গ্যাসে আর ভর্তুকি নয়, সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাস সরবরাহে আর কোন ভর্তুকি দেওয়া হবে না। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাইলে বিদেশ থেকে কেনা দামেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল হয়েছে।’

বুধবার (১৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরোদী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসে এখনো ভর্তুকি দিচ্ছি। কিন্তু জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।

তিনি আরও বলেন, গ্যাস যে মূল্যে কেনা হবে, সেই মূল্যই গ্রাহককে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি। এভাবে যদি সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে পারে।

তিনি বলেন, গ্যাস উৎপাদন ও বিতরণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, তাহলে সেটা কী করে দেব? দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী আছেন। এখানেও আছেন তাদের আমি তো স্পষ্ট বলেছি, গ্যাস আমি দিতে পারব, কিন্তু যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে আনব, সেই মূল্য দিলে আমরা গ্যাস দিতে পারব। আমরা ভর্তুকি যেটুকু বাড়ানোর বাড়িয়েছি। তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায়, তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা ভুলে যাবেন না, ভর্তুকির টাকা তো জনগণেরই।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের দাম কম থাকলে আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা ঠিকমত বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম আয়েশ করবে আর স্বল্প মূল্যে পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি।

এর আগে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আইএমএফের ঋণের শর্তে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সরকার কীভাবে সামলাবে সেই প্রশ্ন রাখেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তখনই ঋণ দেয় যখন ওই দেশের ঋণ পরিশোধ করার যোগ্যতা থাকে। আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসে এখনো ভর্তুকি দিচ্ছি। কিন্তু জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। তারপরও সব মানুষ খাদ্য যাতে কম দামে পায় সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। যারা কিছুই করতে পারে না তাদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষিতেও ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।

সংসদ নেতা বলেন, আমরা তো বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি, গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছি। আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোনো দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়। কেউ দেয় না। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়িয়েছি। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংল্যান্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধের পর।

আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ আজ বাড়ালাম আর বাল্কে কিছু গ্যাসের দাম। এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য সারাবিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে, যোগ করেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। যেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি।

এর থেকে যারা নিম্ন আয়ের তাদের জন্য আমরা ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি। সেইসঙ্গে তেল, ডাল ও চিনি দেওয়া হচ্ছে। আর একেবারে হতদরিদ্র যারা কিছুই করতে পারে না তাদের বিনা-পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি।

কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি। ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি। এটা একটা উন্নত দেশের কথা বললাম। পৃথিবীর সব দেশে এই অবস্থা বিরাজমান। বাংলাদেশ এখনো সেই অবস্থায় পড়েনি।

উল্লেখ্য, সর্দি জ্বরে আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংসদে এম আব্দুল লতিফের মৌখিক প্রশ্নের দীর্ঘ ১৭ পৃষ্ঠার জবাব দেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে উত্তর দিতে গিয়ে তিনি কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার অস্থির লাগছে’। বসে উত্তর দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে অনুমতি চাইলে স্পিকার তার বক্তব্যের বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করার অনুরোধ করেন।

এর আগে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টি মুজিবুল হক পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু পাকিস্তান সফরের পর তেহরিক-ই ইনসাফ ক্ষমতাচ্যুত হয়। তিনি বাংলাদেশে আসার পরে অনেকে মনে করেছিল সরকারের কিছু একটা হবে। জানি না তিনি যাওয়ার পরে সরকারকে খুব খুশি খুশি লাগছে।

আবার একটি দল মনে হয় খুবই অখুশি। আমরা জাতীয় পার্টি এটাকে ওইভাবে নিচ্ছি না। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছি। রাজনৈতিকভাবে বর্তমান যে অবস্থা, তাতে মানুষের মাঝে একটি গুঞ্জন আছে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা যেন হয়। এ ধরনের কিছু আছে কি না? এক পর্যায়ে তার বক্তব্য চলাকালেই মাইক বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারি দলের মো. হাবিবর রহমানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সফলতার ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আর্থিক খাত ইত্যাদির দক্ষতা বৃদ্ধি ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের সমপর্যায়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীসহ ৩০ সদস্য বিশিষ্ট স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৬ আগষ্ট থেকে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ থেকে এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ ঠিক করা হয়েছে। যেগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গর্ভনমেন্ট। এর আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কাক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে কানেক্টিভিটি বা অবকাঠামো উন্নয়ন, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্সারদের উন্নয়ন-প্রশিক্ষণ, ইভেন্ট এবং প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ নানাবিধ অবকাঠামোগত ও প্রশিক্ষণগত পদক্ষেপ সেখানে থাকবে।