শন কনারি আর বেঁচে নেই

শন কনারি আর বেঁচে নেই

কলমে - শিবব্রত গুহ__

___শন কনারি আর বেঁচে নেই। আর বেঁচে নেই তিনি।

এযে বিনা মেঘে বজ্রপাত হওয়ার মতো ঘটনা! একি সত্যি? হ্যাঁ, এ সত্যি। যারা হলিউড সিনেমা

নিয়মিত দেখে থাকেন, বিশেষ করে জেমস বন্ডের সিনেমা, তারা শন কনারিকে ভালোমতো চেনেন।

কি অসাধারণ এক অভিনেতা! ছিলেন বটে শন কনারি। তাঁর অভিনয় দক্ষতা ছিল প্রশংসাতীত।

যে কোন চরিত্রে তিনি ছিলেন সাবলীল। তাঁর অভিনয় চুম্বকের মতো সর্বদা আকর্ষণ করতো

দর্শকদেরকে।

তিনি জন্মেছিলেন ১৯৩০ সালের ২৫ শে আগস্ট,

স্কটল্যান্ডে। তবে, তাঁর ছোটবেলা ছিল না মোটেই

সুখকর। দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করতে করতে

তাঁকে বড় হতে হয়েছে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন

ট্রাকচালক। আর তাঁর মা ছিলেন এক সাফাইকর্মী।

তিনি থাকতেন এডিনবরার এক বস্তিতে। অপরিসীম দারিদ্র‍্যের জন্য, তিনি স্কুলের শিক্ষা

সমাপ্ত করতে পারেননি। কিন্তু, তাঁর মনের জোর ছিল অনেক বেশি। তিনি কিছুতেই ভেঙে পড়তেন না।

তিনি জীবনে কখনো হার মানতে শেখেননি। তাঁর চার দশকের উজ্জ্বল কেরিয়ার সত্যিই ঈর্ষনীয়।

এর মধ্যে উজ্জ্বলতম অধ্যায় কি ছিল জানেন?

সেটা অবশ্যই বন্ড সিরিজ। তিনিই ছিলেন

জেমস বন্ডের চরিত্রে অভিনয় করা প্রথম অভিনেতা।

জেমস বন্ড হিসাবে তিনি অভিনয় করেছেন মোট

সাতটি ছবিতে। তার মধ্যে, ডক্টর নো, থান্ডারবল,

নেভার সে নেভার এগেইন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

সত্যিই, সারা পৃথিবীর মানুষ শন কনারির মধ্যে দিয়ে প্রথমবার জেমস বন্ডকে সিনেমার পর্দায় চাক্ষুষ দর্শন করলো। দর্শক হয়ে গেল মোহিত!

তবে, জেমস বন্ড তাঁকে অস্কার এনে দিতে পারেনি। তিনি অবশ্য অস্কার পেয়েছিলেন,

" দ্য আনটাচেবলস " ছবির জন্য। এছাড়াও,

তিনি, তিনটি গোল্ডেন গ্লোব ও দুটি বাফটা পুরষ্কার পেয়েছেন। জেমস বন্ড ছাড়াও, তিনি

একাধিক বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবির অভিনেতা

হিসাবে সমালোচকদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন।

১৯৬২ সালে, তিনি বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী

ডায়ানা কিলেন্টোকে। কিন্তু, দুঃখের বিষয়, এই যে, এই সম্পর্ক তাঁর হয়নি মধুর। এগারো বছর

পরে, তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাঁর প্রথম পক্ষের

সন্তান জেসন এখন একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা।

১৯৭৫ সালে, শন কনারি আবার বিয়ে করেছিলেন। এবার পাত্রী ফরাসি শিল্পী

মিখেলিন রকব্রান। চার দশক ধরে হলিউডে

দাপিয়ে অভিনয় করে গেছেন শন কনারি।

যখনই তিনি এসেছেন , ক্যামেরার সামনে,

দর্শক হয়ে গেছে মুগ্ধ তাঁর ব্যক্তিত্বে। তিনি ছিলেন

একজন স্টাইল আইকন।

তাঁর এক বড় গুণ ছিল, যে, সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকে বদলে ফেলতেন সুন্দরভাবে।

তিনি ধার বাড়িয়েছিলেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার।

তিনি দিনকে দিন হয়েছেন আরও আরও পরিণত

একজন অভিনেতা। তাঁর জীবনের গল্প যেন রূপকথাকে হার মানায়। তিনি পেরেছিলেন অসম্ভবকে করতে সম্ভব।

শন কনারি ২০০০ সালে, রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে নাইট উপাধি পেয়েছিলেন। নিজের জীবনে তিনি ছিলেন একজন রাজা। তিনি চিরকাল বেঁচেছেন একজন রাজার মত। অভিনয় করেছেন সেটাও একজন রাজারই মতো। যা সত্যিই, এক অবাক করার মতো ঘটনা!

তিনি দারুণ একটা কথা প্রায়ই বলতেন, " কারো বয়স হয়, আর কেউ পরিণত হয়। " সত্যি অসাধারণ উক্তি! এর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর জীবনবোধ। যা মানুষকে বিশেষভাবে শিক্ষিত করে তোলে। তিনি নিজেও একথা বিশ্বাস

করতেন মনেপ্রাণে।

সেই অসাধারণ মানুষটি আজ আর নেই, একথা

ভাবলেও মনে জাগে বিস্ময়! ঘুমের মধ্যেই সম্প্রতি, তিনি চলে গেছেন এই জগত ছেড়ে।

মৃত্যুকালে, তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

তিনি মারা যান ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বাহামায়।

শন কনারির মৃত্যুতে শোকার ছায়া নেমে আসে হলিউড সহ সারা বিশ্ব জুড়ে। তাঁর মতো একজন সুদক্ষ ও জনপ্রিয় অভিনেতার প্রয়াণে, বিরাট শূন্যাতার সৃষ্টি হল হলিউড তথা বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে।