প্রবাসী বাবা-ছেলের মৃত্যু: যেসব বিষয় মাথায় রেখে এগোচ্ছে তদন্ত

প্রবাসী বাবা-ছেলের মৃত্যু: যেসব বিষয় মাথায় রেখে এগোচ্ছে তদন্ত

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

ঘরের মধ্যে অচেতন অবস্থায় পরে ছিলেন একই পরিবারের ৫ জন। তারা সকলেই প্রবাসী। দরজা ছিলো ভেতর থেকে বন্ধ। পুলিশ দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে মারা যান বাবা-ছেলে।

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার এই ঘটনার চার দিন পেরোতে চলছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের মৃত্যু ও অস্থতার কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি কেউ। না পুলিশ, না চিকিৎসকরা। কিভাবে এমন ঘটনা ঘটলো তাও এখন পর্যন্ত খোজে বের করতে পারেনি পুলিশ। ফলে পুরো ঘটনাই এখন পর্যন্ত রহস্যাবৃত্ত।

এখন পর্যন্ত কয়েকটি ধারণার উপর ভিত্তি করে এগোচ্ছে এ ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম। পুলিশের ধারণা- বাবা-ছেলে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় বা গরমে পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের অভাবে অথবা বিষাক্ত কিছু নাকেমুখে স্প্রে করার কারণে মারা যেতে পারেন।

হতাহতরা নিজেরাই এমনটি করে থাকতে পারেন, দুর্ঘটনাবশত এটি ঘটে থাকতে পারে অথবা বাইরের কেউ তাদের হত্যা করতে পারে- এই তিন ধারণা মাথায় রেখেই তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ।

বুধবার রাতেই নিহত রফিকের শ্যালক দিলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজনের মধ্যে রফিকুলের মেয়ে সামিরা ইসলামের অবস্থার শুক্রবার আরও অবনতি হয়েছে। তার অবস্থা শঙ্কটাপন্ন বলে জানা গেছে। তাদের চিকিৎসায় মেপিকেল বোর্ড গঠন করেছে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ওসমানীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত বলার মতো কোন অগ্রগতি নেই। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কেও চিকিৎসকরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

তিনি বলেন, খাদ্যবিষক্রিয়া কিংবা বিষাক্ত কিছু স্প্রে করার কারণেও তারা হতাহত হতে পারেন। আবার গরমে শ্বাসরুদ্ধ হয়েও তারা মারা যেতে পারেন। কারণ তারা শীতের দেশ থেকে এসেছেন আর দেশে এখন প্রচুর গরম। তাছাড়া তারা যে কক্ষে ছিলেন সেখানে এসি ছিলো না, তারউপর এক কক্ষে পাচজন ছিলেন।

এই সবগুলো বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে আমরা তাদের নিকট আত্মীয়দের সন্দেহ করেছিলাম। তাদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কথাবার্তায় সন্দেহজনক কিছু পাইনি। তবে তারা আমাদের নজরদারিতে রয়েছেন। এছাড়া নিহত প্রবাসীর সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ বা পারিবারিক কলহের কোন তথ্যও কেউ দিতে পারছে না।

একই পরিবারের ৫সদস্যের হতাহতের কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি জানিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বলেন, আমরা ধারণা করছি খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারিনি।

মাহবুবুর রহমান ভূইয়া বলেন, যারা যারা গেছেন ময়নাতদন্তে তাদের শরীকে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু কি না তা ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ জনের চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির ভট্টাচার্যকে এই বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে। কলেজের সব বিভাগীয় প্রধানরা বোর্ডের সদস্যরা। তারা অসুস্থদের চিকিৎসার পাশপাশি অসুস্থতার কারণ খোজে বের করবেন।

ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুসনেআরা বেগম ও তার ছেলে সাদিকুল ইসলাম কিছুটা সুস্থ হয়েছেন। তাদের সাথে আজ পুলিশ কথা বলেছে। তবে তদন্তে অগ্রগতি হওয়ার মতো কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সিলেটের ওসমানীনগরে তাজপুর স্কুল রোডের একটি বাসা থেকে এক পরিবারের ৫ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নেয়ার পর রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম , ছেলে সাদিকুল ইসলাম এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রবাসীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে স্ব-পরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন রফিকুল ইসলাম। অসুস্থ ছেলে সাদিকুল ইসলামকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য গত ১২ জুলাই স্বপরিবারে দেশে ফেরেন। এক সপ্তাহ ঢাকায় ছেলের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অরুনোধয় পাল ঝলকের মালিকানাধীন বাসার দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেন।