চট্টগ্রামের সিআরবি ব্যস্ত শহরে এক টুকরো শান্তির ঠিকানা

চট্টগ্রামের সিআরবি ব্যস্ত শহরে এক টুকরো শান্তির ঠিকানা
-----পারভীন আকতার
চট্টগ্রাম শহর দেখেছি আমার বয়স যখন দশ।তখন চাচাতো বোনকে বিয়ে দেয়ার সুবাদে শুলকবহর আমাদের আনন্দ,হাসিখুশি আর প্রশান্তির ঠিকানা ছিল।পরীক্ষা শেষ হলেই বোনের শ্বশুরবাড়ি চলে যেতাম।তাছাড়া নানা আয়োজনেতো আসতেই হতো।তখন কত কাঁচা পথে হেঁটেছি শহর জুড়ে তার ইয়ত্তা নেই।আজ যখন নিজেই শহরের বাসিন্দা তখন মনে হয় এখনই গ্রামে ছুটে যাই।নিঃশ্বাস নিতে পারি না।চারদিকে সারি সারি দালান আর এক ফালি প্রকান্ড আকাশ ছাড়া কিছুই দেখার জোঁ নেই।তখন মনে পড়ে কেবল সিআরবি,বাটালী হিল, জাতিসংঘ পার্ক,ডিসি হিল,ফয়েজ লেক আর সী বীচ।মূলতঃ এসব জায়গায় মানুষ চির সবুজ পাহাড়,শতবর্ষী বৃক্ষ আর সমুদ্রের টেউয়ের অবগাহনে নিজেকে হারিয়ে ফেলে কিছুটা সময়ের জন্য।সকল ব্যথা যেন উবে যায় এসব জায়গায় গেলে।তবে সবচেয়ে কাছে হলো সিআর বি।সবুজ গাছে,পাহাড়ে মিশে একাকার।কখনো রোদ,কখনো বৃষ্টি,কখনো পাখির সুমধুর ডাক মানুষকে আটকে দেয় বয়সের ফ্রেমে যৌবন ফিরিয়ে দেয়ার মতো।
সিআরবি তে আমি সাহিত্য অনুষ্ঠান করেছি,বড় বড় লিখিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি।জীবনটা ক্ষাণিকের জন্য রাঙিয়েছি।কয়েকদিন স্কুটি চালানো শিখেছি।করোনার কারণে যদিও এখন যাই না।সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক মায়া এই সিআরবি।
নববর্ষ উদযাপন করেছি,হৈ-হুল্লোড় করেছি ছেলেমেয়েদের নিয়ে।কী অপার আনন্দঘন পরিবেশ এই সিআরবি!আমি মনে করি এটি একটি অক্সিজেন ফ্যাক্টরি।যাদের শ্বাস কষ্ট হয় তাদের সাজেস্ট করবো আপনারা সিআরবি যান প্রাণভরে বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন।আর কোথাও এমন শান্তি পাবেন না।রেলওয়েকে মাঝে মাঝে আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি শুধু সিআরবির শীরিষতলার জন্য।বসন্তে ফুলে ফুলে ভরে যায় পথ।আহা! কী ঐশ্বরিক সৌন্দর্য। মনে হয় সৃষ্টিকর্তার অপরুপ সুধা পান করছি।
এই সিআরবি একটি  কবিতার পাঠের মতো। সেই কবিতা অনেক দীর্ঘ।সেই কবিতায় আমরা শুয়ে বসে,প্রাণ খুলে মনের কথা বলতে পারি।হাসপাতাল হবে ধনীদের জন্য।আমাদের মতো গরীবের জন্য নয়।তাহলে কী কারণে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে একটি হাসপাতাল?একটু প্রশান্তির ঠিকানায় কেন রোগের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদার্থ শোষণ করবে?এত সুন্দর সবুজ চত্বরে কি হাসপাতাল যায়?একটা জরাজীর্ণ হালের মোগল আমলের(!)হাসপাতালতো আছেই অনাদরে পড়ে।মাঝেমাঝে ভাবি রেলওয়ের একসময় সোনালী যুগের স্বাক্ষর বহন করছে এই  দৃষ্টিনন্দন সিআরবি।আর হাসপাতালের দূষণ চাই না।আমরা চাই প্রকৃতির বিশুদ্ধ  অক্সিজেন ফ্যাক্টরি,শতবর্ষী গাছ,পাহাড়ের গা বেয়ে অবগাহন।জীবনের দূর্বিষহ কষ্টগুলো ভুলতে এই পরিবেশটা মানসিক ডাক্তারের কাজ করে।নতুন কুঁড়ির মতো আশা জাগায়।আশা করি উর্ধতন সুবিবেচকগণ অক্সিজেনের অভাবে যে করোনায় মানুষ মরছে তা বিবেচনা করে প্রকৃতির এই অপার দান সিআরবির দূষণমুক্ত পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসবেন।
পারভীন আকতার
শিক্ষক,কবি ও প্রাবন্ধিক। 
চট্টগ্রাম।