গ্রহণ (৭ম পর্ব)

গ্রহণ  (৭ম পর্ব)

শামীমা আহমেদ 

শাহেদের অফিসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দশটা ছুঁই ছুঁই হয়ে গেলো। সকালবেলা উত্তরা থেকে গুলশান আসতেই যেন ক্লান্ত হয়ে যাওয়া। তবুও মনে কর্মশক্তি বজায় রাখতে হবে। প্রাইভেট জব এখানে প্রতিটা মিনিট কি সেকেন্ড হিসেব করে চলা।দিন শেষে মানসিকভাবে ভীষণ একজস্টেড হয়ে যাওয়া। সহকর্মীরা

একে একে অফিসে ঢুকছে। সবাই হাই হ্যালোর ইশারা ইঙ্গিতে হাসি বিনিময় হচ্ছে।

এই হাসিটা সারাদিন বজায় রাখতে হবে, পার্ট অব জব ! অফিসে শাহেদের ওয়ার্ক ফ্লোর তেরো তলায়। উঠতেও লিফটে এক লম্বা লাইনে অপেক্ষা। আজ সারাদিনের নানাধরণের কাজের ভাবনা মাথায় সাজিয়ে নেয়া।দুটো লিফটের জন্য দুলাইনে সবাই অপেক্ষমান। হঠাৎ পাশে লাইনটিতে একটি মেয়েকে দেখে শাহেদ চমকে উঠলো ! মনে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দীপিকা! এতটা মিল ! মনটায় কেমন যেন সবকিছু চুপসে গেলো।সেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য শাহেদ যতক্ষণ অপেক্ষা করতো দীপিকা তার গাড়ি দাঁড় করিয়ে শাহেদের সাথে সময় দিত। খুব মনে পড়ছে দিনগুলির কথা।যতটা কর্মস্পৃহা নিয়ে অফিসে ঢুকেছিল তা যেন সহসাই মিইয়ে গেলো। "দীপিকা" শাহেদের হৃদয়ে দাগ কাটা একটি নাম। সেই শেষ দেখার দিনটা মনে হলে আজো চোখ জলে ভরে উঠে।

জিসান দীপিকার কাজিন।জিসান ওদের ডিপার্টমেন্টের এক ব্যাচ জুনিয়র ছিল। দীপিকা আর শাহেদের ব্যাপারটা কিছুটা হলেও বুঝে নিয়ে ছিল।সে-ই খবরটা দিল। এমনিতেই দীপিকার অনুপস্থিতিতে ক্লাসে মন বসছিলো না। তার উপর এমন একটা খবর যা একেবারেই শাহেদের ভাবনার ত্রিসীমানায় ছিল না। জিসান জানালো দীপিকা আপু পঁচিশ তারিখে লন্ডন যাচ্ছে হায়ার স্টাডিজের জন্য। সেটা শাহেদের জানাই ছিল কিন্তু যে খবরটায় শাহেদ ভীষণ ধাক্কা খেলো আজো তা মনে হলে শিউরে উঠে।জিসান জানালো বাইরে পড়তে যাওয়ার আগে দীপিকা আপুর

বিয়ে। শুধু পারিবারিকভাবে সবাই এটা জানে এখনো বাইরের কেউ না। শাহেদের যেন পৃথিবীটি থমকে গেলো।

দীপিকার বাবার ব্যবসায়ী বন্ধুর ছেলে। ওরা লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে অনেক বছর হলো। যাবার আগে এখানে বিয়ে পড়ানো হবে। আর দীপিকা তার পড়াশুনা লন্ডনে শ্বশুর বাড়ি থেকেই করবে। বিশ তারিখে তারা আসবে লন্ডন থেকে সেদিনই এনগেজমেন্ট। 

তারপর একদিন বাদেই বিয়ে পড়ানো হবে।

পড়াশুনার কোন এক ফাঁকে দেশে এসে বিয়ের আয়োজনে অতিথি নিমন্রণ হবে।

শাহেদ যেন একটা শুন্যতা বোধ করছে। নিজেকে কেমন যেন ওজনহীন আবার পা চলতে গিয়ে বেশ ভার মনে হচ্ছে। পা যেন চলতেই চাইছে না। সেদিন শাহেদের এমন হয়েছিল,,আজ কত তারিখ কিছুতেই সেটা মনে করতে পারছিল না। ক্লাসের পড়া একেবাই মাথায় ঢুকছিল না। টিচার তার লেকচার দিয়ে যাচ্ছেন। সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ বোর্ডের কর্ণারে লেখা তারিখটা চোখে পড়ল। আজ ষোল তারিখ। আর মাত্র পাঁচদিন।দীপিকা আর তার মাঝে বিশাল এক দুরত্ব হয়ে যাচ্ছে। শাহেদ মন থেকে স্থির হতে পারছে না।সহপাঠী থেকে বন্ধুত্ব সেটা থেকে ভাললাগা ছিল, বুঝতে পারছিল না শাহেদ সেটা থেকে কি ওদের মাঝে ভালবাসা জমতে শুরু করেছিল কিনা ? তাহলে বন্ধুর এত সুখবরে কেন এমন কষ্টবোধ হচ্ছে । যে করেই হউক দীপিকার সাথে যোগাযোগ করতে হবে আর এরজন্য জিসানের সাহায্য ভীষণ প্রয়োজন। ক্লাস শেষে তিনতলায় জিসানের ক্লাসরুমের সামনে শাহেদ অপেক্ষা করতে লাগলো। 

moov please! একজনের ডাকে হঠাৎ শাহেদ চমকে উঠল! কখন যে

লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে টাচ করেছে আর স্থিরতা থেকে সবাই একপা দু'পা আগাতে শুরু করেছে শাহেদ তা খেয়ালই করেনি। কার ডাকে যেন সম্বিৎ ফিরে এলো।দীপিকার মত দেখতে মেয়েটি কখন যে পাশের লিফটে উঠে গেছে তা খেয়ালই করেনি শাহেদ।

শাহেদের লিফট যেন এক সেকেন্ডে তেরো 

তলায় উঠে এলো।ভাবনার অতলান্তে শাহেদ।

আজ মনটাকে কাজে ফেরাতে শাহেদের বেশ বেগ পেতে হলো। চলবে....