীম ছেলের হাতে মেয়েকে অর্পণ করলো,ছেলের কথায় সরিফার চোখে আনন্দাশ্রু নেমে এলো।ছেলে বললো মা রোকেয়াকে আমি সুখ দেবো কিনা জানিনা।তবে কোনদিন অসন্মান করবোনা।
               বিয়ের রাতে শামীম রোকেয়াকে স্বর্ণের একটি আংটি গিফট করলো।সেইসাথে রুপার একটি আংটি নিজের হাতে পড়ে নিলো।রোকেয়াকে বললো,এটা তুমি আমাকে দিয়েছো ঘরের সবাইকে বলবো।স্ত্রীর সন্মান বাড়াতে কজন পুরুষ এমন করে?বিয়ের ক’দিন পর শশুর বাড়ি এসে মাথার টুপি খুলে,শামীম শাশুড়ীকে বললো মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে একটু দোয়া করে দিন।সেদিন সরিফার চোখে আবারও আনন্দাশ্রু নেমে এলো।মনে মনে বললো আল্লাহ তুমি আমার ডাক শুনেছো।ছেলে দাওনি,কিন্তু ছেলের মতো মেয়ের জামাই দিয়েছো।
           শশুর বাড়ি আসার আগে শামীম ফোন করে সরিফাকে জিজ্ঞেস করে মা আপনার কি পছন্দ?কি আনবো?রোকেয়ার দুই বোন যেন ওরই বোন।সবসময় খবরাদি নেয়।মাস শেষে রোকেয়ার বেতনের টাকা শাশুড়ীর হাতে এনে দেয়।সরিফা নিতে না চাইলেও জোর করে বলে,আপনি যতদিন বেঁচে আছেন,এই টাকা আপনি খরচ করবেন।আমার স্ত্রীর ভরণ পোষণ আমি করতে পারবো।শুধু আপনার দোয়া চাই।
             শামীম কোন ডাক্তার কিম্বা ইন্জিনিয়ার না।ছোটখাটো ব্যবসা করে।কিন্তু তার মন অনেক বড়।শাশুড়ীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি সে পালন করেছে।কোনদিন রোকেয়াকে অসন্মান করেনি।পৃথিবীতে খারাপের মধ্যে অনেক ভালো পুরুষও আছে।যারা স্ত্রীকে মর্যাদা দিতে জানে।বিধবার মুখে হাসি ফোটাতে জানে।