স্মৃতিময় শৈশব

স্মৃতিময় শৈশব

হেনা বেগম 

মেঘলা দিনগুলি যেন আমাদের জীবনের একটা আয়না, বৃষ্টির মনকেমনের দিনগুলিতে জানলার ধরে বসে বিভিন্ন ভাবনাচিন্তা গুলি পারি দেয় দিগন্তের ওপারে। 
মেঘলা দিন আমার খুব পছন্দের ছিল কোন এক সময়। কারন গরমের সময় বৃষ্টির মজাটাই আলাদা। হঠাৎ ঝমঝম করে বৃষ্টি আসলো। আহা কি মজা কি যে তৃপ্তি। বৃষ্টিতে ভিজে খুব মজা করতাম ছোটবেলায়। এখন ও চোখ বন্ধ করলেই ঐ দিন গুলা চোখের সামনে ভেসে উঠে। ছোট ছোট কাগজের নৌকা বানিয়ে খালের উপর যে সেতু টা ছিল সেখানে গিয়ে নৌকাটি ছেড়ে দিতাম অন্য পাশে গিয়ে যখন দেখতাম আমার নৌকাটি আসছে সে যে কি আনন্দ। বাদলা দিনের দুপুর বেলা চায়ের সাথে চাল (করই) ভাজা সাথে নারিকেল বা চিড়া ভাজা কি মজার। কাঁঠালের বিচি, শুকনা শিমের বিচি পুড়ে খাওয়া, কি করে ভুলি। টিনের চালের উপর বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দ এখন ও কানে বাজে। খাল বিল পুকুর নদী নালা পানিতে ভরপুর থাকে। মনে পড়ে খালের পারে দাড়িয়ে দেখতাম কিভাবে মানুষ মাছ ধরছে। বাঁশের বেত দিয়ে তৈরী ডরি বলা হতো ঐটা দিয়ে ছোট মাছ ধরা হতো। মাঝে মাঝে দেখতাম মেঘের গর্জন শুনে পুকুরের  কৈ মাছ লাফ দিয়ে উপরে চলে আসে। সেই মাছ ছোট ভাই খুব কৌশলে ধরতেন। আম্মা মাছ ভাজা করতেন। গরম ভাতের সাথে কৈ মাছ ভাজা কি মজার সাথে ছোট মাছ দিয়ে আমের আমশির টেংগা (টক) আহারে দুরন্ত শৈশব। 
বৃষ্টিতে ভিজে গোসল করা আমার খুব প্রিয় ছিল। ডুব দিয়ে শুনতাম বৃষ্টির শব্দ। পুকুরের এপার থেকে ওপার সাঁতার কাটতাম। আরেকটা মজার দৃশ্য ছিল বর্ষাকালে মাটির রাস্তা গুলা খুব পিচ্ছিল থাকতো তো যে কেউ ধপাস  করে পড়ে চিৎ! এসব নিয়ে কত মজা করতাম। 
আজ  ও আমি ঐ স্মৃতিগুলো নিয়ে বেড়াই। সময় পেলেই ছুটে যাই লেইকের বা নদীর পারে তাকিয়ে থাকি জলের পানে মনের অজান্তেই গুন গুন করি বর্ষার গান। 

এই মেঘলা দিনে একলা 
ঘরে থাকেনাতো মন 
কাছে যাবো কবে পাবো 
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?…