বেপরোয়া গাড়ি চালক
তাহমিনা চৌধুরী
এই তো সেদিন,আমার মেয়ে আবদার করেছে, স্কুলে তার টিচারদের ভেজিটেবল বিরিয়ানি খাওয়াবে। তাই একটু সকালে দিকে একাই বাহির হলাম রেসিপি কিনে আনতে।
কিছু দুর যেতেই হঠাৎ আমার পাশ কেটে একটি গাড়ি হাইস্পিডে আমার সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।
সাথে সাথে ইমার্জেন্চি ব্রেক ধরে আমার গাড়িটিকে স্টোপ করে নিলাম।
এতে পায়ে একটু আঘাত পেয়েছি।
দ্রুত গতিতে যাওয়ায় সে গাড়িটি ট্রাফিক লাইট এ দাঁড়াতে পারেনি,,,
ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রোড পারাপার করতে যাওয়া( ১০/১১ বসরের) একটি মেয়েকে আঘাত করলো।
ওহ্হ,,,
মেয়েটি আমার চোখের সামনেই আরো তিনটা গাড়ির পিছনে ছিটকে পড়লো।
দেখা মাত্রই আমার বুকের ভিতর কম্পন শুরু হলো--
হাত,পা শীতল হয়ে গিয়েছিলো।
হয়তো মাতাল ছিলো চালক ।
তড়িঘড়ি করে বেগ থেকে ফোন বাহির করে এম্বুলেন্স ও পুলিশ কে ফোন করলাম,,
মিনিট দুই তিনের মধ্যে এদিক ওদিক কান পেতে
শব্দ শুনে তাকায়ে দেখি এম্বুলেন্স ও পুলিশ একসাথে হাজির।
আরো দশ পনেরো মিনিটের মাথায় উপরে চেয়ে দেখি হেলিকপ্টার ও ঘুরাঘুরি করছে।
ইতিমধ্যেই পুলিশ আসার পরে চারিদিকটা সীল করে দিলো,,
তবুও একটু এগিয়ে খবর নিতে চেষ্টা করলাম।
যে মেয়েটির অবস্থা কেমন, কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে আমার কিংবা পাবলিকের উপস্থিতি ছিলো নিষিদ্ধ।
মেয়েটির পরনে স্কুল ড্রেস ছিল। হয়তো বাসায় যাচ্ছিলো।
অনেকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর কিছুটা আফসোস করতে করতে দোকানের দিকে যেতে লাগলাম, কিন্তু কি আনতে গেছি তা ভুলে গেলাম।
শত চেষ্টা করেও স্বরণ করতে পারি নাই।
স্বচক্ষে দেখা এক্সিডেন্টের রেষ কাটতে পারিনি।
সবই ভুলে গেলাম।
তাই টুকটাক কিছু কিনে নিলাম, কিন্তু ফিরবো কিভাবে?
এখনো থরথর করে হাত কাঁপছে।
স্টিয়ারিং ধরবো কি করে, তবুও কোনো মতে ঘরে এলাম।
চোখের সামনে একটি স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে তবে ছিটকে পড়তে কোনো দিন দেখিনি।
চালকের অসতর্কতার কারণে হয়তো আজ একটি কিশোরীর পঙ্গুত্ব বরণ করতে হলো। নতুবা অকালে একটি প্রাণ ঝরে গেলো।
সেই সন্ধ্যায় কনেক চেষ্টা করার পরও একটু ভুল বিরিয়ানি বানাতে পারলাম না। পরের দিন টিচার বরাবর একটি ছোট্ট চিরকুট লিখে দিলাম।
খুব শিগগিরই ভেজিটেবিল বিরিয়ানি বানাবো। স্বচক্ষে দেখা এমন ঘটনায় আমি মর্মাহত।