গল্প

গল্প
স্মার্টনেস-------
শিরীন শীলা
মুনের বান্ধবী ঝুমুর প্রথম এনিভার্সারি অনুষ্ঠানে এসে খুব অবাক হয়ে গেলো মুনের স্বামী আবেদ ।  এত আলোকসজ্জা আর দামী সুট কোট, রেশমী সিল্কের শাড়ির ভিড়ে সাধারণ পাঞ্জাবি পরা ও বোরকা পরা স্ত্রী সহ নিজেকে খুব বেমানান লাগছিলো। তাই সবার থেকে একটু দূরে  আলাদা ভাবেই বসে ছিলো মুন ও আবেদ ।  হঠাৎ ঝুমু এসে বললো,
কিরে মুন তোর কি হয়েছে আলাদ বসে আছিস, চল আমাদের সাথে একটু মজা করবি।আবেদ সাহেব না হয় এখানে বসে থাকুন, আবেদকে ওরা ডাকেনি কারন ওরা জানে আবেদ এইসব অনুষ্ঠান পছন্দ করে না।শুধু স্ত্রীর কথা রাখতে এসেছে,আবেদ জানে ও না আসলে মুন কখন আসবে না। 
নেকাবের আড়ালে মুচকি হেসে মুন বললো,
আর কতসময় লাগবে কেক কাটতে? আমাদের একটু তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। 
ঝুমুর বললো,
আজ বাসায় যাওয়া হবে না,আজ এখানে দুজন থাকবি। 
সবাই আড্ডা গল্প, গুজব, গানে, নাচে মাস্তি করছে।মনে হচ্ছে যেন নারী পুরুষের সৌন্দর্যে প্রতিযোগিতার হাট বসেছে, একজন নারী তার শরীরে সুউচ্চ মিনার, পাতলা পিনপিনে শাড়ীর নিচে শরীরে লোভনীয় অংশ গুলো আরো বেশি প্রদর্শনী করতে পারে অন্য নারী থেকে সেই প্রতিযোগিতা। 
আবেদ চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে আছে। এমন সময় ঝুমুর স্বামী মুনের দিকে তাকিয়ে বললো,
  -আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না 
ঝুমু হেসে বললো,
 ও আমার ভার্সিটি লাইফের বান্ধবী মুন
ঝুমুর স্বামী ব্যঙ্গ স্বরে বললো,
  উনি তোমার ভার্সিটির বান্ধবী মানে উনি কি শিক্ষিত? নাকি উনি কুৎসিত তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। ঠিক আছে ঠিক আছে সৌন্দর্যহীন নারী নিজেকে এভাবে ঢেকে রাখা ভালো, না হলো পার্টির আনন্দটাই মাটি হয়ে যেতো।
ঝুমু মুচকি হেসে ওর স্বামীকে বললো,
সে অনেক সুন্দরী,আমাদের চেয়েও হাজার গুন সুন্দরী,একসময় ওর রূপ ও ফ্যাশনের জন্য ভার্সিটির সব ছেলেদের মুখে মুখে মুনের নাম ছিলো। মুন বলতে ছেলেরা পাগল ছিলো। আজ সেই মুন আর আগের মুন নেই।এখন আমবশ্যার অন্ধকারে ঢেকে গেছে ওর জীবন।মুনের মা বাবা ওকে একটা দ্বীনদার অশিক্ষিত আল্লাহ ওয়ালা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর বেচারা কি করবে, স্বামীর কথামতো চলতে হচ্ছে,  বিয়ের পর থেকেই বান্ধবী আমার এমন মনমরা হয়ে গেছে, নিজেকে সবসময় লুকিয়ে রাখতে চায়,আমি অনেক জোর করে আসার কথা বলায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসেছে এই আনস্মার্ট বরটাকে নিয়ে,না নিয়ে আসলে কি একা আসতে দিতো আমার বান্ধবীটাকে। ইশ কি হাল হয়েছে দেখো আমার বান্ধবীর। 
 ঝুমুর স্বামী বললো ঐ অশিক্ষিত আনস্মার্টটাকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।  যে স্বামীর সাথে বের হতে হলে নিজের সৌন্দর্য ঢিলেঢালা মোটা কাপড়ের নিচে ঢেকে বের হতে হয়, যাকে নিয়ে সমাজে চলা যায় না।যে স্বামী নিজের স্ত্রীর সৌন্দর্য নিয়ে অহংকার করতে পারে না,মূল্যায়ন করতে পারে না, সেরকম স্বামী থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।
ঝুমুও বললো আমিও অনেকবার বলেছি 
 এমন আনস্মার্ট ছেলের সাথে থাকার কোন মানেই হয় না। বরং ডিভোর্স দিয়ে দে,তোর জন্য ছেলের অভাব হবে না। তুই তুড়ি মারলে হাজার ছেলে লাইনে দাড়াবে তোকে বিয়ে করার জন্য।কে শুনে কার কথা।
জবাবে মুন কিছু না বলে শুধু ঝুমুর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো
  
