পুরস্কার প্রাপ্তি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে: মেয়র আতিক

পুরস্কার প্রাপ্তি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে: মেয়র আতিক

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

পুরস্কার প্রাপ্তি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে গুলশান-২ এ নগরভবনে সি৪০ সিটিস সম্মেলন ও ব্লুমবার্গ অ্যাওয়ার্ড-২০২২ অর্জন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন ডিএনসিসি মেয়র।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরের বিপুল জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় মাঠ পার্ক নেই, ওপেন স্পেস নেই। সব জায়গায় শুধু প্লট আর ভবন। শহরকে বাঁচাতে মাঠ পার্ক নির্মাণ করতে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঢাকাকে সবুজ, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বসবাসযোগ্য শহর তৈরি করতে সবুজ জায়গা সম্প্রসারণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। উন্মুক্তস্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন কার্যক্রমের স্বীকৃতি হিসেবে সি৪০ সিটিস ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস অ্যাওয়ার্ড-২০২২ অর্জন করেছে ডিএনসিসি। পুরস্কার প্রাপ্তি দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্লুমবার্গ অ্যাওয়ার্ডটি প্রিয় নগরবাসীকে উৎসর্গ করলাম।'

উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে সি৪০ সিটির এবারের শীর্ষ সম্মেলনে ১৯ অক্টোবরে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন সি৪০ এর চেয়ারম্যান ও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান।

এ বছরের সি৪০ সিটিস এর শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘ইউনাইটেড ইন অ্যাকশন’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাঁচটি বিভাগে মোট ১১টি শহরকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।

৫টি ক্যাটাগরি হলো— গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে ত্বরান্বিত করতে ঐক্যবদ্ধ, আমরা যে বায়ু গ্রহণ করি সেটি পরিষ্কার করার জন্য ঐক্যবদ্ধ, জলবায়ুর স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে ঐক্যবদ্ধ এবং জলবায়ু আন্দোলন গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ।

ব্লুমবার্গ অ্যাওয়ার্ড ২০২২ পুরস্কারের জন্য বিশ্বের ৭০টি শহর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ৫টি ক্যাটেগরিতে মোট ১১টি শহরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে কাজ করছি। বিভিন্ন শহরের মেয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সহযোগিতার জন্য তিনটি প্রস্তাব রেখেছি-জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বরাদ্দকৃত ফান্ডের ৫০ শতাংশ নগরের জন্য বরাদ্দকরণ, গ্রিন জব তৈরি করা এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য স্বল্প খরচে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।'

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রফিস ঢাকা শহরের যানজট নিরসন ও সড়কের নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পুরো বিশ্ব আজ হুমকিতে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, 'প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। পুরো বিশ্ব হুমকিতে রয়েছে। উত্তর মেরুর বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে লবনাক্ত পানি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। ন্যাচারবেজড সলিউশনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা ন্যাচারবেজড সলিউশনে গুরুত্বারোপ করছি।'

মেয়র আরও বলেন, 'সুন্দর নগরায়ন করতে গেলে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। মিরপুর প্যারিস রোড সংলগ্ন মাঠটি প্লট আকারে কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলো? ষাটের দশকে মাস্টার প্লানে ও ১৯৮৭ সালের ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটির লেআউটেও এটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে। ড্যাপের নকশায়ও এটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে রয়েছে। এখানে কিছুতেই প্লট হতে পারে না। ওই এলাকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। বৈধ এই উন্মুক্ত স্থান অবৈধভাবে প্লট হতে দেওয়া হবে না। নগরবাসীর জন্য এই খেলার মাঠ আবশ্যক। নকশা অনুযায়ী এই খেলার মাঠ বহাল থাকবে।'

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'তেজগাওয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ট্রাক। আমি গেলে কেউ থাকে না। চলে আসলে আবার আসে। তেজগাওয়ে কয়েকটি সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের জমি রয়েছে। অনুরোধ করছি সেগুলো সিটি করপোরেশনে হস্তান্তর করার। এই ট্রাকগুলোর জন্য একটি সেখানে একটি স্টেশন নির্মাণ করলে এটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আসবে।'

সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, 'বিভিন্ন ভবনের পয়ঃবর্জ্যের লাইন সরাসরি খালে দেওয়া হয়েছে। এতে খালের পানি দূষিত হচ্ছে। আমরা সবাইকে আহ্বান করছি পয়ঃবর্জ্যের লাইনগুলো ড্রেনে বা খালে যেন না দেয়। যেগুলো দেওয়া আছে সেগুলো অপসারণ করতে হবে। কয়েকটি এলাকায় তালিকা করা হয়েছে। আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম মেয়র'স মাইগ্রেশান কাউন্সিলের লিডারশিপ বোর্ডের সদস্য, মেয়র'স মাইগ্রেশান কাউন্সিলের টাস্ক ফোর্সের কো-লিড এবং সি৪০ সিটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, কাউন্সিলররা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।