সক্ষম সকলকে কর প্রদানের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সক্ষম সকলকে কর প্রদানের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাভাষী ডেস্কঃঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে তাদের কর প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘শুধু রাজধানী বা শহরে নয়, সারা দেশে কর দিতে সক্ষম যারা, দয়া করে আপনার কর পরিশোধ করুন। সরকার আপনার পরিষেবা এবং কল্যাণে আপনার অর্থ ব্যবহার করবে।’

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রথম দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন-২০২৩ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। আমাদের সেগুলোর মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যত বেশি ট্যাক্স সংগ্রহ করব, ততই এটি অতিক্রম করা সহজ এবং সম্ভব হবে।’

প্রধানমন্ত্রী করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে এবং জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এটা শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক নয় সারা দেশেই আমি সকলকে বলবো যারা কর দেবার সামর্থ রাখেন, আপনারা দয়াকরে কর দেবেন। সেটা আপনাদের সেবায়ই সরকার কাজে লাগাবে।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, আজকে প্রতিটা জিনিষের দাম বেড়েছে। আজকে তেল, গ্যাস, গম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রত্যেকটা জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার তা সত্বেও এগুলো অধিকমূল্যে কিনে নিয়ে আসছে।’

সেখানে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে , ৮শ’ ডলারের জাহাজ ভাড়া এখন ৩ হাজার ৮শ’ ডলার । আমরা ভর্তুকি দিয়ে অধিক মূল্যে কিনে এনে তা কমমূল্যে দেশের মানুষকে দিচ্ছি। এক কোটি মানুষ টিসিবির কার্ড পেয়েছে, সখানে ভর্তুতি মূল্যে মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে, কৃষিতে তাঁর সরকার ভর্তুতি দিচ্ছে, করোনাকালীন ব্যবসায়ীদেও শিল্প ও কলকারখানা চালু রাখার জন্য তাঁর সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এভাবেই সরকার সকলকে দু:সময়ে তাঁর ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, এখন সরকার যাতে রাষ্ট্র চালাতে পারে বা মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেদিকে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি আমরা আর কত দিতে পারব। তা ছাড়া আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো যাতে ব্যহত না হয় সেদিকেও দেখতে হবো ।

তিনি আরও বলেন, আপনারা উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে যদি যান, যে পরিবর্তন হয়েছে গত ১৪ বছরের সেই পরিবর্তনটা আপনারা দেখতে পাবেন। এখন আর কেউ কুঁড়ে ঘরে বাস করেনা, ভুমিহীন-গৃহহীন প্রত্যেককে তাঁর সরকার বিনে পয়সায় ঘর তৈরী করে দিচ্ছে। আর্থিক সহাযতা দিয়ে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগও করে দেয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে যেখানে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের তৃণমূল পর্যায়েরও উন্নয়ন নীতির কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও অর্থনীতির গতিশীলতা তৈরী হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি যে গত ১৪ বছরে আমুল পরিবর্তন এসেছে। করদানের সক্ষমতা কিন্তু আমাদের উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে। সেখানে আমরা যদি একটু প্রচার-প্রচারণা ভালভাবে চালাই তাহলে মানুষ কিন্তু স্বতস্ফূর্তভাবে আসবে কারণ তারাতো সেবা পাচ্ছে। এই সেবাটা পাওয়ার জন্যই তারা করবে।

প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার।

অনুষ্ঠানে এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত ১২ তলা রাজস্ব ভবন উদ্বোধন করেন।
ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এর বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনও করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আয়কর প্রদানকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। অনেকে একে ঝামেলা মনে করেন বা এজন্য সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে কোন জোর জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোন ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে- আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে।

আজবে রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ বা এই যে পোর্ট, কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে সবগুলোর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আর যারা এই সুফলটা ভোগ করছে তাদেরকেও তো কিছু দিতে হবে, রাষ্ট্রতো আর এমনি এমনি সবকিছু দিতে পারেনা। আর অন্যের কাছে আমরা হাতও পাতবো না।

তিনি বলেন, যাদের কর ফাঁকি দেয়ার প্রবনতা রয়েছে- সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে, তারা এই ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না। এটা হলো বাস্তব কথা সেটাও একটা বিরাট সুযোগ এনে দেবে। মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয়- সেজন্য আর করের পরিমানটাও এমন রাখতে হবে- যাতে প্রতিটা মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে দিতে পারে। মানুষকে জানাতে হবে, ব্যাপক প্রচার করা দরকার।

করোনা অভিঘাত এবং এর পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মানুষ কিছুটা আর্থিক সমস্যায় পড়লেও, তাঁর সরকারের শাসনামলে সার্বিক আর্থিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। করদাতারা এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর পরিশোধ করতে পারছেন।

সরকার প্রধান বলেন, ই-এলসি ব্যবস্থাপনা মনিটরিং, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও মেনিফেস্ট ডাটা শেয়ারিং-এর মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন ও কন্টেইনার ম্যানেজমেন্টও এর ফলে সহজ হয়েছে।

এ ছাড়া, পেপারলেস কাস্টমস ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো, বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয়করণ, অথরাইজড ইকনোমিক অপারেটর ব্যবস্থা, অটোমেটেড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর লক্ষ্যে কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট স্থাপন ইত্যাদি আধুনিকায়ন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

এ সকল কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাস সম্ভব হবে, যা আমদানি-রপ্তানিতে আরও গতিশীলতা আনবে। দ্রুততম সময়ে পণ্য খালাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে টিআরএস (টাইম রিলিজড স্টাডি) সম্পন্ন করা হয়েছে।

দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে পরোক্ষ কর ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন নামে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে- সরকার প্রধান বলেন, আধুনিক বিনিয়োগ ও রাজস্ব-বান্ধব আইনটি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। জনগণ এখন অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর নিবন্ধন এবং অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করতে পারছে এবং ‘ইএফডিএমএস’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যক্ষ কর তথা আয়কর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি। আয়কর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত মোট রাজস্বে আয়করের অবদান শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ।