মা

মা


মিজানুর রহমান মিজান 


মা অতি ছোট একটি শব্দ।কিন্তু তার প্রসারতা, ব্যাপক শ্রুতি মধুর, অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যময়।মা, আম্মা, আম্মি, জননী, আম্মু যাই বলুন না কেন? মা শব্দের মধুরতা অন্য নামে আমি খুজে পাইনি।শব্দের উচ্চারণ অত্যন্ত ভরাট সুরযুক্ত কিন্তু খুবই সফট।মা শব্দটির পৃথক একটি ব্যঞ্জনা রয়েছে। আমরা লক্ষ্য করলে পাই সন্তান যে কোন বিপদ বা কষ্টে পতিত হলে অযাচিত ভাবে প্রথমেই যে শব্দটি উচ্চারণ করে তা হচ্ছে মা শব্দটি।আপদে বিপদে কেন অন্য শব্দ উচ্চারিত হয় না।সকল মানুষই এ শব্দটি উচ্চারণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে থাকেন।সুতরাং মায়ের বিকল্প মা-ই প্রকৃত ও চিরন্তন সত্য বলে প্রতীয়মান।আমি ভেবে হই সারা যে মা সন্তানের প্রতি বিলিয়ে দেয় তার সর্বস্ব অকাতরে, অযাচিত ভালবাসায়। সে মা-কে কেমনে ভুলে দেয় শেষ কালে বৃদ্ধাশ্রমে,করে অনেকে বধুর অথবা দুনিয়ার মোহমায়ায় পড়ে কষ্ট।যে ভালবাসা নিখাদ, অকৃত্রিম, নেই বিন্দু মাত্র কৃত্রিমতা।তাছাড়া একজন মেয়ে হয়ে শাশুড়িকে কেমনে ভাবে ত্যাজ্য করলে সে সুখি হবে।আমি দৃঢ়তার সহিত বলতে পারি, যে সকল বধু এ আচরণে অভ্যস্থ। তাদের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিসহ, সেই বধু যখন নিজে হন শাশুড়ি। তা অনেক ক্ষেত্রে পরিক্ষিত সত্য রুপে প্রতিষ্ঠিত।তবে তখন নদীর জল অনেক হয়ে যায় বাহিত এই যা। তাইতো আমি গাই প্রাণ ভরে-
ভাবনা
মা মাগো তোমায় ভুলতে পারি না
বটবৃক্ষের ছায়া তুমি স্বজন আপনা।।
জানি চিরদিন কেহ থাকবে না
খানিক দুরে গেলে মন মানে না
আছ তুমি সর্বক্ষণ হৃদ বন্দনা।।
রোগে সুখে আল্লাহ পরে হয় যে স্মরণ 
পাগল মন চায় সর্বদা ধরে রাখতে চরণ
ভব জ্বালায় ব্যস্ত থাকি সঠিক সময় পাই না।।
অনুগ্রহ ছাড়া উপায় দেখি না
চোখ থাকিতে হলাম কানা
মনে মনে পাগল দেওয়ানা
যেথায় যাই সেথায় শুধু ভাবনা।।

