সিলেট বন্যাদুর্গতদের স্মরণে দুটি কবিতা

সিলেট বন্যাদুর্গতদের স্মরণে দুটি কবিতা

জলাজ যন্ত্রণা 

গোলাম রববানী 

জল ঘায়ের গাঢ়ক্ষততে উপগত রক্তপ্রাণ

যাবজ্জীবনের মতো জলশিকলে হলো নির্বাসন 

জলের কোনো জীবন নেই, মরণও বুঝি নেই

তবুও ক্ষণিকের জামিনে জামিনদারের বিকল্প নেই 

জল ও জলাধারের বিষণ্ণতা ধরাতলা জন্মকানা

কড়ি কপর্দকের শুধুই বিবর্ধিত এই নিরবতা 

চাকচিক্য কিছুইনা কেবলইতা গিরগিটির রূপধরা

ধরণী মা রূপেই রূপসী বন্ধুর এই যে পথচলা...

জীবন মরণের নাম জলাজ যন্ত্রণা 

বুঝেছি তা তোমরাও বুঝেছো তা জলন্ত প্রমাণ 

জলদেবী জলবিলাসে

গোলাম রববানী 

উন্নত ধর্ম উপসনালয়গুলোতে উন্নত প্রার্থনা চলছে

কালস্রোতের কালোর কালোরাত কাটানোর জন্যে

বেলি গন্ধরাজ হাসে সদ্যোজাত জন্মযামিনীতে 

ভূমিষ্ঠিত নিষ্পাপ ফুলশিশুটির মত

স্বর্গে নয় মর্ত্যজুড়ে আনন্দাশ্রুতে তলিয়ে দেবার জন্য

জীবনের আলাদা নাম যমের কাছাকাছি এসে 

জলপিতা আজ জলসার জলবিলাসী সারিন্দাকূলে

সুর তুলেছে পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীনের পল্লীগীতে

আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে

অকূল দরিয়ায় বুঝি কূল নাইরে…

জেনেছি মেঘ উদারাসীম পূণ্যজল মেঘবুকেই সসীম

এতো এতো এতো কেঁদে জলমেঘের আর কী হবে

বরষার সব জল যদি বানভাসি নয়নেই নাচে

রবীন্দ্র নজরুলের সব বৃষ্টির কবিতার কী হবে

কলঙ্কিত হবে প্রেমমরা এ সুরমাজলে হাবুডুবু খেলে

কলঙ্কিত হবে পীর দরবেশ পুণ্যভূমি আওলিয়াগনে

আগুন ধরুক পাপজলে মায়াবিনী চাঁদের নয়নে

সবুজের সুবিস্তৃত আলো বিধাতার রূপ বুঝি কালো

হে জলদেবী আজ না হয় স্বেচ্ছাতেই ভুল করি

সুরমাজলের জলকেলি ভুল করে বন্ধ করি বন্ধ করি

প্রথম বরষা ভেজাকদমের মতো আদরের করোটিতে

সুউচ্চ জিরাফের গর্দান থেকে ঘুমপাখি নামিয়ে আনি

নব কিশলয়ের স্বতন্ত্র ভাবনারেখা ধরে বহুদিন চলি

হে মুক্তপাখি মুক্তমনে-ই ঝেড়ে ফেলি লুকোচুরি ছলে

ডানাঝাপটে ডানাঝাপটে ফেলে দিই না সুরমাজলে

হে জালালের জালালি সব কইতর 

আজ সব এক হয়ে গিয়ে একফোঁটা জল করি পার

সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপর জলের সাগর

বন্যার বানভাসি হাসাও আওলার আওলা মজাও

জীবনের নামতো জীবন জলের নাম শুধু থাক জীবন

হে জলদেবী জলবিলাস ভুলে যাও 

হে জলদেবী হে জলদেবী জীবনের জয়গান গাও...