হাতছানি (ক্ষুদ্র গল্প )
গোলোকেশ্বর সরকার
নৈঋত বলল, " বাবা , তুমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ো । স্কুল ছুটি হয়ে গেছে । তুমি আর তোমার এক বন্ধু মিলে বাড়ি ফিরছিলে । অল্প দূর যাওয়ার পর তোমরা দু'জনে মারামারি করতে শুরু করেছিলে । দূর থেকে সরনবাবু মারামারি দেখে চতুর্থ শ্রেণির বড় কয়েকজন ছেলেকে পাঠিয়েছিল তোমাদের দু'জনকে ধরার জন্য ।তোমাদেরকে ধরে নিয়ে এলে সরনবাবু তোমাদের দু’জনকে বেত দিয়ে খুব মেরেছিলেন ।"
নীরববাবু শুয়ে--শুয়ে হো --হো করে হেসে উঠলেন । মুহূর্তে নীরববাবুর চোখ--মুখ সতেজ হয়ে গেল । খুশি ঝরে পড়তে লাগল তার দু'চোখ দিয়ে । আনন্দে ভরে গেল তাঁর সারা শরীর । বুক ভরা সুখ নিয়ে নীরববাবু বলে উঠলেন , " মনে পড়েছে । মাস্টারমশাই একদম সঠিক বলেছেন ।"
বিছানায় শুয়ে নীরববাবু । বয়স পঁয়ষট্টি বছর । স্ত্রী আছেন । বাবা-মা অনেকদিন হল গত হয়েছেন । এখানে শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি । পাঁচ বছর হল চাকরি থেকে অবসর নেওয়া । অবসরের পর থেকে বিভিন্ন রোগ তাঁকে ঘিরে ধরে । অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি
আট মাস আগে নীরববাবু একদিন নৈঋতকে বলেছিল, " নৈঋত , আমার ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে । শৈশব আমাকে ডাকছে । তুই কুমারগঞ্জে যাবি । কুমারগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের কাছে সরন দত্তের বাড়ি । সরনবাবু আমাদের বুনিয়াদপুরে বড়াইল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন । আমি প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ওনার প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি । শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা থাকায় ওই চার বছর তিনি একাই স্কুল চালাতেন । ওনার কাছে আমার শৈশব ধরা আছে, আমার ছোটবেলা সঞ্চিত আছে । এখান থেকে কুমারগঞ্জের দূরত্ব প্রায় সত্তর কিলোমিটার । তুই মাঝে--মধ্যে কুমারগঞ্জের সরনবাবুর কাছে যাবি আর আমার শৈশবের ঘটনা শুনে এসে আমাকে জানাবি ।"
"ঠিক আছে বাবা।" নৈঋত জানিয়েছিল ।
তারপর থেকে নৈঋত পনেরো--কুড়ি দিন পর পর কুমারগঞ্জে নব্বই বছর বয়সী সরনবাবুর কাছে যায় । যাওয়া--আসার টাকা নীরববাবু দেন । নৈঋত নীরববাবুর শৈশবের ঘটনা জেনে এসে নীরববাবুকে জানায় ।
নৈঋত বাস থেকে নেমে টোটো ধরে বাড়িতে এল। কারও বাড়ি ঢোকার শব্দ পেয়ে নীরববাবু বিছানায় শুয়ে থেকে বলে উঠলেন , "নৈঋত ,এলি বাবা ?"