  -- আমার স্বামী আমাকে ছাড়া কখনো একা ভাত খাননা।  আমার স্বামী কখনো বাইরে /হোটেলে না খেয়ে বাসায় আসেন আমার সাথে খাবেন বলে,আমার স্বামী আমার পানির গ্লাসে মুখ লাগিয়ে পানি খান আমাদের আলাদা গ্লাসের প্রয়োজন হয় না।বিয়ের পরের দিন সকালে আমার স্বামী ফজরের সময় আমায় ডেকে বলেছিলেন,তুমি পিছনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো আমি সামনের কাতারে আছি। স্বামীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বলেছিলাম,
  আমি নামাজ শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারি না
আমার স্বামী আমার হাতটা ধরে মুচকি হেসে বলেছিলেন
 সমস্যা নেই আমি তোমাকে শিখিয়ে দিবো।
 
কোরআন শরীফ এনে আমার স্বামী আমায় বলেছিলেন
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিস হলো এই কোরআনুল কারীম,নিয়মিত পাঠ করো। 
জবাবে আমি মাথা নিচু করে বলেছিলাম,
আমি কোরআন পড়তে পারি না
আমার স্বামী মুচকি হেসে আমার হাতটা ধরে বলেছিলেন
সমস্যা নেই আমি শিখিয়ে দিবো 
এখন তুই বল ঝুমু  আমার স্বামী কি অশিক্ষিত?
ঝুমু স্বামী আমার কথা শুনে চুপ করে আছেন।  আমি তখন ঝুমুকে বললাম,
তোকে কে বলেছে আমার স্বামী আনস্মার্ট,আমিও উনার কথায় নিজেকে ঢেকে রাখি,তোকে কে বললো আজ আমার রূপ নেই? 
হ্যা তা ঠিক আজ আমার রূপ শুধু আমার স্বামীর জন্য, আমার স্বামী দেখবেন আমার রূপ, বাইরের পুরুষ নয়।আর বাইরের পুরুষ দেখতে পারেনা বলেই আজ আমার রূপ নেই।
 তুই তো আমার চোখ দিয়ে কখনোই দেখিস নি। আমার স্বামী হলেন দুনিয়ার সবচেয়ে স্মার্ট পুরুষ। আর উনার স্মার্টনেস শুধু আমিই দেখি অন্য কোন নারী নয়। 
স্বামীদের স্মার্টনেস মানে এই না যে স্ত্রীকে হাইহিল জুতা, পাতলা শাড়ি মুখে রংচং মাখিয়ে কামিনীরূপে  হাজার পুরুষের সামনে জাহির করা। বরং নিজের স্ত্রী বোনকে মাকে পর্দার ভেতরে রাখা, পর পুরুষের কামনার চোখ থেকে নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করা আমার চোখে স্বামীদের স্মার্টনেস।
মুন ঝুমুকে বললো তুই ভেবেছিলি আমি আনস্মার্ট দাড়িওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করে আনস্মার্ট হয়ে গেছি,হই চই আড্ডা বন্ধ করে নিরব হয়ে গেছি, তোর ধারণা আমার স্বামীর ভয়ে আমি নিজেকে পর্দার ঢেকে রাখি । কিন্তু তা তোর ভুল ধারনা। 
আজ আমি আমার অতীত জীবনের জন্য অনুতপ্ত,চলতি পথে অনেক ভুল করেছি, আজ ভয় হচ্ছে মহান আল্লাহ কি আমাকে মাপ করবেন।
তবে এতো গুনাহের ভেতরেও আল্লাহ আমাকে সৎ দ্বীনদার ধার্মিক একজন স্বামী আমার জন্য পাঠিয়েছেন এই পৃথিবীতে।
হয়তো নিজের অজান্তে কখনো কোন ভালো কাজ করেছিলাম যা আল্লাহর পছন্দ হয়েছে আর তার উপহার হিসেবে এই ইহকাল ও পরকালের নাযাতের উছিলা পাঠিয়েছেন।
তোরা ভালো থাকিস পারলে নিজেকেও পর পুরুষের কামনার চোখ থেকে বাঁচিয়ে রাখিস,, 
ঝুমুর স্বামীকে বললো ভালো থাকবেন,নিজের স্ত্রীদের পরপুরুষের কামিনীরূপে জাহির করবেন না,নিজ নিজ স্ত্রীদের হেফাজতে রাখার দায়িত্ব স্বামীদের, নাহলে পরকালে দায়ুছ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন মহান আল্লাহর দরবারে।আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দ্বীনের পথে চলার তওফিক দান করুন।
শিরিন শীলা 
গ্রামঃধলাইপার,
উপজেলাঃকমলগঞ্জ 
জেলাঃমৌলভীবাজার