সিলেটের সবকটি আসনে এমপি পদে প্রবাসীদের চোঁখ

মো. ফয়ছল আলম: 
আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। এরই মাঝে থেমে নেই সংসদ সদস্য প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। এ লক্ষ্যে তারা নির্বাচনী এলাকাগুলোতেও ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে সিলেট জেলার সবকটি আসনেই এবার প্রবাসীদের অধিক্য থাকবে- এমনটিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সিলেট-১ ( সদর) আসনে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির যে দুজন সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন তারা দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে শক্ত অবস্থানে থাকলেও এক সময় তারা প্রবাসী ছিলেন। আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান সাংসদ , পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এক সময় দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। এ পর্যন্ত অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না ঘটলে এই আসনে তিনিই হবেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী। অপর দিকে বিএনপি থেকে গত নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্ধিতাকারী দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। খন্দকার মুক্তাদিরও দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটিয়েছেন। তবে দেশের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তিনি খুব কমই বিদেশ গেছেন। তারা দুজন ছাড়াও এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীও আমেরিকা প্রবাসী। 
সিলেট-২ ( বিশ্বনাথ বালাগঞ্জ ওসমানী নগর) সংসদীয় আসনে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর থেকে যারা এমপি হয়েছেন তারা সবাই প্রবাসী। যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিকুর রহমান চৌধুরী এই আসন থেকেই এমপি হয়েছিলেন। এরপর জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এবং পরবর্তীতে মোকাব্বির খান এমপি হয়েছেন। তারা দুজনেও প্রবাসী। আগামী নির্বাচনেও তারা প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলেট-৩ ( দক্ষিন সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-ওসমানীনগর) সংসদীয় আসনের বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান একজন লন্ডন প্রবাসী। এই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আসম মিসবাহও একজন প্রবাসী। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম একজন লন্ডন প্রবাসী। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আতিকুর রহমান আতিকেরও প্রবাস কানেকশন রয়েছে। এছাড়া এই আসন থেকে আরও কয়েকজন প্রবাসী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এদের মধ্যে সাবেক ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চান। তিনিও আমেরিকা প্রবাসী।
সিলেট-৪ (জৈন্তা- গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) সংসদীয় আসনে বর্তমানে যিনি সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী তিনিও প্রবাসী। তবে এলাকাতেই সময় দেন বেশী। এই আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ এবং আওয়ামীলীগ নেতা গোলাপ মিয়াও প্রবাসী। জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী তাজ রহমানও লন্ডন প্রবাসী । 
সিলেট-৫ জকিগঞ্জ কানাইঘাট আসন থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে যিনি নির্বাচিত হন তিনি হচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. সেলিম উদ্দিন। বিএনপি থেকে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মামুনুর রশীদ মামুন এবং সিদ্দিকুর রহমান পাপলুরও রয়েছে প্রবাস কানেকশন। আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী এবং ড. আহমদ আল কবিরেরও রয়েছে প্রবাস সংশ্লিষ্টতা।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) সংসদীয় আসনে আগামী নির্বাচন প্রবাসী প্রার্থীদের মধ্যেই হবে এটি প্রায় নিশ্চিত। এই আসনে আওয়ামীলীগের শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী কানাডা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন। বিএনপি থেকে যিনি গতবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন সেই ফয়সল আহমদ চৌধুরীও লন্ডন প্রবাসে ছিলেন দীর্ঘদিন। এই আসনে আরও দুজন বিএনপির মনোনয়ন চান। বিগত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদের মৃত্যুতে তার পরিবারের কাউকে দল প্রার্থী দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। রশীদ আহমদের ভাই এবং যুবদলের সাবেক নেতা, টাওয়ার হ্যামলেটস এর সাবেক ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর অহিদ আহমদ এবং রশীদ আহমদের পুত্র তামিম ইয়াহইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে মনোনয়নের দৌড়ে। তারা দুজনই লন্ডন প্রবাসী। এই আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন মাঠে কাজ করছেন দীর্ঘদিন থেকে। জোট হোক দল হোক এখানে তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। 
সবকটি আসনে প্রবাসী প্রার্থী মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে নিজ নিজ দলে রয়েছে অসন্তোষ। বিশেষ করে আওয়ামীলীগ বিএনপিতে এনিয়ে রীতিমতো গৃহদাহ শুরু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিলেটের সবকটি আসনেই কি প্রবাসী প্রার্থীরা মনোনয়ন নিশ্চিত করেন- তা নিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোতে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। আর এমনটি ঘটলে অবাক হওয়ারও কিছু থাকবেনা। কারণ রাজনীতিতে প্রবাসীদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ছেই। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুগ যুগ ধরে প্রবাসীদের অবদানই সবচেয়ে বেশী। এমনটিই মনে করেন তাদের শুভার্থীরা।