সাবেক এমপি অভির দেশে ফেরার খবরে তোলপাড়
২০০২ সাল থেকেই দেশের বাইরে থাকা সাবেক ছাত্রদল নেতা ও এমপি গোলাম ফারুক অভি বর্তমানে কানাডায় বসবাস করছেন। তবে নতুন খবর হলো দীর্ঘ ২৩ বছর পর নিজ দেশে, জন্মভূমিতে ফিরছেন এক সময়ের আলোচিত এই ছাত্রনেতা।
আর অভির দেশে ফেরার খবরে তোলপাড় চলছে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) নির্বাচনি আসনে। ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকেই সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন তিনি। দেশে ফিরে আবারও এমপি নির্বাচন করবেন অভি, এমন আলোচনা এখন ওই দুই উপজেলায়।
যদিও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলেননি নব্বই দশকের আলোচিত এ ছাত্রনেতা। নির্বাচন করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেশে ফিরব এটাই আমার কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি। নির্বাচনে অংশ নেওয়া সেকেন্ডারি।’
৯০-র দশকের ছাত্র রাজনীতিতে অভি ছিলেন দেশের আলোচিত এক চরিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ছাত্র ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। রাজনীতির নানা ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রে থাকা অভি সংসদ-সদস্য হন ১৯৯৬ সালে। সেবার তিনি বরিশাল-২ নির্বাচনি আসনে ভোটে হারান বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। অভি ছিলেন সপ্তম জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। এমপি হয়ে নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে দেশব্যাপী আলোচিত হন অভি।
তার সময়েই মূলত পরিপূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আসে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত উজিরপুর উপজেলা। বিপুলসংখ্যক সেতু-কালভার্ট আর সড়ক নির্মাণ করে ওই যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন অভি। তখন অবশ্য বানারীপাড়া বরিশাল-২ নির্বাচনি এলাকার অংশ ছিল না। উজিরপুর আর বাবুগঞ্জ মিলে ছিল আসনটি। পরে বাবুগঞ্জ উপজেলা মুলাদীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বরিশাল-৩ এবং উজিরপুরের সঙ্গে বানারীপাড়া যুক্ত হয়ে বরিশাল-২ নির্বাচনি এলাকা পুনর্গঠিত হয়। পরে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে হেরে যান অভি।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০০২ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক এই এমপি। এরপর একাধিক রাজনৈতিক মামলাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে গত ২৩ বছরে আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে এবার দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক এ সংসদ-সদস্য।
বর্তমানে কানাডায় অবস্থানরত অভি টেলিফোনে জানান, নভেম্বরেই ফিরছেন তিনি। অবশ্য তার ফেরা নিয়ে আরও আগে থেকেই উজিরপুর-বানারীপাড়ায় চলছিল জল্পনা-কল্পনা। বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন, এমন আলোচনাও চলছে সেখানে। পাশাপাশি রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার আলোচনাও।
তবে এসব বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি সাবেক এই ছাত্রনেতা। বিএনপি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মনোনয়ন প্রশ্নে কোনো আলোচনা চলছে কিনা জানতে চাইলে অভি বলেন, ‘কারও সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।’
ইসলামপন্থি কোনো জোটে যাওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘এ রকম কোনো সম্ভাবনা কখনোই নেই। আমি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিশ্বাসী।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই অপশন নিয়ে এখনো ভাবিনি’।
এদিকে অভির ফেরার খবরে যেন পালটে গেছে বরিশাল-২ নির্বাচনি এলাকার ভোটের মাঠের পরিস্থিতি। অভি ভোটে এলে সেখানে অন্য যে কোনো প্রার্থীর জয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে এখানে মাঠে জামায়াতের প্রার্থী থাকা ছাড়াও বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চাইছেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন সান্টু ও কাজী দুলাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আকতার হোসেন এবং ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাইফ মাহমুদ জুয়েল।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী দুলাল হোসেন বলেন, ‘২৩ বছর আগের বাংলাদেশ আর বর্তমানের বাংলাদেশ এক নয়। দীর্ঘ এ সময়ে ভোটের মাঠ যেমন বদলেছে তেমনি পছন্দ-অপছন্দের ব্যারোমিটারে পরিবর্তন এসেছে ভোটারদের। তাছাড়া প্রায় দুই যুগে নতুন দুটি প্রজন্ম এসেছে ভোটার হয়ে। যারা গোলাম ফারুক অভিকে ভালো করে চেনেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আমরা জনগণের রায়ে বিশ্বাসী। জনগণ ধানের শীষকে ভালোবাসে। সেই ভালোবাসাই আমাদের জয়ের মুখ দেখাবে ইনশাআল্লাহ।’


