৩০০ টাকা মজুরি দেয় নইলে বুকে গুলি দেয়
নূরজাহান শিল্পী
সেই চির চিরায়িত গানেই বলি , এক কাপ চা 'য়ে আমি তোমাকে চাই
এ যেন এক শাশ্বত আবেদন বাঙালির সাথে চা'য়ের অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ।
যাদের স্পর্শে দুটি পাতায় সাজে আমাদের দিনের শুরু চায়ের সকাল , এক কাপ চায়ের চুমুকে দূর হয় ক্লান্তি , আমরা ঝেড়ে ফেলি অবসাদ ।
কিন্তু তাদের অমানবিক জীবন যাপন আজও দাস প্রথার মতো
বিজ্ঞান যেখানে উন্নতির চূড়ায় আরোহণ করছে , মানুষের চাওয়া পাওয়া সীমা ছড়িয়ে অসীমে , চাঁদে বসবাসের স্বপ্নে বিভোর প্রতিক্ষণে, সেখানে ৫টি মৌলিক অধিকারের বেড়াজালে আজও ঘুরপাক খাচ্ছে যারা,চা শ্রমিক তারা
যাদের আয়ে প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়
যারা দিয়েছে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামের মানচিত্রে আলো ,তাদের ঘরেই জ্বলে না আলো তারা থাকে অন্ধকারে
খাদ্য নেই ,বস্ত্র নেই, নেই বাসস্থান । দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা প্রাণ।
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বুকে যাদের শ্রমে বাংলাদেশ খ্যাতির শীর্ষে পেয়েছে সম্মান
তাদের আমরা কতটুকু দিয়েছি প্রাপ্য অধিকার , কেন আজো রোদে পুড়ে তাদের মৌলিক অধিকারের লড়াইয়ে নামতে হয়
দুর্ভোগ পোহাতে হয় নির্মমতার কষাঘাতে জর্জরিত হতে হয় প্রতিনিয়ত।
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিদেশে যাই আমরা কত ফ্লেভারের চা পান করি, বড় বড় হোটেল রেস্তোরায় এক কাপ চায়ের মূল্য আমাদের ভাবায় না কখনো , আমাদের বিলাসি জীবনে এই চা শ্রমিকদের জন্য একটুকু হেরফের হয় না কভু
আমাদের আড্ডায় সরব চায়ের উপস্থিতি , প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে চায়ের উপস্থিতি মিছিল মিটিং আড্ডা রাজনৈতিক আলোচনা সভা পারিবারিক বন্ধন, ভালোবাসা -একাকিত্বে
চা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উজ্জীবিত করে ।
সবাই জানেন সিলেটে অত্যন্ত যত্নের সাথে চা বাগানে তৈরি করা হয় এক ধরনের কালো চায়ের পাতা ।
এটি একটি কালো চা হলেও পাতায় সোনালি প্রলেপের কারণে আক্ষরিক অর্থে এর নাম দ্যা গোল্ডেন বেঙ্গল টি বা সোনার বাংলা রাখা হয়েছে। যেখানে প্রতি পাতায় রয়েছে ২৪ ক্যারেট সোনার প্রলেপ এবং সোনার প্রলেপ দেয়া সোনালি রঙের এই চা বিশ্বের সবচেয়ে দামী চা
চায়ের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লন্ডন টি এক্সচেঞ্জ তাদের উৎপাদিত 'গোল্ডেন বেঙ্গল টি' নামের বিশেষ চা-য়ের মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ১৪ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
সুট কোট বুট টাই পড়া বাবুদের সোনার বাংলার সোনালী প্রলেপের চায়ে চুমুক দেয়ার সময় কি কখনো মনে হয়েছে নীচু জাতের কিছু নীচু লোকের অবদান?
বাড়ি গাড়ি আভিজাত্য বিলাসিতার আড়ালে সেই নীচু জাতের মানুষগুলোকে কি কখনো মনে হয়েছে ওরাও মানুষ , রয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার।
ভেবেছি কি একবার মাত্র ১৪৫ টাকায় একটা স্বাচ্ছন্দের জীবন কিনতে ওরা নেমেছে রাজপথে।
যেখানে আমাদের তিন পাউন্ডের এক কাপ চা তৃপ্তি দিয়ে যায়।
আমাদের এই একটি মুহূর্তের তৃপ্তি ওদের ভালো থাকার অবলম্বন, ওদের লড়াই ওরা একা করে যায়, আমরা কি কখনো ওদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছি?
বাবু ডাকের কতটা মর্যাদা আমরা দিতে পেরেছি?
আমরা কখনো কি আশ্বাসের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছি অশ্রু মুছে ফেলো আমরা আছি তোমাদের সাথে , এ আমাদের লড়াই , না আমরা কখনো বলিনি
তাই তো ওরা হেরে হায় বারবার ১২০ টাকায় ।
৩০০ টাকা দেয় নয় বুকে গুলি এই নির্মম আকুতি আমরা শুনতে চাই না
চা শ্রমিকদের লড়াই নতুন নয় , বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ওরা প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছে ।
গত ৯-১৩ ই আগস্ট প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে কর্ম বিরতি
১৩ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা
বিভিন্ন চা বাগানে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ ,প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আশাবাদী শীঘ্রই কোনো ঘোষণা দেবেন যার প্রেক্ষিতে অবহেলিত চা শ্রমিকদের জীবনমান কিছুটা হলেও উন্নতির ছোঁয়ায় পূর্ণ হয়ে উঠবে।