পারেনি সিলেট কুমিল্লার চারে চার

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

ফাইনাল মানেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের জয়। আগের তিনবারের মতো এবারও তারা ফাইনাল জিতেছে। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তারা সিলেটকে হারিয়েছে ৭ উইকেটে।  সিলেটের করা ৭ উইকেটে ১৭৫ রান তারা অতিক্রম করে ৪ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে ১৭৬ রান করে।
 
ফাইনালে কুমিল্লা যেমন অপরাজেয় থাকল, তেমনি ইমরুল কায়েসও। কুমিল্লার চার শিরোপাতেই তিনি ছিলেন সঙ্গী।প্রথমবার খেলোয়াড় হিসেবে। পরের ৩ বার অধিনায়ক হিসেবে। 
 
অপরদিকে মাশরাফির ফাইনালে অপরাজেয় থাকার রেকর্ড আর অক্ষুণ্ণ থাকল না। আগের চারবার অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জেতা একমাত্র খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। মাশরাফির হারে সিলেটের শিরোপা জয়ের অপেক্ষাও বেড়ে গেল। বিপিএলের ইতিহাসে দীর্ঘদিনের দীর্ঘশ্বাস মুছে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ হলেও শিরোপা জেতা আর হলো না।
 
বড় টার্গেটের পেছনে ছুটে কুমিল্লা শুরু করেছিল অনেকটা সিলেটের মতোই। ১৫ ওভার পর্যন্ত দুই দলই প্রায় সমান্তরাল ছিল। শেষ ৫ ওভারে গিয়ে কুমিল্লা সিলেটকে ছাড়িয়ে যায়। দুই দলের ইনিংসে অনেক সাদৃশ্য ছিল। সিলেটের প্রথম বল খেলা নাজমুল ৬৪ ও চারে নামা মুশফিক অপরাজিত ৭৪ রান করেন।  কুমিল্লার হয়েও তাদের প্রথম বল খেলা ওপেনার লিটন ৫৫ ও চারে নামা চার্লস জনসন অপরাজিত ৭৯ রান করেন।
 
সিলেট প্রথম ওভারেই ১৮ রান তুলে নিয়েছিল। কুমিল্লা সেই কাজটি করে তানজিম হাসান সাকিবের করা দ্বিতীয় ওভারে  লিটন দাস ও সুনিল নারিন ১টি করে চার ও ছয় মেরে ২১ রান নিয়ে। সিলেট প্রথম ওভারে ১৮ রান নিয়ে পরের দুই ওভারেই উইকেট হারিয়েছিল। কুমিল্লার ক্ষেত্রেও তাই হয়। তারাও পরের (তৃতীয় ও চতুর্থ)  ওভারে উইকেট হারায় সুনিল নারিন  ( ৫ বলে ১০) ও ইমরুল কায়েসের (৩ বলে ২ রান)। সুনিল রুবেলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে  জর্জ লিন্ডের হাতে, ইমরুল লিন্ডের বলে থিসারা পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়ে। 
 
এই পর্যন্ত দুই দলেরই একটি সাদৃশ্য ছিল। সিলেটের দুই উইকেটের একটি ছিল বোলারের, একটি ব্যাটসম্যানের।কুমিল্লার তাই। আবার দুই উইকেটের একটি করে ছিল অধিনায়কের। লিন্ডে পরের ওভারে রুবেল চার্ল জনসনের ক্যাচ ফেলে দেন। রুবেল কয়েকদফা চেষ্টা করেও ধরতে পারেননি। জনসনের রান ছিল তখন ৮। জীবন পেয়ে তিনি খেলেন ম্যাচজয়ী অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে সিলেটের রান ছিল ২ উইকেটে  ৪৩, কুমিল্লার ২ উইকেটে ৪৯। লিটন দাস ২৭, চার্লস জনসন ৯। 
 
