পর্দা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে জেনে নিই (প্রবন্ধ )

পর্দা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে জেনে নিই (প্রবন্ধ )
---পারভীন আকতার
মানুষের শিরায় উপশিরায় শয়তান বিদ্যুৎ গতিতে হাঁটছে।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইবলিশকে সেই ক্ষমতা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।শয়তানের সাথে আল্লাহতা'লার এটাই চ্যালেঞ্জ।আমরা তাঁর বান্দাকে শয়তান শরীর মন ঘায়েল করলেও সেখানে আমরা যদি আল্লাহকে বসিয়ে রাখি শয়তান কোন কাজ করতে পারবে না।তবুও শয়তান বাবু তিনি হাল ছাড়বেন না।পথ ভ্রষ্ট করেই ছাড়বে আল্লাহর বান্দাকে নানা ফন্দি আঁটতে তার জুড়ি মেলা ভার।
বর্তমান আধুনিক সভ্যতা সংস্কৃতির উদভ্রান্ত চলায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। স্বাধীনচেতা মনোভাব আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে স্বকীয়তা বিচারে।কে আমাদের আটকাবে?আমরা কি কারো খাই,পরি?তাহলে লোকের দৃষ্টি,হাবভাব আমাদের বুঝে কী কাজ?স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চাই সবসময়।প্রতিটি ধর্ম শালীন জীবন পছন্দ করে।বেহাল্লাপনার কোন আশ্রয় কোথাও নাই।
এখন মানুষ ধর্মের কথা বাদ দিয়ে নিজের চলাফেরার দর্শন যৌক্তিকতাসহ তুলে ধরে।নিজেই তৈরি করে নেয় বিপথ।আর মনে করা করি নাই।মানুষের কথা কর্ণপাত করার সুযোগ ও সময় কারো নেই।এতকিছুর পরও আমরা ভুলেই যাই এই মুহুর্তে আমার মৃত্যু হবে।আর ভবলীলাসাঙ্গ হবে।সৃষ্টিকর্তার কাছে দেহমন আত্মা চলে যাবে।পোকায় খাবে শরীর,ছাই ভষ্ম হবে।একটুও ভ্রুক্ষেপ নেই আমাদের!অথচ এই চিরন্তনী তাথ্যিক বিষয়গুলো সবারই জানা তবে মানামানির দ্বার ধারি না আর কী।স্রষ্টার কাছে প্রার্থনায় আমরা কী চাই বারবার?জাগতিক সুখ শান্তি।দীর্ঘকাল বাঁচার আকুতি সুস্থতায়।অর্থ যশ খ্যাতিতে মুড়িয়ে রাখতে বলি।মাঝে মাঝে এই ও বলি, খোদা তোমার কুদরত দিয়ে আমার সব আশা পূর্ণ করো।আমার মনে হয় তখন খোদা হাসেন।বলেন,আমার বান্দা দুনিয়ার দিওয়ানা,আমার বেহেস্তের জন্য নয় যেখানে অমরজীবন লাভ করবে।আমরা বলি না খোদাকে নিরাপত্তার জন্য খোদা আমাদের সদা পর্দার ভিতর রাখো।যেহেতু মানুষরুপী শয়তান চারদিকে ক্ষতি করতে বিরাজমান।ইসলামে নারীদের কঠোর পর্দা করতে এজন্যই বারবার তাগিদ দিয়েছে।আজ করোনা দিয়ে আল্লাহ তা বাস্তবায়ন করেছেন।শরীর ফুল পর্দা।না হয় করোনার ছোবল!অতঃপর মৃত্যু। 
ধর্ম আর বাস্তবতা এতটাই মিল দেখে আমি আশ্চর্য। ইতেকাফ নিলাম।দিনরাত আল্লাহর সাথে কথা বললাম।তিনি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন একটার পর একটা।অামি হতবাক!কে কথা বলছে আমার সাথে?তাহাজ্জুদ নামায না পড়লে বিছানা থেকে কে আমায় তুলে দেন?সারারাত ইবাদতে কেন মশগুল থাকি?কে এত আমাকে দেওয়ানা করছেন?সুবহানাল্লাহ আল্লাহ'তায়ালার হেদায়ত এভাবেই মানুষ এক সময় না একসময় হয়ে যায়।অনেক সময় মৃত্যুর সময়ও।মানুষকে আল্লাহ যেভাবে নিষ্পাপ দুনিয়াতে এনেছেন ঠিক সেইরকম পবিত্র করে তাঁর কাছে নিয়ে যান।কোন আবর্জনাকে নয়।দুঃখ কষ্ট,রোগে শোকে ভুগিয়ে তারপর ডাক দেন,চলে এসো।তোমার সময় শেষ।জীবনের মোড় এভাবেই ঘুরে যায়,আমার ইতিবাচক পরিবর্তন দেখে নিজেও এখন খুব খুশি।এখন দুনিয়ার মোহ নাই,কোন বিনোদন নাই।একমাত্র নামাজ রোজাই আমার বিনোদন,মোহ।