শব্দটি ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড় পার্থক্য থাকে না।মা সবার কাছে মা রুপে পরিগণিত হয়ে থাকেন। মায়ের কাছে বা আঁচলের নীচ সর্বাধিক নিরাপদ আশ্রয়েরস্থল, সুশীতল পরশমন্ডিত ছায়া নীড়।মায়ের ভালবাসা অতুলনীয়, অমুল্য রত্নভান্ডার।মা-ই একমাত্র নি:স্বার্থ ভালবাসা প্রদানের কেন্দ্রবিন্দু।অন্য ভালবাসায় খাদ থাকতে পারে। কিন্তু মায়ের ভালবাসা নিখাদযুক্ত।
   আমার উত্থান, আনন্দ-বেদনা, সুখ শান্তির মুলে মায়ের আদেশ, উপদেশ, উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণা প্রত্যেকটি কাজে-কর্মে, চলনে-বলনে, শিরোধার্য।মায়ের দিক নির্দেশনায় আমি আজ কাগজের বুকে কলমের আঁচড় বসানোর সবটুকু ক্ষমতা ও অধিকার অর্জন করতে ক্ষমতা প্রাপ্ত।পিতা প্রথমােএধ সাংসারিক জীবনে উদাসীন থাকার ফলশ্রুতিতে মা-ই শক্ত হাতে হাল ধরে অস্তিত্ব দান করেন। তাই বলে পিতার অবদান কোন অংশেই কম নয় বা খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। 
   মা কলম ধরার ক্ষমতাহীন হলেও আমার কাছে মনে হয় অনেক অনেক বড পন্ডিত ও জ্ঞানী। কারন শিক্ষা জীবনে আমার লেখাপড়ার দিক-নির্দেশনা অত্যন্ত সুনিপুণ দক্ষ কারিগরের মতো আদেশে, উপদেশে বলে দিয়েছেন।যার ফলাফল আমি হাতে হাতে  তাৎক্ষণিক পেয়েছি। এ পর্যন্ত ক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে লিখার সৎসাহস প্রাপ্তি।
   অনেক দু:খ, কষ্ট, পেয়ে মায়ের কাছে বলায় যে শান্তনা আজো পাই তা অতুলনীয়। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, ধার্মিক, একনিষ্ঠ সমাজকর্মী হিসেবে পরিবার তথা প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনের নিকট পৃথক ব্যক্তি সত্ত্বার অধিকারী। প্রত্যেকের নিকট সমান মর্যাদার আসনে (শ্রেণিমত) অধিষ্ঠিত। কিন্তু এ বৃদ্ধ বয়সেও যখন দেখি মা কাজ ছাড়া বসতে নারাজ। আবার পারিপার্শ্বিকতায় এটা ওটা করতে। অর্থ্যাৎ একজন কাজ পাগল মানুষ। কাজ করতে দেখলে জানি না কেন আমার আত্মাটা শিউরে উঠে বার বার, প্রতিবার।
   জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আমি এক নাগাড়ে প্রতিদিন ভোর পাঁচ/ছয়টায় সিলেট শহরে যেতাম। ফিরতাম রাত দশ এগারোটায়। বিদায় বেলা মায়ের হাসি মুখে ফিআমানিল্লাহ এবং এসে দেখতাম কুপি বাতি জ্বালিয়ে মা একা বসে অনাহারী অবস্তায় অপেক্ষমান।বুকে একটি মুচড় অনুভব করতাম। আমার জন্য মা আহার নিদ্রা ত্যাজ্য করে আছেন বসে কত কষ্ট স্বীকার করে। আহা  দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা প্রবাহমান হলেও করার কিছুই ছিল না। আজো জীবন সায়াহ্নে এসে বাহির থেকে দৃশ্যত একই অবস্তা। আমার জন্য আরতো কেহ বসে না। আদর মাখা হাতে ভাতের থালা এগিয়ে দেয় না। দেয় সে-ই একজন যিনি আমার গর্ভধারিনী মা।আমার জন্য ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে শুকিয়ে গিয়েছিলেন। জটিল ও কঠিন মারাত্মক রোগে ভোগছিলাম ছয়টি বৎসর সাহচর্যবিহীন অনেকের নিকট থেকে। কিন্তু এ ধরণীর নাট্য মঞ্চে এখনও জীবিত এবং সক্ষমতার প্রেরণায় রোগ যন্ত্রণা ভুলে যাই, কষ্টকে কষ্ট মনে করি না এক মাত্র মায়ের সাহচর্য পেয়ে। আমি খোদার কাছে, সবার কাছে আমার মায়ের দীর্ঘ জীবন কামনা করি ঐকান্তিক ভাবে চিরদিন নিরন্তর। মা আমার দীর্ঘজীবি হোন এ প্রত্যয় ও প্রত্যাশা সর্বক্ষণ, সর্বকাল। 
লেখক-মিজানুর রহমান মিজান, পরিচালক চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার, রাজাগঞ্জ বাজার, বিশ্বনাথ, সিলেট।