২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর সিলেটের হয়ে হাল ধরেছিলেন নাজমুল ও মুশফিক ৯.২ ওভারে ৭৯ রান যোগ করে। কুমিল্লার হয়ে সেই কাজটি করেন তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন দাস ও জনসন চার্লস। তারা যোগ করেন ৯.৩ ওভারে ৭০ রান। ১০ ওভার শেষে সিলেটের রান ছিল ২ উইকেটে ৭৯, কুমিল্লার ২ উইকেটে ৮৬। লিটন ৩০ বলে ৪৩, চার্লস জনসন ২১ বলে ২৫।
 
১০ ওভার পর সিলেটের ওপেনার নাজমুল তার চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলে ৩৮ বলে। কুমিল্লার ওপেনার হয়ে লিটন তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করেন ৩৬ বলে ১ ছয়, ছয় চারে। সিলেট শতরান করেছিল ১১.৪ ওভারে। কুমিল্লা করে ১২ ওভারে।
 
নাজমুল যেমন হাফ সেঞ্চুরি করার পর আউট হয়ে যান, তেমনি লিটনও। রুবেলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে তিনি নাজমুলের হাতে ধরা পড়েন ৩৯ বলে ১ ছক্কা ও ৭ চারে ৫৫ রান করে। ১১ থেকে ১৫ ওভারে কুমিল্লা ১ উইকেট হারিয়ে  মাত্র ৩৩ রান সংগ্রহ করে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। ১৫ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ৩ উইকেটে ১১৯। সিলেটের রান ছিল ৩ উইকেটে ১২৫।
 
শেষ ৫ ওভারে কুমিল্লার জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৫৭ রানের। উইকেটে  জনসন চার্লস ৩৫ ও মঈন আলী ১৩ রানে। লুক উডের করা ১৬ নম্বার ওভারে ৫ রান আসলে কুমিল্লার টার্গেট বেড়ে যায়। রুবেল পরের ওভারে চার্লস জনসন  ও মঈন আলী ৩ ছক্কা ২৩ রান নিলে খেলা আবার কুমিল্লার গ্রিপে চলে আসে। চার্লস ৪১ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। রুবেল প্রথম ৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেও শেষ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়।
 
নিজের প্রথম ৩ ওভারে তানজিম বেধড়ক মার খাওয়ার পর ১৮ নম্বার ওভারে ৮ রান দিয়ে খেলায় সিলেটকে আবার খেলায়  নিয়ে আসেন। শেষব২ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২১ রানের। কিন্তু রুবেলের মত লুক উডও আগের ৩ ওভারে ২০ রান দেয়ার পর ১৯ নম্বার ওভারে ১৮ রান দিয়ে সিলেটের শেষ সম্ভানাকে মাটি চাপা দিয়ে দেন। শেষ হয়ে যায় সব নাটকীয়তা। শেষ ওভারে কুমিল্লার প্রয়োজন পড়ে ৩ রানের। মাশরাফি প্রথমবারের মত বল হাতে তুলে নেন। মঈন আলী ও চার্লস মিলে একটি ওয়াইডসহ প্রথম ২ বলেই কাজ সেরে কুমিল্লাকে উল্লাসে ভাসিয়ে দেন।  চার্লসের ব্যাট থেকে জয়সূচক রান আসার সঙ্গে সঙ্গেই  ফ্লাড লাইট নিভিয়ে দেয়া হয়। মোবাইলের আলো আর আতশবাজিতে উৎসব করতে থাকেন কুমিল্লার খেলোয়াড় দর্শকরা।
 
শেষ ২৪ বলে যেখানে কুমিল্লার ৫২ রানের কঠিন টার্গেট ছিল, সেখানে চার্লস  ও মঈন আলী ২০ বলেই সেই রান করে ফেলেন। ম্যাচ সেরা চার্লস ৫২ বলে ৫ ছক্কা ও ৭ চারে ৭৯ ও মঈন আলী ১৭ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ।  দুই জনে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬.৪ ওভারে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রান করেন।