বিকৃতি হচ্ছে রক্তে অর্জিত মাতৃভাষা

বিকৃতি হচ্ছে রক্তে অর্জিত মাতৃভাষা
আহমাদ কাউসার 
 
ভাষা একটি জাতির অস্তিত্ব।
একটি জাতির সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ তা নির্ভর করে
সেই জাতির ভাষার উপর।
ভাষার যথাযোগ্য ব্যাবহার, চর্চ্চা আর সর্বজনীনতার ওপর ভাষার সমৃদ্ধি নির্ভর করে।ভাষার বিশেষ বিকাশ ঘটে এর শুদ্ধতম ব্যাবহারে,শব্দের সঠিক উচ্চারণের মাধ্যমে। 
একটি ভাষাভাষি অঞ্চলের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব তার মাতৃভাষাকে সুন্দর ও শুদ্ধভাবে উপস্থাপন করা।
বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা।সুপ্রাচীন এই ভাষার রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।ঐতিহ্যবাহী এই ভাষাকে নিয়ে হয়েছে অনেক ষড়ষন্ত্র।এ ভাষার জন্য দিতে হয়েছে রক্ত,করতে হয়েছে আন্দোলন।
ভাষা আন্দোলননের মধ্য দিয়েই বিকশিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রয়েছে বাংলাভাষার ব্যাপক সুনাম।বাংলা ভাষার সাহিত্য জিতে নিয়েছে নোবেল।
এত রক্ত দিয়ে আম্দোলন করে অর্জিত ভাষাটি আজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে দূষিত,বিকৃত।
গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সোস্যাল মিডিয়া শিক্ষিত তরুণদের দ্বারা এ ভাষা সবচেয়ে বেশী বিকৃত হচ্ছে।
ভাষা পরিবর্তনশীল,সময়ের সাথে ভাষার বিবর্তন একটি স্বাভাবিক বিষয়।তাই বলে অশুদ্ধভাবে ভাষার পরিবর্তন সমীচীন নয়।
আঞ্চলিক ভাষা মূলভাষাকে শক্তিশালী করে কিন্তুতার  বিকৃত আঞ্চলিকতা ভাষাকে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে নেয়।
ভাষার প্রতি অযত্ন ও অবহেলা কিংবা ভাষার অশুদ্ধ উচ্চারণ ও বিকৃত উপস্হাপন;ভাষার প্রবাহমানতাকে বিনষ্ট করে।
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।গণমাধ্যমে প্রচারিত বা বিনোদনমুলক অনুষ্ঠানগুলো সরাসরি মানুষের কাছে পৌছে।আজকাল গণমাধ্যম গুলোতে হরহামেশা বাংলাভাষার বিকৃতি হচ্ছে।
টিভি নাটকগুলোতে চলে অশুদ্ধ আঞ্চলিকতা যে গুলোর কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়না।বাংলা ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণে নাটকের কথোপকথনে এমন এক জগাখিচুরি ভাষা ব্যাবহার করা হয় যেগুলো তরুণরা প্রতিনিয়ত শুনে তাদের মধ্যে ধারণ করে এবং একসময় তাঁরা এগুলো আওড়াতে থাকে।তাদের মুখে এমন বিকৃত শব্দ শুনে তাদের ছোট ভাই বোনেরা মনে করে এটাই বুঝি শুদ্ধ। এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়াচ্ছে বাংলা ভাষার বিকৃতরূপ।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের
স্ট্যাটাসে এমন শব্দ ব্যাবহার করছে,যেমনঃমন্চায়,জোস,খিচ্চা ইত্যাদি।এগুলো শুধু শব্দের বিকৃতি নয় অমার্জিত ও কুরুচিপূর্ণ। 
এফ,এম রেডিওতে চলছে মনগড়া শব্দের ব্যাবহার।আধা বাংলা আধা ইংরেজি।
আধুনিকতার নামে চলছে ভাষার দূষণ ও বিকৃতি।অনেকেই মনে করে আধা বাংলা আধা ইংরেজি বলতে পারাটা এক ধরনের আধুনিকতা।শব্দের ভূল উচ্চারণ ও ভাষা বিকৃতি আধুনিকতা নয় বরং মূর্খতা।
রাস্তা-ঘাটে,হাটে,শহরে,অনেক বিলবেোর্ডে ভুল বানান পরিলক্ষিত হয়।
কালক্ষেপন না করে বাংলা ভাষার বিকৃতির লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে।
রক্তে কেনা এই ভাষার প্রকৃত ইতিহাস তরুণসমাজকে অনুধাবন করতে হবে।
আধুনিকতার নামে জগাখিচুরি ভাষার ব্যাবহার বন্ধ করে শুদ্ধ ও প্রমিতবাংলার প্রতি গুরুত্ব  দিতে হবে।
 সর্বস্তরে বাংলার ব্যাবহার নিশ্চিত করে যথাযথ তদারকি করতে হবে।গণমাধ্যমে প্রচারিত নাটক গুলোতে কথোপকথনের ভাষা শুদ্ধ হওয়া জরুরি।
সোস্যাল মিডিয়ায় মার্জিত বাংলা ব্যাবহার করা আমাদের তরুনদের দায়িত্ব।শিক্ষিিত যুবকরা বাংলার গর্বিত ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হয়ে এ ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত।দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মাত্ভাষার প্রতি মমতা ও একে লালন করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমাদের যুব সমাজ এই দেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
মাতৃভাষা সুন্দরভাবে উপস্হাপনের মাধ্যমেও আধুনিকতার পরিচয় দেওয়া যায়।আমাদেরকে আন্তর্জাতিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে বাধা নেই;মননে লালন করতে হবে বাঙালিয়ানা।
আপনভাষার সঠিকভাবে ব্যাবহার না করতে পারলে ভিনদেশি ভাষাও সঠিকভাবে আয়ত্ব করা যায়না।বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ইংরেজী শিখতে হবে, তাই বলে নিজ ভাষাকে অগ্রাহ্য করে নয়।