বিচারক নিয়োগে নতুন আইন হচ্ছে: আইনমন্ত্রী

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

সরকার সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগে আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই এ সংক্রান্ত বিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

সোমবার (৯ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিষেশাধিকার) বিল-২০২৩ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের যাচাই-বাছাই প্রস্তারের জবাবে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংসদকে এসব কথা জানিয়েছেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। বিলের উপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব এবং সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন বিরোধী দলীয় সদস্যরা। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

বিলটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান ও বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান আদালতের বিচারক নিয়োগে আইন করার দাবি জানান।

সংসদে দেওয়া বক্তব্যে গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধই বলি, আর সরকারের ব্যর্থতাই বলি, দ্রব্যমুল্য মানুষের জন্য দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। নতুন পে-স্কেলের জন্য সরকারির কর্মচারিরা দাবি জানাচ্ছেন। তারা চলতে পারছেন না। অবশ্য যারা দুর্নীতি করে তাদের বিষয়টি আলাদা। এই অবস্থায় আইনটি পাস হলে জনপ্রশাসনে অসন্তোষ বাড়বে। তাই বিলটি পাসের আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।

জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে আইন করার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। প্রসিকিউশন নিয়োগেও আইন করার কথা ছিল সেটাও হয়নি। আশাা করি আইনমন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামও একই দাবি জানান।

আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচার নিয়োগের ব্যাপারে সংসদ সদস্যরা আইন করার কথা বলেছেন। উনাদের আশ্বস্থ করতে চাই, এই আইনটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু দিনের মধ্যে আইনটি সংসদে আনতে পারব। এ ছাড়া, উনারা ইন্ডিপেন্ডন্ট প্রসিকিউশন নিয়োগ আইনের কথা বলেছেন সেটা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ আইনটিও ওনারা এই সংসদ চলাকালে দেখতে পাবেন।

সরকার আদালতের মামলার জট কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জট কমে আসছে বলেও আইন মন্ত্রী আনিসুল হক জানান। তিনি বলেন, বিরোধী দলের সদস্যরা যেটা বলেছেন, তা সঠিক বলেছেন। এখনো মামলার জট আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মামলা জট কমানোর পদক্ষেপও নিয়েছে। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ইতোমধ্যে মামলার জট কমছে।

পাস হওয়া বিলে প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর বিশেষ ভাতার বিধান ২০২১ সালের মে মাস থেকে কার্যকর করার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো বিচারক অবসর গ্রহণকালে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া, অবসর গ্রহণকারী বিচারকদের জন্য উৎসব ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে মাসিক বেতনের সমহারে এবং অর্ধ গড় বেতনের ছুটিতে থাকাকালে মাসিক বেতনের অর্ধেক হারে ছুটিকালীন বেতন পাবেন। পূর্ণ গড় বেতনে প্রদত্ত ছুটি, অর্ধ গড় বেতনে প্রদত্ত ছুটির দ্বিগুণ হিসেবে গণনা করা হবে। তবে অর্ধ গড় বেতনে প্রাপ্য ছুটির হিসাব সংরক্ষিত থাকতে হবে। কোনো বিচারক তার মোট কর্মকালীন ছুটির শর্তানুযায়ী অর্ধ গড় বেতনে ৩৬ মাস ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

এ ছাড়া, পূর্ণ গড় বেতনের ছুটি একালীন পাঁচ মাস এবং অন্য কোনো ছুটি ১৬ মাসের অধিক হবে না। বিচারকদের পূর্ণ বৎসরের জন্য অতিরিক্তি পেনশন হিসেবে মাসিক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হবে।

বিলে অবসরের পর বিচারকরা যে পরিমাণ গ্রস-পেনশন প্রাপ্য হবেন, তার অর্ধেক বাধ্যতামূলকভাবে সমপর্নের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো বিচারক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ করলে কোনো ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। কোনো বিচারক অনভিপ্রেত কোনো আঘাতের দ্বারা আহত হয়ে কর্মে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতা ছুটি প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া, কোনো বিচারক অনুমোদিত ছুটি বা অবকাশের অতিরিক্ত অনুপস্থিতিকালের জন্য কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না। ছুটি মঞ্জুরের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি কর্তক সংরক্ষিত।

বিলে পেনশনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, কমপক্ষে পাঁচ বছর পেনশনযোগ্য কর্মকাল সমাপ্তির পর বা অবসর গ্রহণের বয়সসীমা পৌছার আগে অসুস্থতাজনিত কারণে অবসরে গেলে বা অপসারিত হলে বা দশ বছর পেনশনযোগ্য কর্মকাল সমাপ্তির পর বা অবসর গ্রহণের বয়সসীমায় পৌঁছার আগে পদত্যাগ করলে বিচারকরা পেনশন সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত বিচারকদের জন্য নিজস্ব সার্ভিসের অনুমোদিত হিসেবে পেনশন প্রাপ্য হবেন।

এছাড়া, অস্থায়ী প্রধানবিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় স্থায়ী নিয়োগ পেলে অস্থায়ী কর্মকাল স্থায়ীকাল হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া, ওই বিলে বিচারকদের আঘাত জনিত আনুতোষিক এবং পেনশন সুবিধা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।