ইউক্রেন-রাশিয়া একই ভাঙছে পশ্চিমারা

ইউক্রেন-রাশিয়া একই ভাঙছে পশ্চিমারা

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

সোভিয়েত ইউনিয়নে রাশিয়ার সঙ্গেই ছিল ইউক্রেন। রুশ-ইউক্রেনীরা একই জাতিগোষ্ঠী। একই মানুষ। ভাঙার চেষ্টা করছে পশ্চিমারা।

রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘রাশিয়া-১’-এ প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।


যুদ্ধ বন্ধ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমোঝতার জন্য রাশিয়া প্রস্তুত। তবে সে প্রস্তাব সাড়া দিচ্ছে না ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। খবর আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্সের।

পুতিন জানান, পশ্চিমের আসল উদ্দেশ্য রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করা। রাশিয়াকে ‘ঐতিহাসিক রাশিয়া’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, ভূ-রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়। ‘ঐতিহাসিক রাশিয়া’ ধারণাটি ব্যবহার করে তিনি বুঝিয়ে দেন, ইউক্রেনীয় এবং রুশরা এক মানুষই।

যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে পশ্চিমের উদ্দেশে বলেন, তারা সবসময়ই ‘ভাগ করো, শাসন করো’ নীতিতে বিশ্বাসী। সে চেষ্টা তারা অব্যাহত রেখেছে।

তবে আমাদের লক্ষ্য ভিন্ন কিছু। আমরা কেবল রাশিয়ার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। পুতিন বলেন, ‘আমরা সঠিক পথে কাজ করছি, আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ, আমাদের নাগরিক, আমাদের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছি। জনগণকে রক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমঝোতার জন্য আমরা প্রস্তুত। কিন্তু সেটি তাদের ওপর নির্ভর করছে। সমঝোতার বিষয়টি আমরা নাকচ করছি না, তারা করছে।’

২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণ শুরুর পর প্রথমবার ইউক্রেনের বাইরে সফর করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। প্রথম সফরে পেন্টাগনের সবচেয়ে উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে সমর্থনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছেন তিনি।

এ নিয়েও মন্তব্য করেছেন পুতিন। যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা এটা ধ্বংস করব, ১০০ ভাগ।’

সবসময় হাসিখুশি থাকার নির্দেশ জেলেনস্কির : বড়দিনের আগে সবাইকে ছুটি কাটাতে ও হাসিখুশি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

শনিবার খেরসনে হামলার কিছুক্ষণ পরেই এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই আহ্বান জানান। এ সময় ইউক্রেনের নাগরিকদের হামলার মধ্যেও অবিচল থাকার নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে আমরা মানিয়ে নিচ্ছি। আমরা হামলা, হুমকি, পারমাণবিক ভয়ভীতি, সন্ত্রাস এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেও টিকে আছি। এ শীতটাও আমরা সেভাবেই পার করতে সক্ষম। কারণ আমাদের লড়াইটা কিসের জন্য, তা আমরা জানি। হয়তো আমাদের অনেককে অন্ধকার এবং ঠান্ডার মধ্যেই বড়দিন কাটাতে হবে। আমরা সব সময়ের মতো ছুটি উদযাপন করব। আমরা সব সময়ের মতো হাসিখুশি থাকব। এ সময় তিনি ইউক্রেনীয়দের অলৌকিক কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, অলৌকিক কিছু তৈরি করব আমরা নিজেরাই। তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভ করতে হলে চড়া মূল্য দিতে হয়। কিন্তু দাসত্ব গ্রহণ করলে তার জন্য আরও বেশি মূল্য দিতে হবে। জেলেনস্কির ভিডিও বার্তার আগে দেশটির খেরসন অঞ্চরে ভয়াবহ আক্রমণ চালায় রুশ সেনারা। যাতে ১০ জন নিহত এবং আরও ৬৮ জন আহত হয়। এই ঘটনায় রাশিয়াকে সন্ত্রসী রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করে জেলেনস্কি। বলেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে রুশ সেনারা আনন্দ লাভ করে। যদিও বেসামরিকদের ওপর হামলার দায় রাশিয়া অস্বীকার করেছে।

দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া : দীর্ঘ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। এজন্য সমরাস্ত্র উৎপাদনে গতিসঞ্চার ও সশস্ত্র বাহিনীতে নতুন ইউনিট সংযোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও অন্য কর্মকর্তারা একের পর এক অস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করছেন। শুক্রবার তুলা শহরে শেগলোভস্কি মেশিন বিল্ডিং প্লান্ট পরিদর্শন করেছেন পুতিন। তিনি কারখানার বেশ কয়েকটি প্রডাকশন ও ডিজাইন ফ্লোর ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পুতিনের আগমন উপলক্ষ্যে শেগলোভস্কি কারখানা কর্তৃপক্ষ টাইগার-এম ও করনেট ট্যাংকের নতুন একটি মডেল উন্মোচন করে। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তুলা অস্ত্র তৈরির জন্য বিখ্যাত। বন্দুক থেকে শুরু করে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, মিসাইল ও অন্যান্য ভারী অস্ত্র প্রস্তুত হয় এ শহরের কয়েকটি কারখানায়। পুতিন তার সফরকালে তুলার সমরাস্ত্র কারখানাগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি উৎপাদন কার্যক্রমে গতিসঞ্চারের তাগিদ দেন। যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকতর কার্যকর অস্ত্র তৈরির স্বার্থে প্রয়োজনে ডিজাইন কার্যক্রমে সেনা কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।