আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ দ্বারা ডিপরাইভ হচ্ছি: খন্দকার মোশাররফ

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আপনারা দেখেছেন যে, মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে আমাদের বাংলাদেশের নদীগুলো কি পরিমান গতি হারিয়েছে এব্ং কি পরিমান চরিত্রগতভাবে পরিবর্তন হয়েছে। একটা উদাহরণ; প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে সেটা ফারাক্কা চুক্তি। এই চুক্তি আওয়ামী লীগ সরকার যখন দ্বিতীয় যে চুক্তি করেছিলো সেটাতে গ্যারান্টি ক্লজ নাই। ফারাক্কা পয়েন্টে একটা গ্যারেন্টি ক্লজ থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব যখন চুক্তি করেছিলেন এই ফারাক্কার গ্যারান্টি ক্লজ ছিল।

শুক্রবার (৫ মে) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সেমিনার কক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়জিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন হাসনা জসিমউদ্দিন মওদুদ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলের চুক্তিতে আমাদেরকে ফাঁকি দিয়ে ফারাক্কা পয়েন্টে গ্যারান্টি রাখেনি। এখানে যা পানি ভাগাভাগি হবে সেটার একটা এবং সেখানে আমাদেরকে ফাঁকি দেয়া হলো… বলা হলো যে, ৩৩ হাজার কিউসেক পানি থাকবে। এখন কিন্তু অনেক সময়ে সেখানে ১২ হাজার কিউসেক পানিও থাকে না। কেননা ফারাক্কা পয়েন্টে গ্যারান্টি নাই। তারা (ভারত) উপরি অঞ্চলে বেশির ভাগ পানি ব্যবহার করে ফেলছে ফারাক্কার সেই পয়েন্টে পানি আর আসছে না। অতএব বাংলাদেশ পানির ন্যায্য ভাগ পাচ্ছে না। তার প্রতিক্রিয়া কি আপনারা বাংলাদেশের পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তনে দেখতে পাচ্ছেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, তিস্তাসহ ৫৪ নদীর উপরিভাবে পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। ফলে আমাদের নদীতে পানি কম আসছে, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানির মাধ্যমে যে পলি আমাদের দে্শে আসতো সেই পলি কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ, কৃষি নির্ভর দেশ। এখানে আমরা অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন শিল্প কলকারখান, আমাদের পরিবহন, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণ করছি শুধু লোক দেখানোর জন্য অথবা কোনো দেশের ইঙ্গিতে ভয়ে তাদেরকে খুশি করার জন্য করছি। এতে আমরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এটা কিন্তু আমাদের সকলকে আরও বেশি গভীরভাবে অনুভবন করতে হবে। আমরা যদি জাতীয়তাবাদী চেতনার স্বার্থে কথা বলি তাহলে আমরা যে পার্শ্ববর্তী দেশ দ্বারা ডিপরাইভ হচ্ছি এটা জনগনকে অনুধাবন করতে হবে।

নদী দখল রোধ করতে দীর্ঘ-মধ্যম এবং বর্তমান অবস্থায় করনীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে বলে মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ।

সাবেক পানি সম্পাদক মন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের নদ-নদীর পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের জনগনকে সোচ্চার হতে হবে। সরকারকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে, সরকারের মেরুদণ্ড সোজা থাকতে হবে। বলতে হবে আমার দেশের নদ-নদীর পানির ন্যায্য হিৎসা আমরা চাই।

তিনি বলেন, যৌথ নদী কমিশনের মিটিং বছরে চার বার হতে হবে, সেখানে আমাদের ন্যায্য হিৎসার গ্যারেন্টি করে দিতে হবে… প্রত্যেকটা চুক্তির গ্যারেন্টি ক্লজ থাকতে হবে, আরবিটেশন ক্লজ থাকতে হবে। ইউএন কনভেনশন অব ১৯৯৭ ক্লজ আমাদেরকে রেটিফাইড করতে হবে। ভারত এটার চরম বিরোধী। আমরা এই পথ অবলম্বন করে আমাদেরকে নদীর পানির ন্যায্য হিৎসা নিশ্চিত করার সুযোগ আমাদেরকে নিতে হবে।

নদ-নদীর পানি ন্যায্য বন্টনে ভারত সরকারের একতরফা ভুমিকার কঠোর সমালোচনা করেন সাবেক এই পানি মন্ত্রী।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল ফাইনেন্সের নির্বাহী প্রধান জলবায়ু বিশেষজ্ঞ নির্বাহী জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন খান বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নদীর বিষয়ে শক্তিশালী অবস্থান নেয়া উচিত… সে যত বড় শক্তিশালী হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক আপনারা নদী দখলের ব্যাপারে নদী দূষণের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান পরিস্কার করা উচিত। কারণ নদী দখলকারী, নদী দূষণকারী মানবতার শত্রু, প্রকৃতির শত্রু। আজকে বাংলাদেশ বাঁচবে যদি নদী বাঁচে। যারা নদীকে মেরে ফেলছে তারা বাংলাদেশের মানুষ মেরে ফেলতে অবদান রাখছে।

বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ও কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুর যৌথ সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন এবং সেভ দ্য সুন্দর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।