বৃন্তি ( ৯ ম পর্ব ) সারি সারি ঝাড়বাতি
মালা মুখোপাধ্যায়
শিবুদা তুমিই আমার উপন্যাস,
একটা গোটা উপন্যাস।
অথচ তুমিই আমাকে উপন্যাস
দিলে পড়তে ;
আমি তো পৃথিবী গদ্যময়
বলেছিলাম।
আর কেন বলবো না বলো তো ?
ছিটেবেড়া ঘরে বড় হয়ে ওঠা
একরত্তি বৃন্তি শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে পান্তা ভাতে
তার অদম্য ইচ্ছাকে তরকারি বানিয়ে
আজ বড় চাকরির জায়গায়।
পৃথিবী তার রংচটা তাপ্পি দেওয়া জামা
কবিতা তার বাবুদের বাড়ির ড্রয়িং রুমের ঝাড়বাতি
তার মনে দিনরাত আনাগোনা অসুস্থ মায়ের
হাড় জিলজিলে রুগ্ন শরীর
স্কুলের ড্রেসেই সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া ঝাঁকড়া চুলের বৃন্তি কবেই ছুটি দিয়ে দিয়েছিল ফাগুন মাসের পলাশ রাঙা ফুলকে।
ফাগুনের আগুন বৃন্তি তার বাইরে ঘিরে রেখেছে শামুকের শক্ত খোলক।
কিন্তু হায় !
নিয়মের ক্যানভাসে চলতে চলতে একদিন বৃন্তি স্বপ্ন দেখে বিদেশ থেকে শিবুদা আসছে । বৃন্তি হাতের কাজ ফেলে অফিস ছুটি নিয়ে ছটুছে
অগণিত মানুষের মাথার ভিড়ে শিবুদাকে বার বার হারিয়ে চলেছে,বৃন্তির বাগানে তখন রজনীগন্ধা, জুঁই, করবী বেলীর বাহার।
এক মরুভূমি তৃষ্ণার্ত নিয়ে ছুটছে বৃন্তি
শিবুদাকে চিৎকার করে বলতে চায়
তার বাড়িতেও এখন বাবুদের বাড়ির ঝাড়বাতি
মায়ের হাতে সুস্বাদু রান্নায়
কবিতারা সব সারি সারি
দাঁড়িয়ে
একটা করে পলাশ হাতে নিয়ে।
আমি তোমাকে ডাকছি শিবুদাআআ--
জন জোয়ারে তুমি ভেসে গেলে।
আমি ছুটছি প্রাণপণে
তোমাকে বলতে চাইছি
তোমার দেওয়া উপন্যাস
তুমিই আমার উপন্যাস
সব এখন আর তাপ্পি দেওয়া পৃথিবী নয়
আমি বুঝতে পেরেছি।
তুমি মুচকি হেসে গোঁফের রেখায় ঢেউ তুলে বলে উঠলে
তুমি উপন্যাস নও
তুমি একটি অণুগল্প
প্রতিটি ক্ষণের সমগ্র সময়ের একটি অংশ।
আমার পায়ের তলার মাটি সরে সরে যায়
বুঝতে পারছি না ভূমিকম্পটা কোথায় ?
জীবনের সব শক্তি দিয়ে ডাকি,শিবুদাআআআআ --
ভোরের আলো
নাম না জানা পাখির ডাক
হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক
পাবলিকের কলতলায়
দাঁতনের সময়ে
টেস্টি
কলরব
বৃন্তি বোঝে ভূমিকম্প নয়,
ওটা স্বপ্ন ছিল।
দুঃস্বপ্ন কি?