মেঘলা ঈদ /ছোট গল্প

মেঘলা ঈদ /ছোট গল্প

মেঘলা ঈদ"/(ছোট গল্প) ১/৭
আব্দুছ ছালাম চৌধুরী 

 খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে দিঘীর ঘাটে গোসল সেরে ঝকঝকে নতুন পাঞ্জাবি পরে ঈদগাহে গেলাম। সে বছর জৈষ্ঠ্যমাসে ঈদ ছিলো। দখিনা হাওয়ায় সাথে ঝলমল সূর্য রশ্মিতে প্রাণবন্ত ছিলো সকলের মনমানসিকতা। 
 প্রায় সকলের ঠোঁটে হাসির ঝলক লক্ষ্মণীয়। স্বভাবতই ঈদের দিন বলে কথা। ঈদগাহ ও ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। 
 হঠাৎ উত্তর পূর্ব দিকের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে আকাশ গর্জে উঠলো, সাথে সাথে মৌলভী সাহেব আকাশবাণীর কথা বলে নামাজ শুরু করলেন এবং নামাজ শেষ ও করলেন। সেদিন আমাদের সকলের দৃষ্টি ছিলো ইমাম সাহেবের দিকে,আর ইমাম সাহেবের দৃষ্টি ছিলো আমাদের তথা আকাশের দিকে। তড়িঘড়ি করে তিনি খুতবা শুরু করলেন, ঠিক তখনই মুশল ধারার বৃষ্টি শুরু হলো। নামাজ পড়া শেষ বলে অনেকেই আর বৃষ্টির কারণে খুতবার অপেক্ষা করেনি। ওদিকে মৌলভী সাহেব ছিলেন দৃঢ়চেতা,ইশারায় বুঝাতে চাইলেন বসো,ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা ওয়াজিব, তাই অধৈর্য্যে হবেন না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমি সহ হাতে গুনা কয়েকজন স্থির করলাম শুনেই যাবো। ওদিকে সৈয়দ কবির হোসেনের সাথে একটি ছাতা থাকায় তিনি সেচ্ছায় মৌলভী সাহেবের মাথায় ধরে রাখতেই ধমকা হাওয়ায় সাথে সাথে ছাতাটি উড়ে গেলো। তখন বাকীরা খুতবা শেষ করতে অনুরোধ করলেন। 
কিন্তু না,দৃঢ়চেতা মৌলভী সাহেব তার নির্ধারিত সময়েই শেষ করলেন।
 প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির সাথে কোলাকুলি ও করলেন,তারপর বললেন চলো,বাড়ি যাই। কেউ কেউ বললেন হুজুর চলেন ঐ পাশের বাড়িতে যাই। মৌলভী সাহেব বললেন, যে পরিমাণ ভিজেছি,তাতে একেবারে বাড়ি যাওয়াই উত্তম। 
ওদিকে গাঁয়ের পথ গুলি কাঁদা মাটি এবং কিছুটা পিচ্ছিল হওয়াতে, সাবধানতা সত্ত্বেও ঐ তিন পথের মুখে মৌলভী সাহেব ধপাস করে পড়ে গেলেন।
আমি আর সৈয়দ কবির হোসেন হাত ধরে তুললাম এবং উপায়ন্তর না দেখে, পাশের বাড়িতে নিয়ে গেলাম। 
একটু একটু গলা কাশি দিতেই, একজন আমাদেরকে ইশারায় দক্ষিণের কোটায় বসতে বললেন। এদিকে আমাদের মধ্যে কথা চললো, কিরে এই অবস্থায় বসতে পারবো কি, তার চেয়ে চল না বাড়ি যাই । 
মোটামুটি স্থির করতেই চোখ পড়লো একজনের হাতে তিন চারটি লুঙ্গি নিয়ে এদিকে আসছেন। 
এমন ভাবে ঘোমটা দেয়া ছিলো যে, আন্দাজ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না যে উনি একজন মেয়ে মানুষ। 
আমার হাতে দিয়ে বললো,আসুন, এদিকে আসুন। আমাকে ডাকার কারণে আমি কিছুটা হতবিহ্বল হলাম। তবুও তার পিছে পিছে গেলাম।
তার কক্ষের সামনে দাঁড়ানোর পর, হাতে সাবান এবং দুটি গামছা দিয়ে বললো,ঐ যে পুকুর ঘাট,যান আপনারা গোসল সেরে আসুন।
কিচ্ছু না বলে কথামতো আমি এবং মৌলভী সাহেব গোসল করতে গেলাম। গোসল শেষে এসে দেখি, চিড়ামুড়ি সহ বেশ কিছু খাবারে পরিপূর্ণ ঐ টেবিল। 
এমন সদ্ব্যবহার এবং সৌজন্যতা শেষে যখন আমরা বিদায় নিতে প্রস্তুতি নিলাম, ঠিক তখন মৌলভী সাহেব ঐ মেয়েটির সম্মুখে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি যখন বড় হবে, যখন তুমি বিয়ে করবে, ঠিক এই রকম একজন গৃহিণীকে বিয়ে করলে,তখন তুমি সারা জীবন সুখ এবং শান্তিতে থাকবে। ঠিক তখন ঐ মেয়েটির দিকে আমি ফিরে তাকালাম এবং যথারীতি ঐ মেয়েটি ও আমার দিকে ফিরে তাকলো।
আমি তার দুটি চোখ ব্যতীত আর কিছুই দেখিনি ------। 

২৬/৭/২০২০ খ্রীস্টাব্দ/লন্ডন"