চোর- পুলিশ

চোর- পুলিশ

রাসেল আহমেদ সাগর 

চোর গভীর রাতে সবার অগোচরে চুরি করে কিন্তু তার মনে সারাক্ষণ একটা ভয় থাকে, তা কুকর্ম কেউ দেখে ফেললো নাকি সে যে চোর সেটা কেউ জেনে ফেলে নাকি এরকম আরো অনেক ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খায়। সবার অগোচরে সে তার কাজ ঠিকই চালিয়ে যায়। গোপনে চুরি করে আর প্রকাশ্য ভালো মানুষ বুঝার কোন উপায় নেই সে চোর। কিন্তু বিধিবাম আর কেউ তাকে চিনতে না পারলেও পুলিশ তাকে ঠিকই ধরে ফেলে সে যে চোর। বাস্তব একটা ঘটনা প্রায় পনের বছর আগের আমার বাসায় দুই ভদ্র মহিলা আসলেন এসে আমার মা কে পানি খাওয়ার জন্য এসেছে বললেন, আমার মা সহজ সরল মানুষ তিনি পানি এনে দিলেন, পানি খাবার পর আমার মা র সাথে শুরু হলো কথোপকোথন। এক পর্যায় বিদায় নিলেন সেই দুই ভদ্র মহিলা। উনারা যাবার পর আমার মা র চোখ পড়লো ওয়ারড্রবের উপরে সেখানে থাকা আমার বাবার চার্জ লাইট এবং ঘরে জ্বালানোর জন্য বড় চার্জ লাইট দুঠিই নাই। মা র বুঝতে বাকী রইলো না তিনি আর কি কি গেছে খোঁজতে লাগলেন দেখেন বালিশের নিচে রাখা দুই হাজার টাকা সে গুলো ও নেই। এর মধ্যে আমি এসে হাজির সব কিছু শুনলাম কিন্তু চোর ধরবো কি ভাবে নাম ঠিকানা জানিনা। বাসা থেকে দোকানে চলে গেলাম সেখানে আমার এক বন্ধু আমাকে আমার মুখ থেকে সব শোনার পর একটা ঠিকানা দিলো ঠিকানা শুনেই আমি অবাক বললাম কি বলছিস এসব, একজন নামি-দামি বংশের লোক চুরি করতে আসবে কেন? সে বলল তুই যা দেখবি সব পাবি দেরি করিস না। আমি ওর কথায় অবাক হবার পর ও তাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলাম রাজনৈতিক সুবাদে আমার দুজনই একি দলের সিনিয়র জুনিয়র ভাই। উনি আমাকে উনার বাসায় দেখে খুশি হলেন ঠিক কিন্তু আমার মুখ থেকে কথা গুলো শুনে মুখ কালো করে বললেন ওদের সাথে আমাদের পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই ভাই ওরা আমাদের বংশের কলঙ্ক তাই ওদের আরেক গ্রামে তারিয়ে দিয়েছি আমি ও আর কোন কথা বললাম না বেচারা চেয়ারম্যান মানুষ লজ্জা পাচ্ছে আর লজ্জা পাক সেটা আমি চাইনা। সেখান থেকে থানায় এসে বসে আমার পরিচিত এসআই দের সাথে কথা বলে বাসায় আসলাম। রাত বারোটায় আমার বাসার টেলিফোনে কল আসলো সাগর ভাই আপনি একটু থানায় আসেন জরুরি ভাবে, আমি সাইকেল নিয়ে থানায় গেলাম গিয়ে দেখি দুজন সুন্দরী মহিলা দাড়িয়ে আছেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী উনাদের সালাম দিলাম ভদ্র মহিলারা আলেক দিলেন না। শুধু ফিসফিস করে দুজন কথা বলছেন আমি চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলাম জানতে পারি এতো জরুরি তলব কেন? এস আই সাহেব বললেন দেখেন তো উনাদের চিনেন না কি? আমি তাকিয়ে দেখলাম মহিলা দুজনের চেহারা টা খুব মিষ্টি হাসিটাও বেশ দারুণ কিন্তু আমি তো চিনি না আমি বললাম সরি আমি উনাদের চিনতে পারছি না। এস আই সাহেব বললেন ওরাই আপনার বাসায় চুরি করেছে, আমি পুরো অবাক এটা কি করে সম্ভব এতো স্মার্ট সুন্দরী মেয়ে সামান্য এসব চুরি করতে যাবে কেন? এস আই সাহেব বললেন অবাক হবার কিছু নেই ভদ্রলোক সাজা ওদের একটা ছদ্ম বেশ। আমি পুরো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমারা কি সত্যি আমার বাসায় চুরি করতে গিয়েছিলে ওরা মাতা নিচু করে বললো হ্যা। সব কিছু স্বীকার করলো। টাকা ছাড়া জিনিস গুলো বের করে দিলো। ওদের কে হাজতে ঢুকানো হলো। আমি অবাক হয়ে এস আই সাহেব কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি ওদের চিনলেন কি ভাবে? উওরে তিনি হেসে বললেন ভাই চোরের মনে সব সময় পুলিশ পুলিশ ভয় থাকে। আপনি আমাদের সাথে কথা বলে যাবার পর আমরা পয়েন্টে ডিউটি করছিলাম এই দুইজন আমাদের দেখে আতংকিত হয়ে যায়, আমাকে সামনে এসে সালাম দেয় একটু দূরে গিয়ে বারবার আমাদের দিকে তাকায় এবং বোরকার নিচে হাত দিয়ে কি যেনো ঠিক করে তখন আমার সন্দেহ হয় এবং তাদের তল্লাশি করে আপনার মালামাল পাই। এবং আপনাকে আসতে বলি। আপনি যাদের ভদ্রমহিলা মনে করেছেন তাদের পোশাক ব্যাবহার ও রুপ দেখে এটা হচ্ছে ওদের ছদ্মবেশ আর এই বেশ ধরেই ওরা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা তাদের অপকর্ম চালায়, কথায় আছে না অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ ।