শাকিব ও সন্তান নিয়ে ভিডিওতে কাঁদলেন বুবলী

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

শাকিব খানের কাছে নাকফুল পাওয়া নিয়ে শাকিব ও অপু বিশ্বাসের সঙ্গে শুরু হয়েছিল বুবলীর কথাযুদ্ধ। সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু পরিষ্কার করবেন বলেও পরবর্তীতে বলেছিলেন বুবলী। কিন্তু বুবলীর সংবাদ সম্মেলন আর করা হয়নি। শুধু তাই নয়, বুবলী এড়িয়ে চলছিলেন সংবাদকর্মীদেরও।

এবার বুবলী দীর্ঘ এক ভিডিও প্রকাশ করলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসকে নিয়ে। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভিডিও বার্তায় অবস্থান পরিষ্কার করলেন বুবলী।

শুরুতে বুবলী বলেন, আমি ২০১৬ থেকে কাজ করছি। শাকিব খান, যিনি আমার সন্তানের বাবা, আমার স্বামী, তার সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি বা সুযোগ পাই। উনি আমাকে মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন। ওনার মাধ্যমেই আমার ফিল্মে আসা। ওই সময়ে আমি কেন, পুরো বাংলাদেশের কেউ কি জানতেন ওনার আগের কোনো সম্পর্ক নিয়ে? এটা কিন্তু আমরা কেউই জানতাম না। শাকিব খান নিজেকে আমার কাছে সিঙ্গেল হিসেবেই উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সুবাদেই ভালো লাগা তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অপু বিশ্বাস টেলিভিশন লাইভে অভিযোগ তুললেন।

বুবলীর ভাষ্য, ২০১৭-তে যখন বিষয়গুলো (অপু বিশ্বাসের সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসা) সামনে আসল, তখন শাকিব খান নিজেও অবাক হয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে যিনি সম্পর্কে ছিলেন, অপু বিশ্বাস, উনি অনেক সিনিয়র আমার থেকে। অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। তাকে অবশ্যই আমি কাজের জায়গা থেকে সম্মান করি। তার সঙ্গে কখনই আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে তিনি লাইভে আসার আগে হঠাৎ আমাকে ফোন করেছিলেন এবং অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি কেন! ওই ব্যবহারের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ওই বাজে ব্যবহারের কথা তিনি নিজেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন।

বুবলী আরও বলেন, আমার কষ্টের জায়গা ছিল, আমি তো কিছুই জানি না। আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিল, সেটা তো না। কেন আমাকে জড়িয়ে এভাবে বলা হচ্ছিল! সে কারণেই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমি শাকিব খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পরে তিনি অনেক ইমোশনালি আমাকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই কথাগুলো তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তুমি তো এটাতে জড়িত নও। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এক বছর ধরে আমার যোগাযোগ নেই। এটা অপুদি নিজেও লাইভ প্রোগ্রামে বলেছিলেন। আপনারা অনেকেই জানেন, শাকিব খানের কথা অনুযায়ী অপু বিশ্বাসকে তিনবার অ্যাবরশন করতে হয়েছিল। চতুর্থবার বাধ্য হয়েই তিনি সন্তান নিয়েছিলেন। এসব ঘটনায় তো আমি নেই। তখন সিনেমাতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেন আমাকে দোষারোপ করা হলো যে, আমার কারণে কারও সংসার ভেঙেছে? আমার কারণে কারও সংসার, সম্পর্ক ভাঙেনি। আমি স্পষ্ট করে দর্শকের উদ্দেশে বলতে চাই।’

বুবলী বলেন, তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াটা, সেটাও তো সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তারা তো ম্যাচিওর মানুষ। এটা সম্ভব যে, কারও দ্বারা প্ররোচিত! কোনো সম্পর্কে সমস্যা হওয়ার পর একজন যখন আরেকটি সম্পর্কে যুক্ত হন, সেটার জন্য কি ওই নতুন মানুষ দোষী হয়ে যায়? আমাদের সমাজে অনেকেই নতুন সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছেন না? তাদের যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তারা যদি সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে চায়, এটার জন্য কি নতুন মানুষটি দায়ী? শাকিব খান নিজেই আমাকে বলেছেন, তিনি এই সম্পর্কে (অপু বিশ্বাসের সঙ্গে) সুখী নন। তিনি তার জায়গা থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। যেটা আমি তার সম্মানার্থে আগেও বলিনি, আজও বলব না। এটুকু বলি, আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের সমস্যাগুলো তো অনেক আগে থেকেই।

বুবলী বলেন, অনেকের এই প্রশ্ন আছে যে, আমি কেন হঠাৎ করে জয়ের (শাকিব-অপুর ছেলে) জন্মদিনে আমার বেবি বাম্পের ছবি দিলাম। দেখুন, জয়ের ব্যাপারে আমি আমার স্বামী শাকিব খানকে কতটা পজিটিভলি দেখতে বলি, এটা উনি জানেন এবং উনার আশেপাশে যারা কাছের মানুষ আছেন, তারা জানেন। বিষয়গুলো আমি কখনো সামনে আনতে চাইনি। কিন্তু অনেকেই খুব বিরক্ত হচ্ছেন যে, আমি কেন এসব নিয়ে রেসপন্স করি না। অনেকের সম্মানের কথা ভেবে আমি আজকেও অনেক কিছু বলছি না। জয়কে আমি কতটা সাপোর্ট করি, এটা শাকিব খান খুব ভালো করেই জানেন। ওর সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য সব রকম পরামর্শ আমি দিয়েছি। আমার বেবি বাম্পের ছবি যে ওর জন্মদিনে ছাড়া, বিষয়টা এভাবে ভেবে করিনি আমি। যতদূর জানি, জয় এবার ছয় বছরে পড়েছে। তো এর আগে অনেকগুলো বছর গেছে, আমি তো কোনো জন্মদিনে এমনটা করিনি। সব সময় ওর জন্য ভালোবাসা, দোয়া দিয়ে এসেছি। আমিও তো একটা মানুষ, আমারও তো কষ্ট থাকতে পারে। আমি তো শুধু বেবি বাম্পের ছবি দিয়েছি। কাউকে দোষারোপ করেও তো কিছু বলিনি। শুধু নিজের আবেগের জায়গা থেকে একটা বিষয় শেয়ার করেছি।

ভিডিওতে বুবলী বলেন, কিছু জিনিস শেয়ার করেছি আমার সন্তানের জন্য। ও তো বড় হচ্ছে এবং আপনারা অনেক সময় ওকেও বিভিন্ন বিষয়ে ইনভলব করে ফেলেন। ওর কোনো দোষ নেই, ও তো ছোট মানুষ। ওর তো তিন বছর প্রায়। আমরা চেয়েছিলাম যে, আমরা একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ওকে সামনে আনার, হয়তো হচ্ছিল না কোনোভাবে। আমি তো অলরেডি তিন বছর ওয়েট করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পরেও কিন্তু আমি কারও বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি, আজকেও করছি না। না হলে ও হয়তো কখনো কোনো সময় প্রশ্ন করবে, মা তুমি তো কোনো কথা বলোনি কখনো।

সন্তান সেহজাদের উদ্দেশে বুবলী বলেন, বাবা শেহজাদ, মা হয়ে তোমার পাশে সারা জীবন থাকব না বাবা। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি এবং করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, তোমাকে বড় করা। আমি সব সময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। তুমি মানুষের মতো মানুষ হও বাবা এবং একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি হয়তো আমার জায়গা থেকে সব সময় তোমাকে সেরাটা দিতে পারি না। তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

ভিডিও বার্তায় বুবলী বলেন, অনেকে বলে থাকেন, আমি নাকি শাকিব খানের কাছ থেকে অনেক আর্থিক সহায়তা নিই। এই কথাটাও সম্পূর্ণ ভুল। বিয়ে বা আমার সন্তান পৃথিবীতে আসার পর থেকে আমি কোনো আর্থিক সহায়তা নিইনি। স্বামী বা সন্তানের বাবা হিসেবে অবশ্যই এটা উনার অনেক বড় দায়িত্ব। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ তার উপর নির্ভর করে। আমার সন্তানের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি, আজ অব্দি আমি কখনোই আর্থিক সহায়তা নিইনি। সবকিছু নিজেই বহন করছি।

সন্তান নিয়ে আমেরিকায় থাকাকালীন অনেক টাকা খরচ হয়েছিল বলেও ভিডিওতে বলেন বুবলী। ওই সময়ে ১৫ হাজার ডলারের মতো দিয়েছিলেন শাকিব। বাকি অর্থ নিজে খরচ করেন নায়িকা।

বুবলীর ভাষ্য, আমেরিকায় থাকার সময়টাতে অনেক বড় অঙ্কের খরচ হয়েছে। প্রায় এক বছরের মতো থাকতে হয়েছিল। তখন তিনি (শাকিব) ১৫ হাজার ডলারের মতো হেল্প করেছিলেন। বাকি প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মতো আমি নিজে বহন করেছিলাম। টাকার অঙ্কটাও বললাম, কারণ এটা নিয়ে অনেক ভুল নিউজ হয়েছে। গিফট বা উপহারের বিষয়গুলো আলাদা। তবে আর্থিক সহায়তা কখনো নিইনি।