বোরকা পড়তাম না  মাঝের তিন বছর।শরীরের নানাবিধ রোগে এতটাই আক্রান্ত আমি,বোরকা পড়লেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।কালও বোরকার কারণে অসুস্থ ছিলাম।শ্বাস নেয়া,শরীরে বাতাস না লাগলে, প্রকৃতির সাথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।বোরকা তাই মেন্ডটরি নয়।দরকার উপযুক্ত পর্দার।
আর যেহেতু মুখই সকল সর্বানাশের মূল তাই সবসময় মুখ ঢেকে রাখার ব্যবস্থা এখন আল্লাহ করোনা দিয়ে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।একজনের সুন্দর, সুশ্রী  চেহারা দেখলে মনে খারাপ ভাবনার উদয় হয় শরীরে থাকা শয়তানের পক্ষ থেকে।ঘটে ধর্ষণ,ইভটিজিং, পরকীয়া ধলাধলি অসৎকর্ম সব।আগে এসব বুঝতাম না।দুনিয়ার রঙে ভাসতাম।মানুষ ছবি দেখবে,কমেন্ট করবে,বাহবা পাবো।বেশ,বেশ।এখন এসব মূল্যহীন ভাবনা।কী ক্ষতি নিজের করেছি এখন বুঝি।কেউ ছবির গলা কেটে এডিট করে আরেকজনের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে স্যোসাল মিডিয়ার পোষ্ট করে ইমেজের বারোটা বাজাচ্ছে।শুধু তাই নয়,সেইম ফেইক আইডি ছবি দিয়ে খুলে আজেবাজে চ্যাট করে তা স্ক্রিনশট নিয়ে ছাড়ছে।মানসিক অশান্তি বাড়িয়ে আত্মহত্যা করানোর জন্য একধাপ এগিয়ে দিচ্ছে।সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় করছে প্রতিনিয়ত।যারা সত্যটা বুঝার ক্ষমতা রাখে তারা এসব বিশ্বাস করে না।কিন্তু সেই বাবনার মানুষ দুনিয়াতে খুব কম।যার কারণে সবদিকে এতো অশান্তি।ফুসুরফুসুর,কানাগোসা,পরনিন্দা করার হিড়িক।লাভহীন,গুরুত্বহীন সময় নষ্টের পাঁয়তারা কেবল।আমরা একবারও ভাবি না মানুষ এসব এখন বুঝে,জানে।তাই মাইন্ড করার কিছুই নেই।চলতে থাকতে হবে সামনের পথে।মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বারবার বলেছেন।সবকিছু থেকে বাঁচতে তাই আবার বোরকা পড়ছি।একটু কষ্ট হলেও অনেক নিরাপদ।শয়তানের চোখে ফাঁকি দিতে বোরকা পরা নারীদের জন্য উত্তম।ইজ্জত বাচাঁতে এর বিকল্প দেখি না।আমার মেয়েও বোরকা পড়ে।আট বছর বয়সে তাকে আমি সেই শিক্ষা দিচ্ছি।প্রথমে গরমের কারণে একটু ইততস্তঃ করলেও আলহামদুলিল্লাহ,এখন আর আমাকে বলা লাগে না।সে নিজেই নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবে।নামায কালামে জীবন পার করছে।আমি শুধু গাইড লাইন দিই কেবল।সে যদি অল্প বয়সে এমন কঠিন মুসিবত সম্পর্কে সজাগ থাকতে পারে তবে আমরা বুড়া বয়সে সজাগ হবো না কেন?মানুষতো আমাদের বেহেস্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখে না।বিপদে ফেলতে ওস্তাদ।তাই ধর্ম মতে চলুন।দিন শেষে তাঁর কাছেই আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করি।ঘুমের মধ্যে মরে গেলেও কারো কিছুই করার নেই।ঘর থেকে বের করে সহসা মাটিতে পুঁতে ফেলা ছাড়া;দূর্গন্ধ ছড়ানোর আগে।মানুষকে কখনোই ভয় পাবেন না,সে যতই অনিষ্ট করার চেষ্টা করুক।আল্লাহতা'আলাকে ভয় করে, তাঁর কথা,তাঁর নবী রাসূলের (সাঃ) কথা মেনে আমাদের চলতে হবে।মনে রাখবেন আপনি যখন আল্লাহর প্রেমে বিভোর হবেন তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক পরীক্ষা আসবে।ধৈর্য্য ধরবেন।যে জীবনে একবার সিজদার মজা পেয়েছেন তিনি সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করেছেন।মাথা আর সিজদার জায়গা পর্যন্ত মানুষের সমস্যা তা যত বড়ই হোক।সিজদা  করে আল্লাহর কাছে অন্তর থেকে কাঁদলেই তিনি সব গুনাহ মাফ করে মসিবত দূর করে দেন।
পারভীন আকতার
শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক। 
চট্টগ্রাম।
Thanks a lot dear.
Show quoted text