গ্রহণ (পর্ব ২)

গ্রহণ  (পর্ব ২)

শামীমা আহমেদ 

দীপিকার পাশের ঘরটি ওর মায়ের ঘর। দীর্ঘ চার বছর প্যারালাইজড হয়ে মা বিছানায় শয্যাশায়ী । সার্বক্ষণিক তিনজন আয়া তার দেখাশুনা করছে। বাবাও গত হয়েছেন তা প্রায় ছয় বছর হতে চললো।

দীপিকার বাবা একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সেল্ফ মেইড ম্যান। এজন্য তার অহংকারের কমতি ছিল না। সেই অজপাড়া গাঁয়ের একটি ছেলে প্রচন্ড পরিশ্রম আর সততা দিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন আর মেয়েকে যথাযথ শিক্ষিত করে তার হাতে তা তুলে দিয়ে গেছেন। সব বিষয়ে ছিল তার ভীষণ কড়াকড়ি। সবকিছু সময় আর নিয়মমত হতে হবে। অনেক কড়া শাসনে মানুষ হয়েছে দীপিকা আর ওর ছোটভাই দীপন। দীপন এখন অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশুনা করছে। দীপন দীপিকার চেয়ে দশ বছরের ছোট। একদিন খুব সকালে মায়ের কোলে এই অতিথির আগমনে দীপিকা ভীষণ আনন্দিত হয়েছিল ! এত বড় ব্যবসা তাই ছেলে সন্তান প্রয়োজন! দীপনের পড়াশুনার ব্যাপারে দীপিকা বেশ খোঁজখবরে রাখে। সে যেন পড়াশুনা শেষে এই ব্যবসার দায়িত্বটা বুঝে নেয়।এটাই দীপিকার ইচ্ছা।

বিছানায় শুয়েও এই দুই ভাইবোনের জন্য মায়ের দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই। মায়েরা বুঝি এমনি হয়। মায়ের সবচেয়ে বেশি চিন্তা দীপিকার বিয়ে নিয়ে। কেন সে এখনো বিয়ে করছে না আর কেনইবা বিয়ের ব্যাপারে এমন অনীহা ? যদিও মায়ের সবই জানা তবুও যেন বারবার তার একই বিষয় নিয়ে কথা বলা। মায়ের ঘরে দীপিকা খুব কম যায়। অফিস থেকে ফিরে আয়াদের কাছেই মায়ের খোঁজখবর নেয়া। দীপিকা এভাবেই বেশ ভাল আছে। এ জীবনটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই।সবই অদৃষ্ট মেনে নিয়েছে। সবই কি অদৃষ্ট? সে ব্যাপারেও দীপিকা সন্দিহান। কিছু কিছু অদৃষ্ট আমরা নিজেরাই তৈরী করি।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কখনো আয়নায় নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকা। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সে। দেখতে একেবারেই কোনদিক দিয়ে দীপিকার কোন ঘাটতি নেই। মাঝে মাঝে পাশে একটা শূন্যতা অনুভব করা! তখনই যেন শাহেদের মুখটা ভেসে উঠে। আর তক্ষুনি দীপিকা নিজেকে আয়না থেকে সরিয়ে নেয়। আর ভাবে এ হয়না। এ ভাবনা একেবারেই ঠিক নয়। 

নিজের ঘরটিতে একটি ছোটখাট সংসার সাজানো। এখানেই পুরো সময়টা কাটায় দীপিকা। শরীরের সাথে মনের সংযোগে চলে তার কথোপকথন। এভাবেই একেকটি দিন কাটছে। খুব ইচ্ছে দীপন পড়াশুনা শেষ করে ফিরে এলে বাড়ির ছাদের একপাশে নিজের মন মত একটি থাকবার ঘর আর বাকী অংশে একটা বাগান সাজিয়ে নিবে অবসরের সময় কাটাতে।

দরজায় আওয়াজ হলো।

দীপিকা দরজা খুললো। রাতের বেলা যে আয়াটা মায়ের কাছে থাকে সেইজন। বলছে, আপুমনি, খালাম্মা আপনাকে ডাকছেন। দীপিকা বেশ বুঝতে পারছে মা কেন ডাকছে।

সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি।দীপিকা বিরক্ত প্রকাশ করে মায়ের ঘরের দিকে গেলো।

চলবে...