"হ্যাঁ, বাবা ।"
" আয় , আয় । তাড়াতাড়ি আয় । দেরি সহ্য হচ্ছে না ।" আগের সব বারের মত এবারও নীরববাবু নৈঋতকে কুমারগঞ্জে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছিলেন ।
হাত-মুখ ধুয়ে নৈঋত নীরববাবুর কাছে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল । নৈঋত বলতে লাগল, "বাবা, তখন তুমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ো । গ্রীষ্মকাল । তীব্র জলের সংকট দেখা দিয়েছিল । সরনবাবু ক্লাস নিচ্ছিলেন । সরনবাবু ক্লাসের সকলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , "বল তো ,জলের এই আকালের সময় আমাদের কী করা উচিত ?" সবাই চুপচাপ । তমি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলে, " স্যার, আমাদের এখনই ডাব--তরমুজ কিনে রাখা উচিত ।"
নীরববাবু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । তাঁর দু'চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল । নৈঋত অবাক হয়ে গেল । মনে মনে ভাবল, তবে কী সরনবাবু কোনও কিছু ভুল বলেছেন ? এর আগে পরপর দু'বার তিনি এমন করে কেঁদেছিলেন ।
নীরববাবু জোরে কেঁদে উঠলেন । বললেন , "নৈঋত, আগে শৈশবের ঘটনা আমাকে খুশি দিত, আনন্দ দিত, সুখ দিত। কিন্তু ছোটবেলার ঘটনা এখন আমাকে শুধু কান্না দেয় । কেবল কান্না দেয় ।" বলে নীরববাবু অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন । কাঁদতেই থাকলেন শুধু ।
নীরববাবু শুয়ে--শুয়ে হো --হো করে হেসে উঠলেন । মুহূর্তে নীরববাবুর চোখ--মুখ সতেজ হয়ে গেল । খুশি ঝরে পড়তে লাগল তার দু'চোখ দিয়ে । আনন্দে ভরে গেল তাঁর সারা শরীর । বুক ভরা সুখ নিয়ে নীরববাবু বলে উঠলেন , " মনে পড়েছে । মাস্টারমশাই একদম সঠিক বলেছেন ।"
বিছানায় শুয়ে নীরববাবু । বয়স পঁয়ষট্টি বছর । স্ত্রী আছেন । বাবা-মা অনেকদিন হল গত হয়েছেন । এখানে শ্রীরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি । পাঁচ বছর হল চাকরি থেকে অবসর নেওয়া । অবসরের পর থেকে বিভিন্ন রোগ তাঁকে ঘিরে ধরে । অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি
আট মাস আগে নীরববাবু একদিন নৈঋতকে বলেছিল, " নৈঋত , আমার ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে । শৈশব আমাকে ডাকছে । তুই কুমারগঞ্জে যাবি । কুমারগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের কাছে সরন দত্তের বাড়ি । সরনবাবু আমাদের বুনিয়াদপুরে বড়াইল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন । আমি প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ওনার প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি । শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা থাকায় ওই চার বছর তিনি একাই স্কুল চালাতেন । ওনার কাছে আমার শৈশব ধরা আছে, আমার ছোটবেলা সঞ্চিত আছে । এখান থেকে কুমারগঞ্জের দূরত্ব প্রায় সত্তর কিলোমিটার । তুই মাঝে--মধ্যে কুমারগঞ্জের সরনবাবুর কাছে যাবি আর আমার শৈশবের ঘটনা শুনে এসে আমাকে জানাবি ।"
"ঠিক আছে বাবা।" নৈঋত জানিয়েছিল ।
তারপর থেকে নৈঋত পনেরো--কুড়ি দিন পর পর কুমারগঞ্জে নব্বই বছর বয়সী সরনবাবুর কাছে যায় । যাওয়া--আসার টাকা নীরববাবু দেন । নৈঋত নীরববাবুর শৈশবের ঘটনা জেনে এসে নীরববাবুকে জানায় ।
নৈঋত বাস থেকে নেমে টোটো ধরে বাড়িতে এল। কারও বাড়ি ঢোকার শব্দ পেয়ে নীরববাবু বিছানায় শুয়ে থেকে বলে উঠলেন , "নৈঋত ,এলি বাবা ?"
"হ্যাঁ, বাবা ।"
" আয় , আয় । তাড়াতাড়ি আয় । দেরি সহ্য হচ্ছে না ।" আগের সব বারের মত এবারও নীরববাবু নৈঋতকে কুমারগঞ্জে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছিলেন ।
হাত-মুখ ধুয়ে নৈঋত নীরববাবুর কাছে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল । নৈঋত বলতে লাগল, "বাবা, তখন তুমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ো । গ্রীষ্মকাল । তীব্র জলের সংকট দেখা দিয়েছিল । সরনবাবু ক্লাস নিচ্ছিলেন । সরনবাবু ক্লাসের সকলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন , "বল তো ,জলের এই আকালের সময় আমাদের কী করা উচিত ?" সবাই চুপচাপ । তমি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলে, " স্যার, আমাদের এখনই ডাব--তরমুজ কিনে রাখা উচিত ।"
নীরববাবু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন । তাঁর দু'চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল । নৈঋত অবাক হয়ে গেল । মনে মনে ভাবল, তবে কী সরনবাবু কোনও কিছু ভুল বলেছেন ? এর আগে পরপর দু'বার তিনি এমন করে কেঁদেছিলেন ।
নীরববাবু জোরে কেঁদে উঠলেন । বললেন , "নৈঋত, আগে শৈশবের ঘটনা আমাকে খুশি দিত, আনন্দ দিত, সুখ দিত। কিন্তু ছোটবেলার ঘটনা এখন আমাকে শুধু কান্না দেয় । কেবল কান্না দেয় ।" বলে নীরববাবু অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলেন । কাঁদতেই থাকলেন শুধু ।