দুঃস্থকালের চেহারা (গল্প )

দুঃস্থকালের চেহারা (গল্প )


মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ 

দুস্তু,তুই ক---ই?
আমি--- ত চৌরঙ্গী মোড়।ক্যারে----?
আমার অফিস অইয়া যাইছ।তর কামডার ব্যাপারে কথা কমু ।

মোবাইল অফ করতে করতে ঝুটনের মনে পড়ছে ----- বাড়িতে জমি-- জমার ঝামেলার কিছু জরুরি কাগজপত্র ওর বন্ধু আবেদিনের কাছে আছে ।ওগুলো এস্পার-- ওস্পার করতে নগদ দু'লাখ টাকা দেয়া আছে ।আরো কিছু ডিমাণ্ড ছিল তার ।

ভারাক্রান্ত মনে আবেদিনের অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে সে ।
আজকে যদি প্রেসার দেয় টাকার জন্য এই মুহূর্তে ওর হাতে একটা সিঙ্গেল টাকাও নাই।বললেও আবেদিন  বিশ্বাস করবেনা ।কিন্তু ম্যানেজ তাকে করতেই হবে ।

সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে টলতে টলতে চৌরঙ্গী মোড়ের ছাব্বিশ নাম্বার বাড়িটার গেটেই ঢুকে গেছে ঝুটন।

তিনতলার ডানদিকের দুশো এগারোতে আবেদিন বসে।রুমটা ছোট্ট হলেও ব্যস্ত ।
লোকজনে ঠাসা ।চারদিকে করোনার ঝুঁকি ।কিন্তু এই রুমে যেন সেসব কথাকে যেন ফাঁকা বুলি মনে হচ্ছে ।যখন তখন চা, পান আসছে ।স্টিলের আলমারির শব্দ হচ্ছে ।ক্রিং ক্রিং শব্দের পাওয়ার এত বেশি যে পিয়ন বাবলু রীতিমত হাঁপিয়ে উঠছে ।আর এধরনের ব্যস্ততার মাঝেও আলাদা স্বস্তি আছে ।কারন কাজের পরিমাণ বাড়ছে, তো বাবলুর আজকের বাজারের ব্যাগ নিয়ে গিন্নি অপরিমেয় সুখানুভূতি ব্যক্ত করবে ।এভাবে চলতে থাকলে বহুদিনের শখ মার্কেটে সবচেয়ে বড় ফ্রিজটা কিনে ফেলতে পারবে বাবলু।তখন  তার গিন্নি  বান্ধবীর মোবাইলে ভিডিও কলে দেখিয়ে দেবে যে---আমরাও পারি ।

আবেদীন ঝুটনের আসার আগেই ফল-ফ্রুট আনিয়েছে।লাঞ্চ আনিয়েছে।টেবিলে সরাসরি বসে যেতে বলল আবেদিন । আজকাল কেন্টিনে যাবার সময় নেই ।খেতে খেতে আবেদিন জানতে চাইলো--- কোরবানী কিনছিস?
কোরবানী কি কিননের জিনিস ? নাকি পশু কিন্যা  কোরবানী করে ?
ওই একই কথা ।
কিনি নাই ।চেষ্টা চলতেছে ।লোক মিলে তো টাকা মিলেনা ।টাকা মিলে তো কিনতে গেলে সমস্যা ।নানান ফ্যাকরা।
নিয়ত কইরা ফালা।আমি ত দেড় লাখ টাকার একটা কিন্যা  ফালাইছি ।তো--- মালপানির কী করলি?লেইট করলে কিন্তু ঝামেলা বাড়বো ।আমার কিন্ত সব আপটুডেট।একটু ঝামেলা ছিল ।ম্যানেজ কইরা ফালাইছি।এখন মালপানিডা লেইট করার ত কথা আছিল না দুস্তু ।
কিন্তু-- আমার হাত তো একদম খালি ।
ঝুটন তার  পারিবারিক চেহারাটা বোঝানোর চেষ্টা করে---
ঘরে অসুস্থ বাপ মা ।স্কুলের এমপিও হচ্ছেনা ।ছেলেটার টিউশনি, বৌয়ের সেলাইকাজই ভরসা ।সবজি অলা,কারেন্ট অলা,কিস্তি অলা, বাড়িঅলা সবাই যেন জোট গঠন করেছে ।
তাদের অনেক পরের স্কুল এমপিও হয়ে গেছে ।আর কতিপয় গলা ভিজানোর কায়দাটা ঝুটনের জানা নেই ।

বুজ্জি ।কাম সারছস, অহন শুরু করছস ধানাইপানাই।তুই --একটু বহ্  আমি যাব ,আর আসব ।

আবেদিন ঝুটনকে বসিয়ে নীচে নেমে গেছে ।
পাক্কা দেড় ঘন্টা ।
অফিসে দরজা জানালা টপাটপ বন্ধ হয়ে গেছে ।একজন কেউ ঝুটনের কানের কাছে বলল --- উনি জীবনে টাকা ছাড়া নিজের বাপকেও ছাড়েননা।আর কতক্ষণ বসে থাকবেন? বাসায় চলে যান ।কালকে জাস্ট  বারোটার দিকে খোঁজ নিয়েন।
ঝুটনের মাথাটা ধরেছে ।পকেটটা ঘেঁটে ভারগন টেবলেট বের হলো ।

অফিসের সামনের রাস্তা দিয়ে হৈচৈ করে লোকজন আবেদীনের ষাঁড়গরু নিয়ে যাচ্ছে ।
আবেদিনের গরুটা দেখার লোকজনের কমতি নেই ।আশপাশের দোকান, বাসা, পাড়া মহল্লা এনিয়ে উত্তেজনার চরমে ---দাম কত? ম্যালা গুস্তু অইব ।পিডা বডি ।সরকার সাইবেরডা অত বড় হৈবনা--আরে আবেদিন সাইবেই জিতছে ।

আরেকটা এম্বুলেনস আটকে  আছে জ্যামে ।ভেতরে করোনার প্যাসেন্ট।লোকজন আরো আগ্রহ ভরে তার চারপাশে ভীড় করছে ।
কিছু ইয়াং ছেলের একটা গ্রুপ যাচ্ছে এম্বুলেনসের সাথে ।ওদের কাঁধে অক্সিজেন সিলিন্ডার ।
যেন মঙ্গল গ্রহের মানুষ ।
কৌতূহলে জনতা ওদেরকেও দেখার জন্য  ঘেরাও করে ।ষাঁড়গরু নিয়ে আরো কয়েকটা জটলা দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে ।
ঝুটনের মাথাধরাটা সারবে বলে মনে হচ্ছে না ।