চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, গ্যাসের চাহিদা মেটানোর জন্য স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

তিনি জানান, চলতি কৃষি সেচ মৌসুম, আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের বর্ধিত চাহিদা মেটানো, শিল্প খাতে উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং রপ্তানিমুখী কলকারখানার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে স্পট মার্কেট হতে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করতে হবে। সে কারণে সরকার অন্যান্য ভোক্তা শ্রেণিকে অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ, শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ এবং বাণিজ্যিক খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব তথ্য জানান। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকী কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার দাম কিছুটা বাড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, আমদানিকৃত তরল গ্যাসের ব্যবহার, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ, উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে সমন্বয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমানের সমন্বয়ের কারণে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকীর পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

শেখ হাসিনা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সকল প্রকার জ্বালানির মূল্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এছাড়া বীমা খরচ, ঝুঁকি ব্যয়, ব্যাংক সুদ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকা মূল্যমান সমন্বয় করাসহ সামগ্রিকভাবে জ্বালানি খাতে ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি মূল্যও অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি বাবদ দিতে হচ্ছিল।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় রোধ করার মাধ্যমে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: নিয়মিত ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, জরিমানা আদায়, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি।

বিশ্ব মন্দা নিয়ে সরকার সতর্ক

জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার সম্ভাবনা সম্পর্কিত বৈশ্বিক পর্যবেক্ষণ বিষয়ে সরকার সতর্ক দৃষ্টি রাখছে এবং সম্ভাব্য মন্দার প্রভাব হতে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতিসমূহের মধ্যে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে।

তিনি জানান, উৎপাদনশীল ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় সম্পদ প্রবাহ অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে সরকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাসের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আয়বর্ধক উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক জনগণের ক্রয়ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হলে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব অনেকাংশে প্রশমন ও এড়িয়ে চলা সম্ভব।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ

সরকার দলীয় সংসদ কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের অভূতপূর্ব সাফল্য বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষি পণ্য রফতানি বৃদ্ধি করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমাদের সরকার সার ব্যবস্থাপনা সংস্কার, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রণোদনা ও সারসহ কৃষি উপকরণে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

রেমিট্যান্স বাড়াতে নানান উদ্যোগ

চলতি অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ গত ৬ মাসে ১২ হাজার ৪৫২ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি দলের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ এবং ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৫২ দশমিক ১২ মিলিয়ন